Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Covid

Booster Dose: সুরক্ষা-বর্ম বাড়াতে জোর বুস্টার ডোজ় নেওয়ায়

ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী জানাচ্ছেন, ভাইরাস প্রতিনিয়ত মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করছে।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২২ ০৬:৩৬
Share: Save:

বেশ কয়েক মাস নিম্নমুখী থাকার পরে ফের দেড় হাজারের ঘরে পৌঁছে গিয়েছে রাজ্যে করোনার সংক্রমণ। তবে এখনও পর্যন্ত সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘যে কোনও সময়ে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। যার একটা বড় কারণ এক শ্রেণির মানুষের উদাসীনতা।’’ শুধু বিধি উপেক্ষা করাই নয়, প্রতিষেধকের সতর্কতামূলক (বুস্টার) ডোজ় নিতেও তীব্র অনীহা দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে।

‘বুস্টার ডোজ় নেওয়া কি দরকার?’ পথেঘাটে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে এমন প্রশ্ন। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, করোনার প্রতিষেধক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করা এক সময়ে কার্যত রেওয়াজ হয়ে উঠেছিল। সেই মানুষগুলিরই অধিকাংশ বুস্টার ডোজ়ের ক্ষেত্রে চরম উদাসীন। যে কারণে রাজ্যে গ্রহীতার সংখ্যা অনেক কম। কো-উইন পোর্টাল অনুযায়ী, বুধবার রাত পর্যন্ত রাজ্যে বুস্টার ডোজ় গ্রহীতার সংখ্যা মাত্র ৩৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৯২৯। রাজ্যে প্রতিষেধক প্রদানের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম স্বাস্থ্য-অধিকর্তা (পরিবার কল্যাণ) অসীম দাস মালাকারের কথায়, ‘‘বেশির ভাগেরই ভয় কেটে গিয়েছে। তাঁরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভাবছেন, কিছু হবে না। কিন্তু এটা বুঝছেন না যে, বুস্টার ডোজ় নিলে সঙ্কটজনক হওয়া থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকা যাবে।’’

ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতে, বুস্টার ডোজ় নিলে ক্ষতি তো নেই-ই, বরং সুফল পাওয়া যাবে দু’ভাবে। প্রথমত, বুস্টার নেওয়ার ফলে শরীরে বি-মেমোরি লিম্ফোসাইট কোষ অধিক কার্যকরী হবে। তাতে রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, যা ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, বুস্টার ডোজ় নেওয়া ব্যক্তির শরীরে টি-লিম্ফোসাইট কোষও অধিক কার্যকরী হয়ে সাইটোটক্সিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ভাইরাস আক্রান্ত কোষকে নির্মূল করবে। ফলে, সুরক্ষা পাওয়া যাবে করোনার হাত থেকে। অসীমবাবু জানাচ্ছেন, রাজ্যে এখনও ৭-৮ শতাংশের মতো মানুষ প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেননি। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই সব মানুষ-সহ কাদের বুস্টার ডোজ় বাকি রয়েছে, তা খুঁজে বার করার কাজ শুরু হয়েছে।

ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী জানাচ্ছেন, ভাইরাস প্রতিনিয়ত মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করছে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বুস্টার ডোজ়ের উপরে জোর দেওয়া প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত যত ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, সেগুলির বিরুদ্ধে সব প্রতিষেধকই ভাল কাজ করেছে। কমেছে সংক্রমণের তীব্রতা, মৃত্যুহার। তবে ওমিক্রন ওই প্রতিষেধকগুলির ক্ষমতাকে কিছুটা এড়াতে পেরেছে। কারণ, তার বিরুদ্ধে কোনও প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। তবুও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বুস্টার নেওয়া জরুরি।’’ রাজ্যে প্রথম সারির করোনা-যোদ্ধা ও ষাটোর্ধ্বদের বিনামূল্যে বুস্টার ডোজ় দিচ্ছে সরকার। ৬০ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে টাকা দিয়ে বুস্টার ডোজ় নিতে হচ্ছে।

যদিও দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরে ন’মাস কেটে গেলেও অধিকাংশই ‘নিচ্ছি-নেব’ করে সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে ভাবছেন, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে বুস্টার ডোজ় নিলে সেটা কি কার্যকরী হবে? ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’র ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের পরেও বুস্টার ডোজ় নিলে ক্ষতি নেই। আগে প্রতিষেধক নেওয়ায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল। বুস্টার নেওয়ার পরে সেটি আরও জোরদার হবে। নতুন করে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। প্রতিষেধক নেওয়া হলে কেউ আর সংক্রমিত হবেন না, তেমন নয়। তবে সঙ্কটজনক হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম।’’

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে বা প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়ার পরে ৫ থেকে ৯ মাস কেটে গেলে দেখা যাচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করছে। এই কারণেই ন’মাস পরে কিংবা বছরে এক বার বুস্টার ডোজ় নেওয়া বিভিন্ন দেশে চালু হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু করোনা নয়, বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেই বুস্টার ডোজ় রয়েছে। একটা সময়ের পরে কমে যাওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বুস্টার ডোজ়ের মাধ্যমে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Booster Shot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy