Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘হুমকি’তে বন্ধ বিফ উৎসব, প্রশ্নে সহিষ্ণুতা

সার্বিক অসহিষ্ণুতা কি সত্যিই বাড়ছে এ শহরে? না কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বাড়াবাড়ি’টাই হল আসল কারণ? প্রশ্নগুলো দানা বাঁধতে শুরু করেছে। 

‘বিপ ফেস্টিভ্যাল’। ছবি সংগৃহীত।

‘বিপ ফেস্টিভ্যাল’। ছবি সংগৃহীত।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

কলকাতা কি তবে ‘সিটি অব ভয়’ হয়ে গেল?

সার্বিক অসহিষ্ণুতা কি সত্যিই বাড়ছে এ শহরে? না কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বাড়াবাড়ি’টাই হল আসল কারণ? প্রশ্নগুলো দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

ফেসবুকে ঘোষিত একটি বিফ উৎসবকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে নাগাড়ে নেট-তরজার শেষে উৎসবটাই বাতিল করে দিয়েছেন আয়োজকেরা। ‘উত্ত্যক্ত’ হয়ে একটা পর্যায়ে সেই ‘ক্যালকাটা বিফ ফেস্টিভ্যাল’-এর নাম পাল্টে ‘ক্যালকাটা বিপ ফেস্টিভ্যাল’ রাখেন তাঁরা। তাতে খানিকটা শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন উৎসবের আহ্বায়ক অর্জুন কর। শুক্রবার সকালে সেই অর্জুনই বলছেন, ‘‘রাতভর উল্টোপাল্টা হুমকি পেয়েছি ফোনে। যে হোটেলে এটা করার কথা ছিল তারাও ফোনে হুমকি পেয়ে তটস্থ। এই অবস্থায় উৎসব বাতিল করছি।’’

একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এই উৎসব আয়োজনের পিছনে রাজনীতি ছিল না। ছিল শুধু সুখাদ্য, বিশেষত বিফ-পর্কের মতো মাংসের প্রতি টান। অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে তাঁরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু কয়েক জনের হুমকির সামনে এই উৎসবের আয়োজন করা ঝুঁকির হত। এক জনও বিপদে পড়লে তা অনভিপ্রেত হত বলে এই অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে হুমকি ফোনের বিষয়ে উদ্যোক্তারা কেউই এখনও পর্যন্ত পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানাননি। অর্জুনবাবু বলেন, “লালবাজারের সাইবার ক্রাইম বিভাগে কথা বলেছি। ওঁরা আমায় ভয় না পেয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে বলেছেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার পরে এমন উৎসবের কথা ভাবব!’’

একটি উৎসব বাতিল হলেও কলকাতার বিফপ্রেমী ভোজনরসিকেরা অনেকেই মনে করেন, এ শহরকে এখনও পছন্দের মাংস খাওয়ার অধিকারের নিরিখে অন্তত বিপজ্জনক বলা যায় না। কলকাতাতেও বেশির ভাগ হিন্দু পরিবারে গোমাংস আস্বাদের তত চল নেই এখনও। আবার শহরের হিন্দু বাঙালির কারও কারও মধ্যে সেই ইয়ং বেঙ্গলের যুগ থেকেই গোমাংসপ্রীতিও বিলক্ষণ রয়েছে।

হিন্দুদের একাংশের মধ্যে গোমাংস অনুরাগের একটি ধারা যে অতি প্রাচীনকাল থেকে বহমান, সেটাও ঐতিহাসিক সত্য। বেদ-পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর কথায়, “এ দেশে গরু খাওয়ায় নিষেধ এক ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক নির্মাণ। যিশুর জন্মের কয়েকশো বছর আগে থেকে কৃষিজীবী সমাজে দুধেল গরুর উপযোগিতার জন্যই গোমাংস খাওয়ার প্রবণতা কমে আসে।”

তিনি মনে করাচ্ছেন, ঋগ্বেদ থেকে অথর্ব বেদ সাক্ষী, ইন্দ্র, অগ্নির মতো দেবতারা ষাঁড়ের মাংস খেতে ভালবাসতেন। বাড়িতে ভিআইপি অতিথি এলে গরু কাটা দস্তুর ছিল বলে তাঁদের নামই হয়ে যায় গোঘ্ন। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ বছরটাক আগের ব্রাহ্মণ গ্রন্থে নানা উপযোগিতার জন্য গরু খেতে বারণ করা হচ্ছে। তবে তখনও যাজ্ঞবল্ক্যের মতো নামী ঋষিরা তুলতুলে গোমাংসের প্রতি পক্ষপাত ব্যক্ত করছেন। নৃসিংহবাবুর মতে, বৈদিক যুগে গরু খাওয়ার রীতি ছিল। তবে ক্রমশ যজ্ঞে ষাঁড় ও বন্ধ্যা গরু উৎসর্গের ঝোঁকটাই দেখা যায়।

তবে কেউ গরু খেলে তাঁর জীবন দুর্বিষহ বা বিপন্ন করাটা যে কখনওই ধর্মসম্মত নয়, এ বিষয়ে দ্বিমত নেই কোনও শাস্ত্রবিশারদেরই। কে কী খেল, তাতে মাথা ঘামান না বেশির ভাগ কলকাতাবাসীও। শহরের বহু এলাকায় রেস্তরাঁর মেনুতে বিফের নানা ধরনের পদ এখনও সুলভ। নেটপাড়ায় খাদ্যরসিকদের বিভিন্ন কলকাতাকেন্দ্রিক গ্রুপে বিফের নানা পদ নিয়েও নিয়মিত আলোচনা হয়। এখনও কলকাতায় বিফ-পর্কের নানা উৎসবের পরিকল্পনা চলছে। তবে গোমাংস নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেকের স্পর্শকাতরতার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আলোচনা সাবধানে করাই কাম্য বলে মনে করেন নেটিজেনদের একাংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy