Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College And Hospital Incident

ঢাক বাজিয়ে দ্বিতীয় রাতেও পথেই ডাক্তারেরা

এ দিকে, রাত যত বাড়ছে, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাধারণ মানুষের ভিড়। ফাঁকা জলের বোতল বাজিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে এলাকা।

বিনিদ্র: স্বাস্থ্য ভবনের সামনে দ্বিতীয় রাতেও চলছে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান। বুধবার।

বিনিদ্র: স্বাস্থ্য ভবনের সামনে দ্বিতীয় রাতেও চলছে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

শান্তনু ঘোষ ও মিলন হালদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২২
Share: Save:

বুধবার সন্ধ্যা তখন প্রায় সাড়ে সাতটা। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে ভিড় জমিয়েছেন সাধারণ মানুষ। সেই সময়ে হঠাৎই বেজে উঠল দু’টি ঢাক! ঢাকিদের থেকে কাঠি নিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে সেগুলি বাজালেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরাই। মুখ্যমন্ত্রীর উৎসবে ফেরার ডাকে সাড়া না দিয়ে এ ভাবেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে প্রতিবাদ জানালেন আন্দোলনকারীরা। কৌশিক প্রতিহার নামে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তার-পড়ুয়া বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উৎসবে ফিরুন। তার প্রতিবাদেই ঢাক বাজালাম।’’

এ দিকে, রাত যত বাড়ছে, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাধারণ মানুষের ভিড়। কখনও ফাঁকা জলের বোতল বাজিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে এলাকা। কখনও সমস্বরে সকলে বলে উঠছেন, ‘‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’’ কখনও স্লোগান উঠছে স্বাস্থ্য ভবনের ‘ঘুঘুর বাসা’র বিরুদ্ধে। পথে প্লাস্টিক পেতে, মাথার উপরে প্লাস্টিকের অস্থায়ী ছাউনি টাঙিয়ে, হাতপাখা হাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনের রাস্তায় এ ভাবেই দ্বিতীয় রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাতে ওই অবস্থানে আসেন কামদুনি আন্দোলনের প্রতিবাদী টুম্পা কয়াল।

আর জি কর-কাণ্ডের জেরে কয়েক দফা দাবিতে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’। সে দিন দুপুরে সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্য ভবনের মূল দরজার কয়েক মিটার আগে পৌঁছে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনেই রাস্তায় বসে পড়েন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। বুধবার বৈঠক নিয়ে চাপান-উতোরের পরে স্পষ্ট হয়ে যায়, আরও একটি রাত পথেই কাটাতে চলেছেন আন্দোলনকারী ডাক্তারেরা। কয়েক দিন আগের বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ছবিটাই এ দিন হুবহু দেখা গেল স্বাস্থ্য ভবনের সামনে। যেখানে আন্দোলনকারীদের হাতে প্রচুর শুকনো খাবার, পানীয় জল ও অন্যান্য আবশ্যক জিনিস তুলে দিতে এলেন অগুনতি সাধারণ মানুষ এবং স্থানীয়েরা। আন্দোলনকারীদের সকাল থেকে রাতের খাবারের দায়িত্বও নিয়ে নিলেন তাঁরা নিজেদের কাঁধেই।

গত মঙ্গলবার অবস্থানের প্রথম দিন মাঝরাতে আচমকা বৃষ্টি নেমেছিল সল্টলেকে। সে সময়ে কেউ ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে, কেউ বা হাতে হাতে প্লাস্টিক ধরে ছাউনি বানিয়ে মাথা বাঁচান। তবু নিজেদের অবস্থান ছেড়ে নড়েননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। বরং নগরপালের পদত্যাগ, সন্দীপ ঘোষ-অভীক দে-বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু উঠেছে স্লোগান। স্বাস্থ্য ভবনের সামনের রাস্তার দু’ধারের দেওয়ালও স্লোগান লিখে ভরিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেই রাতে অবস্থানে এসে নিহত তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার মা বলেন, ‘‘আজ আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন রাস্তায় নেমে এসেছে? দেখে খারাপ লাগছে, প্রশাসন তোমাদের কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের কথা বলেছেন। আর আমি তো সকলকে নিয়ে বিচারের উৎসবে আছি। এর থেকে বড় কী হতে পারে!’’ তরুণী চিকিৎসকের বাবা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি উৎসবে মানুষকে নামাতে পারেন, নামাবেন। আমাদের তাতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু উনি এটা পারবেন বলে আশা নেই। আমার মনে হয়, সকলে বিচার পাওয়ার উৎসবে রাস্তায় নেমেছেন ও পথ দখল করেছেন।’’

তবে এই অবস্থানের জেরে সেক্টর ফাইভ চত্বরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী সব গাড়ি অন্য রুটে ঘুরিয়ে দেওয়ায় টেকনো বিশ্ববিদ্যালয় মোড়, নিক্কো পার্ক মোড়ে বেড়েছে গাড়ির চাপ। ওই রাস্তার উপরে সরকারি, বেসরকারি দফতরের কর্মীরা গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পুলিশ জানাচ্ছে, সাধারণ নাগরিকেরা বিশাল প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময়ে সমস্যা আরও বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE