Advertisement
E-Paper

খিঁচুনি থেকে হিংস্রতা, শব্দ-তাণ্ডবে সমস্যা বাড়ছে পোষ্যকুলে

পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কুকুর, বেড়াল-সহ পোষ্যদের শ্রবণশক্তি বেশি হওয়ায় বাজির শব্দের প্রভাব তাদের উপরে অনেক বেশি পড়ে। টানা কয়েক দিন ধরে বাজির উপদ্রব চললে শ্রবণশক্তি হারাতেও পারে তারা।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৬
Share
Save

কয়েক দিন ধরে বাড়ির পোষ্যের আচরণে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখে ঘাবড়েই গিয়েছিলেন তার অভিভাবক। চনমনে থাকার বদলে হঠাৎ করেই যেন ঝিমিয়ে পড়েছিল বছর তিনেকের জেরি! দিন দুয়েক এ ভাবে চলার পরে খাওয়াদাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয় সে। সেই সঙ্গে শুরু হয় খিঁচুনি, দেখা দেয় জ্বরও। আদর করা তো দূর, চেনা কাউকেও কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছিল না।

আদরের জেরির আচরণে এমন পরিবর্তন দেখে নাওয়াখাওয়া ভুলেছিলেন চিংড়িঘাটার বাসিন্দা ওই দম্পতি। প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে তাঁরা ছোটেন সল্টলেকের এক পশু চিকিৎসকের কাছে। তাঁর চিকিৎসায় জেরি আপাতত আগের মতো হাসিখুশি আচরণ করলেও সে পুরোপুরি বিপন্মুক্ত নয় বলে জানিয়ে রেখেছেন ওই চিকিৎসক।

শুধু ওই দম্পতিই নন। কালীপুজো, দীপাবলি থেকে শুরু করে ছটপুজো— উৎসবের নামে শহর জুড়ে শব্দবাজির তাণ্ডবে এমনই অবস্থা হয়েছিল অধিকাংশ পোষ্যের অভিভাবকের। হঠাৎ হঠাৎ কান ফাটানো বাজির শব্দ থেকে পোষ্যকে রক্ষা করতে কেউ বন্ধ ঘরে জোরে গান চালিয়ে রেখেছিলেন, কেউ বা সারা রাত জড়িয়ে ধরে বসেছিলেন পোষ্যকে। ফুলবাগানের বাসিন্দা দেবলীনা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বাজির আওয়াজ হলেই কেঁপে কেঁপে উঠছিল ওরা। সেই সঙ্গে কান্না। কিন্তু ওদের কষ্ট বুঝবে কে?’’

পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কুকুর, বেড়াল-সহ পোষ্যদের শ্রবণশক্তি বেশি হওয়ায় বাজির শব্দের প্রভাব তাদের উপরে অনেক বেশি পড়ে। টানা কয়েক দিন ধরে বাজির উপদ্রব চললে শ্রবণশক্তি হারাতেও পারে তারা। সেই সঙ্গে দেখা দেয় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। এ বছরেও কালীপুজো, দীপাবলি এবং ছটে শব্দবাজির অবাধ তাণ্ডব চলায় পোষ্যদের মধ্যে দেখা গিয়েছে নানা উপসর্গ। অনেক চিকিৎসক এ-ও বলছেন, এ বছর বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল থেকে বেড়ে ১২৫ ডেসিবেল হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেশি ছড়িয়েছে পোষ্যদের মধ্যে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ বছর দেখা গিয়েছে, পোষ্যদের মধ্যে খিঁচুনির প্রবণতা সব চেয়ে
বেশি। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, আগে হয়তো সেই পোষ্যটির মধ্যে এমন কোনও প্রবণতা ছিলই না। এ ছাড়া জ্বর আসা, আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ার মতো ঘটনা তো আছেই। হিংস্র হয়ে কোনও পোষ্য কামড়ে দিয়েছে তার অভিভাবককে, এমন উদাহরণও লক্ষ করেছেন চিকিৎসকেরা।

পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রতিদিনই অনেকে আসছেন তাঁদের
পোষ্যের খিঁচুনির উপসর্গ নিয়ে। এ বছরে এই সমস্যা মারাত্মক আকার নিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে আমাদের ধারণা, শব্দের দাপটে ভয় বা আতঙ্ক থেকে এমনটা হয়েছে।’’ আর এক পশু চিকিৎসক দীপককুমার দে-র কথায়, ‘‘বাজির আওয়াজে সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে পোষ্যদের স্নায়ুর উপরে। যে পোষ্যের ভয় পাওয়ার প্রবণতা বেশি, তাদের উপরে এর প্রভাব হয় আরও মারাত্মক। এই আতঙ্ক থেকেই অনেক সময়ে খিঁচুনি, জ্বর-সহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে স্নায়ুর কয়েকটি ওষুধ দেওয়া ছাড়া আমাদের বিশেষ কিছু করার থাকে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

noise pollution Firecrackers Animal Cruelty Pet Love Dogs cats

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}