—প্রতীকী চিত্র।
দেশে দায়ের হওয়া মাদক সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা গত দু’দশকে বেড়েছে ২৯৮ শতাংশ! অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে এর বৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি! এমনই তথ্য জানাচ্ছে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র (এনসিআরবি) রিপোর্ট। ২০২২ সালের সর্বশেষ প্রকাশিত এনসিআরবি রিপোর্ট চিন্তা বাড়িয়েছে আরও। দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে গোটা দেশেই ব্যবহারের জন্য মাদক রাখা বা পাচার— সব ক্ষেত্রেই মামলার সংখ্যা বেড়েছে। আতঙ্কিত করার মতো ব্যাপার, মাদক সেবনের জেরে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ! বর্ষবরণ উৎসবের সময়ে মাদকের কারবারে লাগাম টানতে তাই এই রিপোর্ট সামনে রেখেই এখন তৈরি হচ্ছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তার পরেও তদন্তকারীদের বড় অংশের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, ‘‘যেখানে রাখে প্রযুক্তি, সেখানে মারে কে?’’
পুলিশ সূত্রের খবর, নাইট্রোসাম, স্প্যাজ়মোপ্রক্সিভন, সেকোবারবিটাল, ফেনমেট্রাজ়িন, মিথাকুইনোন, অ্যালপ্রাজ়োলাম, অ্যাটিভান, ক্যাম্পোসের মতো বহু অপ্রচলিত বা স্বল্প প্রচলিত মাদক এই সময় শহরের বর্ষবরণের পার্টিগুলিতে হাতে হাতে ঘোরে। এর মধ্যে হেরোইন সাধারণত ঢোকে বাংলাদেশ থেকে বনগাঁ সীমান্ত হয়ে। অসম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড থেকে মূলত আসে গাঁজার জোগান। নেপাল থেকেও আসে হেরোইন। এ ছাড়াও রয়েছে গাঁজা এবং চরস। হিমাচলপ্রদেশ থেকে কিছু ক্ষেত্রে চরসের জোগান আসে। এ ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু সিরাপ। মুর্শিদাবাদের দিক থেকে সড়কপথে যেগুলি এ শহরে প্রবেশ করে। মূলত এই মাদক ধরতেই বড়দিনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই কড়া নজরদারি শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাতের শহরে নাকা তল্লাশি বাড়ানোর পাশাপাশি শুধুমাত্র ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট এবং মধ্য কলকাতার হোটেল ও পানশালাগুলির জন্যই সাদা পোশাকে প্রায় ৫৫০ জন পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে। পার্টি বেশি হয়, শহরের এমন এলাকায় আগামী কয়েক দিন থাকবে পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। যৌথ ভাবে কাজ করার কথা ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো’র (এনসিবি) অফিসারদেরও।’’ ইতিমধ্যেই নজরদারি চালিয়ে বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু চক্রের অন্যদের ধরার জন্য এখনই গ্রেফতারি বা মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত তথ্য পুলিশের তরফে প্রকাশ করা হয়নি। তবে তদন্তকারীদের চিন্তা, নজরদারি চালিয়ে গ্রেফতারি চললেও আসল প্রতিবন্ধকতা প্রযুক্তি।
কারণ, পুলিশ এবং সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে ‘কুরিয়র’ পরিষেবার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ওই পথেই বিদেশ থেকে মাদক আনানো বেড়েছে। তার পরে সেই মাদক পৌঁছে যাচ্ছে শীতের পার্টিতে। কুরিয়রে মাদক বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল হাতিয়ার ‘ডার্ক ওয়েব’। মাদক কারবারিদের বেশির ভাগই টর ব্রাউজ়ার দিয়ে ডার্ক ওয়েবে ঢুকছে। সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এটি এক ধরনের গোপন ইন্টারনেট ব্যবস্থা। টর ব্রাউজ়ারে ব্যবহারকারীর আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস গোপন থাকে। এই পদ্ধতিতে ডার্ক ওয়েবে ঢুকলেই হাতে চলে আসে মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফির মতো একাধিক জিনিস। আইপি অ্যাড্রেস গোপন থাকায় ডার্ক ওয়েব থেকে ব্যবহারকারীকে ধরা কঠিন। আইপি অ্যাড্রেস গোপন থাকায় তদন্তে নেমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধরার বদলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গোলকধাঁধায় ঘুরতে হয়। তেমনই কঠিন কুরিয়র ধরাও। কারণ, কোনও কুরিয়র সংস্থাই খামের ভিতরে কী রয়েছে, তা খুলে দেখে না। নিশ্চিত না হয়ে তদন্তকারীরাও খাম খুলে দেখার পথে হাঁটতে পারেন না। এই সুযোগেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাওয়া মাদক ধরার একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায় নজরদারি। কিন্তু সেখান থেকেও পুতুলের পেটে, গাড়ির সিট বেল্টের সঙ্গে মুড়িয়ে, জুতোর হিলের মধ্যে, কখনও বা মেক-আপের পাউডার ফেলে দিয়ে সেই বাক্সে প্রসাধনী সামগ্রীর মতো সাজিয়ে মাদক পাঠানো চলতে থাকে।
তা হলে উপায়? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘ডার্ক ওয়েবের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ ধরপাকড়ও চালাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে সচেতনতা না বাড়লে মাদক রোখা কঠিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy