প্রতীকী ছবি।
সচেতনতা বাড়াতে হাজার প্রচার সত্ত্বেও কালীপুজো এবং দীপাবলির রাতে দুর্ঘটনা যে অব্যাহত, তা মনে করিয়ে দেয় গত বছর কালীপুজোর রাতের একাধিক ছবি।
সে রাতে মানিকতলা এলাকার বাগমারি রোডের একটি আবাসনের দোতলার ফ্ল্যাটে এবং পাম অ্যাভিনিউয়ের একটি ফ্ল্যাটে প্রদীপের শিখা থেকে আগুন লাগে। দু’ক্ষেত্রেই খবর পেয়ে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। জোড়াবাগান থানা এলাকায় কালীকৃষ্ণ টেগোর স্ট্রিটের একটি বাড়ির তিনতলায় শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। এর পাশাপাশি বাজি বা আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী ছিল শহর। এ ছাড়াও বাজি পোড়াতে গিয়ে ফুলকি লেগে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে বেশ কয়েকটি। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এই জরুরি পরিস্থিতি সামলাতে শহরের স্বাস্থ্যক্ষেত্র কতটা তৈরি?
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এই শহরে বার্ন ইউনিট রয়েছে তিনটি সরকারি হাসপাতালে। তার মধ্যে এম আর বাঙুরের ৭০টি শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ইউনিটটি এই মুহূর্তে রাজ্যের সব থেকে বড় ভরসা। এর পরেই রয়েছে এসএসকেএম-এর ৩০ শয্যাবিশিষ্ট ইউনিট। এই ইউনিটের চারটি শয্যা শিশুদের জন্য, ১২টি পুরুষদের জন্য এবং মহিলাদের জন্য ১৪টি শয্যা নির্দিষ্ট করা রয়েছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রয়েছে ২০টি শয্যা। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য ১২টি। বাকি পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। এ ছাড়াও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পোড়া রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করতে হয় জেনারেল সার্জারি ওয়ার্ডে। এমনিতে সারা বছরই পোড়া রোগীদের ভিড় সামলাতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয় চারটি হাসপাতালের এই ১২০টি শয্যা নিয়ে। বিশেষ শয্যা খালি না থাকলে জেনারেল সার্জারিতে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হয়।
কালীপুজো এবং দীপাবলির রাতে এই ধরনের রোগীর ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলে মানছেন একাধিক চিকিৎসক। এই ভিড় মূলত হয় সরকারি হাসপাতালেই। বেসরকারি ক্ষেত্র যে এই চিকিৎসায় অনেকটাই পিছিয়ে, তা মানছেন মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জেন কুণাল সরকার। তিনি জানান, পোড়া রোগীর চিকিৎসা প্রায় ৯৫ ভাগ সরকারি ক্ষেত্রের উপরেই নির্ভরশীল। তবে সেই আপৎকালীন চাপ সামলানোর প্রস্তুতি থাকে বলেই জানাচ্ছেন আর জি করের বার্ন ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য এবং এসএসকেএম হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান গৌতম গুহ।
রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য জানান, বাজি নিয়ে গত কয়েক বছরে লাগাতার প্রচারে কাজ হয়েছে। আগের মতো বড় অগ্নিদগ্ধের ঘটনা খুব বেশি আসে না। বেশির ভাগই ৫-১০ শতাংশের মতো পুড়ে যাওয়ার ঘটনা। জরুরি পরিষেবায় সেই সব ক্ষেত্রে চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “এর থেকে বেশি দগ্ধ রোগীদের ভর্তি করা হয়। তবে শয্যা না থাকলে জেনারেল সার্জারি বিভাগেই নেওয়া হয়। তা-ও সম্ভব না হলে রেফার করা হয়।”
কালীপুজো বা দীপাবলিতে আগের মতো পুড়ে যাওয়ার ঘটনা যে সম্প্রতি গত কয়েক বছরে কমেছে তা মানছেন গৌতমবাবুও। তাঁর কথায়, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাজিতে হাত পুড়ে যাওয়া এবং মুখ ঝলসে যাওয়ার ঘটনায় মূলত জরুরি চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় রোগীকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাগুলি রাতের দিকে ঘটে। ফলে রাতভর সিনিয়র চিকিৎসকেরা ছাড়াও পিজিটি এবং আরএমও-সহ চিকিৎসকের দল সতর্ক থাকে এই সময়ে।’’
এসএসকেএম সূত্রের খবর, বাজি বা আগুনের ফুলকি চোখে পড়ে দৃষ্টি হারানোর ঘটনাও অনেক ঘটে। তাই বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয় ওই বিভাগকেও। একই কথা বলছেন, চক্ষু চিকিৎসক অভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, সব থেকে বেশি ভুক্তভোগী হয় বাচ্চারা। বাজি ফাটানোর সময়ে সামনে ঝুঁকে দেখতে গিয়েই মূলত বিপদ ঘটে। এর জেরে দৃষ্টি হারানোর মতো ঘটনার সাক্ষীও হতে হয়েছে চিকিৎসক হিসেবে।’’ অভিভাবকদের কাছে তাঁর অনুরোধ, বাজির সামনে ঝোঁকার প্রবণতা থেকে ছোটদের দূরে রাখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy