Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

গাড়িতেই প্রসব, এগিয়ে এলেন তরুণ ডাক্তারেরা

আটঘরার কাছে সোনির প্রসববেদনা তীব্র হয়। এর পরে গাড়িতেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। সোনির দিদি জানান, সিটে বসা অবস্থাতেই সোনির প্রসব হয়ে যায়। তার পরে সদ্যোজাতকে বার করার কাজ শবনমই করেন।

পাশে আছি: সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সেরা। নিজস্ব চিত্র

পাশে আছি: সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সেরা। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪৫
Share: Save:

মধ্যরাতে গাড়ি থেকে নেমে ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে ঢুকলেন মহম্মদ ইসরাইল। হতভম্ব অবস্থায় পৌঁছলেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের সামনে। তাঁকে ঘিরে তখন রক্ষী ও হাসপাতালের অন্য কর্মীদের জটলা। খানিকটা ধাতস্থ হয়ে ইসরাইল বললেন, ‘‘তাড়াতাড়ি চলুন। গাড়ির মধ্যে প্রসব হয়ে গিয়েছে!’’ ঠিক কী ঘটেছে, তা বুঝেই প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সেই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

রাজারহাটের রায়গাছির বাসিন্দা, সোনি বেগম নামে বছর বত্রিশের এক সন্তানসম্ভবা তরুণীর বুধবার রাত ১১টা নাগাদ প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয়। তাঁর স্বামী আখতার আলি বৃহস্পতিবার জানান, গাড়ি জোগাড় করতেই অনেকটা সময় চলে যায়। তাঁর দাদার ছেলে মহম্মদ ইব্রাহিম পেশায় অ্যাপ-ক্যাব চালক। তাঁর গাড়িতেই পৌনে একটা নাগাদ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। সঙ্গে সোনির দিদি শবনম বিবি ও তাঁর স্বামী মহম্মদ ইসরাইল। সোনির আরও তিন সন্তান রয়েছে। বয়সে খুব ছোট হওয়ায় তাদের নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন আখতার।

আটঘরার কাছে সোনির প্রসববেদনা তীব্র হয়। এর পরে গাড়িতেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। সোনির দিদি জানান, সিটে বসা অবস্থাতেই সোনির প্রসব হয়ে যায়। তার পরে সদ্যোজাতকে বার করার কাজ শবনমই করেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সন্তান প্রসব করানোর কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই ভয়ে তখন আমার দু’পা কাঁপছিল। তার মধ্যেই শক্ত করে বোনকে ধরে রেখেছিলাম। ওই সময়ে কারও মাথা কাজ করছিল না। শুধু নাড়ি না কাটলে বিপদ হবে বুঝে দ্রুত কোনও হাসপাতালে বোনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি।’’ অল্প দূরত্বেই রেকজোয়ানি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। কিন্তু ভরসা করতে পারেনি প্রসূতির পরিবার। শবনমের বক্তব্য, অত রাতে সেখানে নিয়ে গেলে নির্ঘাত ‘রেফার’ করে দিত। তাই সামর্থ্য নেই জেনেও বাধ্য হয়ে চিনার পার্কের চার্নক হাসপাতালে যান তাঁরা।

মায়ের কোলে সদ্যোজাত। বৃহস্পতিবার, রাজারহাটের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

আরও পডু়ন: দীর্ঘ ন’বছর পরে প্রেসিডেন্সি ফের এসএফআইয়ের

শবনমের স্বামীর কাছ থেকে ঘটনাটি শুনে জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক নিশান্ত আগরওয়ালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন চিকিৎসক পূজা অধিকারী। তাঁর পরামর্শ মেনে গাড়ির মধ্যেই নাড়ি কাটার তোড়জোড় শুরু করে দেন চিকিৎসক পূজা, মেডিক্যাল অফিসার অনির্বাণ কুণ্ডু এবং রাতের ডিউটিতে থাকা চার জন নার্স। দ্রুত যন্ত্রপাতি জোগাড় করে অ্যাপ-ক্যাবটিকেই কার্যত অপারেশন থিয়েটারের রূপ দেন তাঁরা। রাত তখন সওয়া দুটো। নাড়ি কাটা হয়ে গেলে সদ্যোজাতকে ট্রে-তে করে হাসপাতালে আনা হয়। এর পরে মাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে এসে শুরু হয় চিকিৎসা। নিশান্তের কথায়, ‘‘শিশুটির ওজন ৩ কেজি ৪০০ গ্রাম। ওকে পরিষ্কার করার পাশাপাশি মায়ের গর্ভস্থ ফুল (প্ল্যাসেন্টা) বার করে রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়। এক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে ওঁরা আর জি করে নিয়ে যেতে চাইলে আমরা ছেড়ে দিই।’’

রাত তিনটে নাগাদ বোনকে নিয়ে আর জি করে পৌঁছন শবনম। পথে প্রসবের কথা শুনে ঘরে তখন ছটফট করছেন স্বামী। সকালেই বাস ধরে আর জি করে পৌঁছে যান তিনি। দেখেন, গাড়ির মধ্যে সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন শবনম। সোনিকে স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল শিশুটিকে ভর্তি না নেওয়ায় সারা রাত তাকে নিয়ে ওই ভাবেই গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে হয় শবনমকে। যা নিয়ে কিঞ্চিৎ অসন্তোষও রয়েছে আখতারের। তবে আর জি কর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রসবের পরে যে হেতু সদ্যোজাতের নাড়িও কাটা হয়ে গিয়েছিল, তাই তাকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ সোনির ছুটি করিয়ে মা ও শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন আখতার।

আরও পডু়ন: সরকারি কর্মীদের কাজে মন নেই, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

তাঁর কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ব্যবহারে আমরা আপ্লুত। ওঁরা যা করেছেন, ভাবা যায় না। সামর্থ্য থাকলে ওখানেই স্ত্রী ও মেয়েকে রাখতাম। কিন্তু তা পারব না বলেই আর জি করে গিয়েছিলাম।’’

আর জি করের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অরূপকুমার মাজি বলেন, ‘‘প্রসবের সময়ে সদ্যোজাতের মাথায় যাতে আঘাত না লাগে, সেটা খেয়াল রাখতে হয়। গর্ভস্থ ফুল আলাদা না করলে মায়ের রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। ওই চিকিৎসকদের ভূমিকা প্রশংসনীয়।’’

বেসরকারি ওই হাসপাতালের কর্ণধার ঈপ্সিতা কুণ্ডুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রোগীর স্বার্থে আমাদের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা যে ভাবে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আমরা গর্বিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Health Charnock Hospital Baby girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy