ফাইল চিত্র।
শহরের পথে চলা হলুদ ট্যাক্সির ভাড়া শেষ বেড়েছিল বছর চারেক আগে, ২০১৮ সালে। সেই সময়ে গাড়ির মিটারে প্রয়োজনীয় রদবদল করতে এসেছিলেন প্রায় ১৭ হাজার ট্যাক্সিচালক। অথচ, কয়েক মাস আগে এককালীন দেড় হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র (সিএফ) নিতে আসতে দেখা গিয়েছে ১০ হাজারেরও কম হলুদ ট্যাক্সিকে। অতিমারি-পর্বের মন্দা কাটিয়ে ওঠার পরেও এত গাড়ি শংসাপত্র নিতে না আসায় প্রমাদ গুনছে ট্যাক্সি সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, এক দিকে ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গে জরিমানার অঙ্ক বহু গুণ বাড়ায় সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই চালকদের একটা বড় অংশের। অন্য দিকে, ১৫ বছরের পুরনো ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক সব গাড়ি ধাপে ধাপে বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। সংগঠনগুলির আশঙ্কা, এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে অচিরেই কলকাতা থেকে হারিয়ে যেতে পারে হলুদ ট্যাক্সি।
এমনিতেই ২০১৪ সাল থেকে অ্যাম্বাসাডর গাড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন বন্ধ। প্রয়োজনীয় মেরামতি করতে গিয়ে গাড়ির আসল যন্ত্রাংশ প্রায় মেলেই না। তার মধ্যে ২০০৮-’০৯ সালে যে সব গাড়ি পথে নেমেছিল, তাদের মেয়াদও ফুরনোর মুখে। মাঝে অতিমারি-পর্বে দু’বছরেরও বেশি সময় হলুদ ট্যাক্সি কার্যত বসে ছিল। চালকেরা বলছেন, সেই সময়ে গাড়ির ইঞ্জিনের সে ভাবে ক্ষয় হয়নি ঠিকই। কিন্তু, গাড়ি না নামায় ঘরে টাকাও আসেনি। যদিও ব্যাঙ্ককে ঋণের কিস্তি মেটাতে হয়েছে। অতিমারি কেটে যাওয়ার পরে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও ডিজ়েলের দাম বেড়েছে আগুনের গতিতে। ট্র্যাফিক-বিধি ভঙ্গে জরিমানা বেড়েছে বহু গুণ। পাশাপাশি কমেছে যাত্রী। সব মিলিয়ে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে একের পর এক ট্যাক্সি বসে যাচ্ছে।
চার বছরে এক পয়সাও ভাড়া না বাড়ায় কলকাতা বিমানবন্দর ছাড়াও হাওড়া, শিয়ালদহ এবং কলকাতা স্টেশনের প্রি-পেড বুথে ট্যাক্সির সংখ্যা কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। শহরে যে ক’টি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড ছিল, সেগুলির বেশির ভাগই উঠে গিয়েছে। চালকদের বক্তব্য, বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে অ্যাপ-ক্যাবের তুলনায় অনেক কম টাকায় তাঁরা পরিষেবা দেন। এর পরেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সরকারের তরফে কোনও সহায়তা না মেলায় তাঁরা হতাশ। চালকদের আক্ষেপ, সরকারি বা বেসরকারি বাসকে সিএনজি-তে পরিবর্তন করার তৎপরতা দেখা গেলেও হলুদ ট্যাক্সি কার্যত যাবতীয় আলোচনার বাইরে থেকে গিয়েছে। কয়েক হাজার চালক ও তাঁদের পরিবারের কথা ভেবে সরকারের মধ্যস্থতায় গাড়ি নির্মাণ সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলতে চান ট্যাক্সি সংগঠনের নেতৃত্ব। অন্য গাড়িকে হলুদ ট্যাক্সি হিসেবে চালানোর কথাও ভাবতে চান তাঁরা। ওয়াকিবহাল মহল মানছে, ট্রামের মতোই এখন বিপন্নের তালিকায় চলে গিয়েছে এই যান। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরাও স্বীকার করছেন হলুদ ট্যাক্সির এই দুর্দশার কথা।
শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি মেন্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক শম্ভুনাথ দে বলেন, ‘‘সরকারি ‘গতিধারা’র মতো প্রকল্পের আওতায় ট্যাক্সিকে আনা জরুরি। ডিজ়েল থেকে সিএনজি-তে ইঞ্জিন বদলের ক্ষেত্রে সরকারি অনুদান ছাড়াও গাড়ির আয়ুসীমায় ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। সরকার চালকদের পাশে না দাঁড়ালে ট্যাক্সি শহর থেকে মুছে যাবে।’’ বাম অনুমোদিত এআইটিইউসি-র ট্যাক্সিচালক সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব অন্য গাড়িকে ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে পরিবহণ ক্ষেত্র এবং বিশেষ ভাবে ট্যাক্সির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার আবেদন জানিয়ে নতুন পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। সরকার সদর্থক পদক্ষেপ না করলে ট্যাক্সির বিলুপ্তি কার্যত সময়ের অপেক্ষা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy