ফাইল চিত্র।
করোনার আবহে এত দিন শীতের মরসুমে ততটা অসুবিধা হয়নি। কিন্তু মার্চের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় গরমের আঁচ প্রায় ৩৬ ডিগ্রির আশপাশে পৌঁছতেই অ্যাপ-ক্যাবে এসি চালানোর চাহিদা বাড়ছে। অথচ, চালকদের বড় অংশ করোনা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে সরাসরি এসি চালাতে অস্বীকার করছেন বলে অভিযোগ। যাত্রীদের দাবি, প্রবল গরমে বয়স্ক, শিশু বা মহিলারা এসি চালানোর কথা বললেও অ্যাপ-ক্যাবের চালকেরা অনড়। এমনকি এসি নিয়ে জোরাজুরি করলেও চালকেরা সরাসরি যাত্রীদের ট্রিপ বাতিল করে নেমে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রশ্ন করলে চালকেরা হয় জানাচ্ছেন সংগঠনের বারণের কথা, নয়তো সংক্রমণের অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ, অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির দাবি, যাত্রার সময়ে কোভিড-বিধি পালনের বিষয়টি চালু থাকলেও এসি পুরো বন্ধ রাখার নির্দেশ কোথাও দেওয়া হয়নি। যাত্রী প্রয়োজন মনে করলে চালককে সে কথা জানাতেই পারেন। বাস্তবে ওই সব বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাভের হার বাড়াতে এসি বন্ধ রেখে পেট্রল বা ডিজেলের খরচ বাঁচাচ্ছেন অ্যাপ-ক্যাবের চালকেরা, অভিযোগ উঠেছে এমনই।
এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে গোলমাল বাড়লেও বেশির ভাগ চালকই নির্বিকার। যাত্রীদের অভিযোগ, ক্যাব সংস্থাগুলি সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেহালার ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে হাওড়া স্টেশন যেতে ক্যাব ভাড়া করেছিলেন কুশল চট্টোপাধ্যায় নামে এক বৃদ্ধ। হাওড়া থেকে শান্তিনিকেতনের ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন তিনি। যাওয়ার সময়ে তাঁকে ভাড়া দিতে হয় ২০০ টাকার কিছু বেশি। বয়স্ক যাত্রী দেখে ক্যাবের এসি চালিয়ে দেন চালক। অথচ দিন কয়েক পরে দুপুরের দিকে শান্তিনিকেতন থেকে হাওড়ায় ফেরার পরে সম্পূর্ণ বিপরীত অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। কড়া রোদের মধ্যে বাড়তি ভাড়া (সার্জ) দিয়ে ক্যাব বুক করেও চালকের চরম দুর্ব্যবহার আর ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। প্রবল গরম আর যানজটের মধ্যে অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন কুশলবাবু। অভিযোগ, চালককে বার বার এসি চালাতে বললেও তিনি সে কথা কানে তোলেননি। উল্টে এ নিয়ে অভিযোগ করায় কুশলবাবুকে শুনতে হয়, ‘‘না পোষালে ট্রিপ বাতিল করুন। এসি চলবে না। উপর মহল থেকে বারণ আছে।’’
প্রায় একই অভিজ্ঞতা কসবার বাসিন্দা মেঘনা দত্তগুপ্তের। দুপুরে অ্যাপ-ক্যাবে টালিগঞ্জ যাওয়ার সময়ে এসি চালানোর কথা বলতেই ওই চালক বলেন, ‘‘ডিজেলের যা দাম বেড়েছে এসি চালাতে পারছি না।’’
শুধু কুশলবাবু কিংবা মেঘনা নন, এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। অভিযোগ, এসি বন্ধ রেখে ক্যাবচালকদের একাংশ বাড়তি মুনাফা করার চেষ্টা করছেন।
করোনা যখন তীব্র ছিল, তখনও এসি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলেই দাবি শহরের দু`টি প্রধান ক্যাব সংস্থার। বরং, যাত্রী এবং চালক উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মাঝের অংশে প্লাস্টিক লাগানোর চল শুরু হয়। এসি চালানোর বিষয়টি যাত্রীর সম্মতির উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, শীতের মরসুমে সে ভাবে প্রয়োজন না পড়ায় চালকেরা প্রায় এসি বন্ধই রাখতেন বলে অভিযোগ। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতেই বেশির ভাগ অ্যাপ-ক্যাব থেকে উধাও হয়েছে মাঝের পলিথিনের বিভাজন। কিন্তু এসি চালানোর কথা বললেই তা নানা ছুতোয় এড়িয়ে যাচ্ছেন চালকেরা। এমনকি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলিও এ বিষয়ে চুপ করে থাকায় চালকদের সঙ্গে বিরোধ বাড়ছে যাত্রীদের।
এক চালক বলেন, ‘‘কী করব বলুন, ডিজেলের যে হারে দাম বেড়েছে, তাতে এসি বন্ধ রাখলে দু’টো পয়সা বাঁচে। সব দিন সমান যাত্রী জোটে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy