রাস্তার মাঝখানে রাখা গার্ড রেলের কারণে বিপজ্জনক ভাবে চলছে যানবাহন। মঙ্গলবার, এ জে সি বসু রোডে। নিজস্ব চিত্র
এমনিতেই গতি কমতে থাকা শহর কি আরও গতিহারা হয়ে পড়ছে ইতিউতি, মাঝরাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা গার্ড রেলের জেরে? অনায়াস যাতায়াতের পরিসর না পেয়েই কি একের পর এক দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন গাড়ি বা মোটরবাইকের চালকেরা? গত কয়েক দিনে ব্যস্ত সময়ের বেশ কয়েকটি পথ দুর্ঘটনায় গার্ড রেলের ‘ভূমিকা’ সামনে আসার পরে আরও জোরালো হয়েছে এই প্রশ্ন।
দিন কয়েক আগেই প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং ই এম বাইপাসের মোড়ের কাছে একটি মোটরবাইক সরাসরি ধাক্কা মারে গার্ড রেলে। রাস্তার প্রায় মাঝামাঝি ওই গার্ড রেলটি দাঁড় করানো ছিল বলে অভিযোগ। গার্ড রেলের দু’পাশে দাঁড়িয়ে ছিল বাস। তারই মাঝের ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বাইকটি। কিন্তু তখনই একটি বাস ডান দিকে সামান্য সরে আসতেই বাইকটি গার্ড রেলে ধাক্কা মারে। গত সোমবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে প্রায় একই অবস্থা হয় একটি গাড়ির। সিগন্যালে একটি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল ডান দিকে ‘ইউ টার্ন’ নেবে বলে। তাকে পাশ কাটিয়ে অন্য গাড়ির যাওয়ার পরিসর ছিল না, কারণ পাশেই দাঁড় করানো ছিল গার্ড রেল। একটি গাড়ি কোনও রকমে বেরোতে গিয়ে ধাক্কা মারে গার্ড রেলে। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রবল যানজট হয় ব্যস্ত সময়ে। পরে পুলিশ গিয়ে চালক-সহ ওই গাড়িটি আটক করে। এ জে সি বসু রোডে আবার রাস্তার মধ্যে বসানো গার্ড রেল এবং গাড়ির মাঝখান দিয়ে বেরোতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রামলাইনে পড়ে যান এক স্কুটারচালক। একটি বাস পিছন থেকে ধাক্কা মারে স্কুটারে। ১৫ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে সদ্য বাড়ি ফেরা, সীমান্ত ঘোষ নামে ওই স্কুটারচালক বলেন, “আমার কোমর ভেঙে গিয়েছে। কেন যে মাঝ রাস্তায় ও ভাবে গার্ড রেল রাখা থাকে তা জানি না। ওটা না থাকলে এই অবস্থা হত না।”
মঙ্গলবার শহর ঘুরে যদিও দেখা গেল, এমন একাধিক ঘটনার পরেও হুঁশ নেই কারও। এ দিনও গার্ড রেল বসানো ছিল এ জে সি বসু রোড, এ পি সি রোড, সি আই টি রোড, ক্যামাক স্ট্রিট, হাজরা রোড, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং ই এম বাইপাসের বহু জায়গায়। তার জেরে কোথাও পাশাপাশি দু’টি গাড়ি যাওয়ার জায়গা হয়নি। কোথাও আবার এমন ভাবে পাশাপাশি গার্ড রেল রাখা হয়েছে যে কষ্ট করে গাড়ি বার করতে হচ্ছে। এক চালক বললেন, “মা-সহ বেশ কয়েকটি উড়ালপুলে ওঠার মুখেও একই অবস্থা। এমন ভাবে গার্ড রেল বসিয়ে দেওয়া হয় যে উড়ালপুলে উঠতেই কালঘাম ছুটে যায়। গার্ড রেলে লেগে বহু গাড়িরই ক্ষতি হয়।” কসবার বাসিন্দা, এক গাড়িচালক নিমাই সরকার বললেন, “রাতে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বসানো গার্ড রেল ভোরেই সরিয়ে ফেলার কথা। কিন্তু বহু জায়গায় সেগুলি দিনভর পড়ে থাকে!”
ট্র্যাফিক পুলিশের বড় কর্তারা এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁরা জানান, মূলত সঙ্কীর্ণ রাস্তায় বা যেখানে সরু রাস্তা এসে বড় রাস্তায় মেশে, সেখানে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে গার্ড রেল বসানো হয়। কোনও রাস্তা বন্ধ করে দিতে হলে তখনও গার্ড রেল বসানো হতে পারে। এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্তার মন্তব্য, “ধীরে যেতে হবে বা কোথায় থামতে হবে বোঝাতে কিছু সিগন্যালের আগে গার্ড রেল রেখে দেওয়া হয়।”
কিন্তু চালকদের দাবি, “সিগন্যাল দেখলেই তো বোঝা যায় কোথায় থামতে হবে আর কোথায় ধীরে চলতে হবে! তা হলে গার্ড রেল রাখার কী প্রয়োজন?” এ বার নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের উপরে দায় চাপিয়ে ওই কর্তার মন্তব্য, “ওগুলি বেশির ভাগই ভোরে তুলে নেওয়ার কথা। কিছু হোমগার্ড আর সিভিক পুলিশকর্মী ঠিক ভাবে কাজ করলে এ জিনিস হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy