একটি অনুষ্ঠানে ক্যানসার বিজয়ী দেবরাজ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্যানসার চিকিৎসক রবি কান্নান। শুক্রবার, রবীন্দ্র সদনে। ছবি: সুমন বল্লভ।
লড়াইটা যেন মাঝপথে থেমে না যায়। তবে, সেই লড়াই চালিয়ে যেতে ক্যানসার আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারের পাশে থাকতে হবে সমাজকেও। তবেই একশো শতাংশ শিশু ক্যানসার মুক্ত হয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারবে। শুক্রবার শহরে এক অনুষ্ঠানে এসে এমনই বার্তা দিলেন বরাক উপত্যকার ক্যানসার চিকিৎসক, রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত রবি কান্নান। তাঁর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করলেন উপস্থিত অন্যান্য চিকিৎসক এবং অতিথিরাও।
পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশে যত ক্যানসার রোগী আছেন, তাঁদের দুই থেকে তিন শতাংশ শিশু। তার মধ্যে ৩৮ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয় মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ায়। যদিও শিশুদের ক্যানসারের ঠিক মতো চিকিৎসা হলে, আগামীর স্বপ্ন দেখতে পারে দেবরাজ চট্টোপাধ্যায়ের মতো আরও অনেকে। ওই যুবকের যখন ১৪-১৫ বছর বয়স, তখন ক্যানসার ধরা পড়ে। যার কারণে ওই কিশোরের বাঁ হাত বাদ যায়। কিন্তু নিয়ম মেনে চিকিৎসার পরে আজ পুরোপুরি সুস্থ দেবরাজ।
তাঁর আঁকা নিজেদের ছবি হাতে নিয়ে অবাক হয়ে গেলেন ক্যানসার শল্য চিকিৎসক রবি থেকে শুরু করে মঞ্চে দাঁড়ানো অতিথিরা। দেবরাজের মতো আরও অসংখ্য শিশুকে রোগ মুক্তির পরে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব এই সমাজের, সেই কথাই এ দিন বার বার মনে করিয়ে দিলেন হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তীও। বললেন, ‘‘একটা শিশুর গোটা পরিবারকেই ক্যানসার অন্য পথে চালিত করে। অনেক
ক্ষেত্রে পরিজনেরাও পাশ থেকে সরে যান। সবই সচেতনতার অভাব। সরে না গিয়ে ওই পরিবারের পাশে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে থাকতে হবে।’’
একই সুর শোনা গেল শিলচরের ‘কাছাড় ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর অধিকর্তা রবি কান্নানের গলায়। তিনি মনে করেন, ক্যানসার আক্রান্ত একটি শিশুকে সারিয়ে তুলতে পুরো এলাকার বা গ্রামের প্রয়োজন হয়। কারণ, ওষুধ, উন্নত চিকিৎসার মতো বিষয়ের পাশাপাশি বড় প্রয়োজন হয় সহমর্মিতার। এ দিন নিজের বক্তব্যে রবি জানান, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে চিকিৎসা করাতে আসা পরিবারগুলি কিছু দিন পরে উধাও হয়ে যাচ্ছে। যার ফল খারাপ হচ্ছে। যদি ঠিক মতো চিকিৎসা করা হত, তা হলে ওই শিশু আর পাঁচ জনের মতোই স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারত। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘‘ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর পুষ্টি থেকে শুরু করে হাসপাতালে যাতায়াতের খরচ জোগাড়, পরিবারকে মানসিক সাহস জোগানোর মতো অনেক কাজ রয়েছে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় যাতে রোগীর হাসপাতালে ফলো-আপে আসা বন্ধ না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। এই সব কাজ করতে দরকার সমাজের।’’
রবির হাসপাতালের সঙ্গেও যৌথ ভাবে কাজ করে, এ দিন রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থাটি। এ দিন রবি বলেন, ‘‘কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা শিশুদের পরিবার যাতে থাকতে পারে, সে জন্য একটি জায়গার ব্যবস্থা আমরা করব। সেই জমি বা বাড়ি পেতেও প্রয়োজন সামাজিক সহমর্মিতার।’’
শিশুদের ক্যানসার নিয়ে কাজ করা ওই সংস্থার তরফে পার্থ সরকার বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, একটি শিশুকেও ক্যানসারে মারা যেতে না দেওয়া। এসএসকেএম ও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে একটা সময়ে ৫০ শতাংশ শিশু ক্যানসার রোগী চিকিৎসা ছুট হয়ে যেত। আমাদের ‘লাইফ বিয়ন্ড ক্যানসার’ সংস্থা সেখানে কাজ শুরু করার পরে সেই সংখ্যা অনেক কমেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy