দিনরাত এক করে কোভিড রোগীদের সেবা করছেন চিকিৎসকরা। প্রতীকী চিত্র।
কোভিড হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ইএসআই জোকার চিফ মেডিক্যাল অফিসার অমিত সাহার মুখে হাসি এনে দিয়েছিল আবাসনের সম্পাদকের একটি ফোন। তবুও বাড়ি ফেরার দিনে সংশয় থেকে পুরোপুরি মুক্ত হননি অমিত। কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসককে আবাসনের বাসিন্দারা কী ভাবে নেবেন, সেটাই ছিল সংশয়ের কারণ। কিন্তু চিকিৎসক দেখলেন, তিনি আবাসনে ঢোকা মাত্র ২০-২৫ জন বাসিন্দা তাঁকে বরণ করার অপেক্ষায় রয়েছেন! করতালির মধ্যে দিয়ে বাসিন্দারা তাঁদের ‘কোভিড হিরো’কে সম্মান জানালেন। সেই সঙ্গে করোনা-যোদ্ধাদের প্রতি সমাজের আচরণ কী হওয়া উচিত, তার দৃষ্টান্ত তৈরি করে দিলেন দমদমের ওই আবাসনের বাসিন্দারা।
এই ছবির উল্টো দিকে আবার রয়েছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ-চিকিৎসক পলাশ দাসের অভিজ্ঞতা। হাসপাতালের দু’জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁদের সংস্পর্শ যোগে উপাধ্যক্ষ আপাতত হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন। শুক্রবার তাঁর কোয়রান্টিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। উপাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, গৃহবন্দি পর্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ফোন করে তাঁকে বলেন, ‘‘আমার কাছে অভিযোগ আসছে, আপনি সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাড়িতে ক’টা দিন থাকুন এবং বিশ্রাম নিন।’’ ওই চিকিৎসক যেখান থেকে দুধ নিতেন সেখানেও সামাজিক বয়কটের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসক-চিকিৎসক শুধু নন, এ রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ার পর থেকে সামাজিক অস্পৃশ্যতার শিকার হয়েছেন একাধিক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী। এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় একাধিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সামাজিক অসহযোগিতার জন্য করোনা আক্রান্তেরা একা হয়ে পড়ছেন। করোনা আক্রান্ত এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমরা যেমন বিরূপ ব্যবহারের শিকার হচ্ছি, তেমন বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা যে ধরনের ব্যবহার করছেন, তা-ও ঠিক নয়।’’ করোনা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের একাংশ জানান, রোগী ও তাঁর পরিজনেরা হাসপাতালে প্রবেশ করা মাত্র ‘তফাত যাও’-এর বার্তা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন আচরণও কাম্য নয়।
আরও পড়ুন: ভাইরাস ভয় ভাঙতে ছোঁয়াচে হোক শিল্প
এই আবহে করোনা নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির কথা বলছেন দমদমের মল রোডের ওই আবাসনের বাসিন্দারা। সেখানে বেসরকারি ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্তা প্রিয়ঙ্ক সেনগুপ্ত বাজার করতে যাওয়ার আগে জেনে নেন, চিকিৎসক-প্রতিবেশীর বাড়ির জন্য কিছু আনতে হবে কি না। হাসপাতালে থাকাকালীন আবাসনের উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক সঞ্জীব শর্মা রোজ ফোন করে ওই চিকিৎসক কেমন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছেন, তা জেনে নিতেন।
গত ২৩ এপ্রিল অমিতবাবু জানতে পারেন, তাঁর কর্মস্থল কোভিড হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। পরের দিন কাজে যোগ দেন তিনি। গত ৬ মে আবাসনে ফেরেন ওই চিকিৎসক। তিনি জানান, করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি যখন ব্যস্ত ছিলেন, তখন আবাসনের মহিলারা প্রতিদিন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঘরবন্দি কবিপক্ষে ছক ভাঙা রবি-স্মরণ
প্রাক্তন পুলিশকর্তা তথা আবাসনের কমিটির সভাপতি অশোক সেন বলেন, ‘‘নন-কোভিড রোগীরা এখন প্রতিদিন সমস্যায় পড়ছেন। পাড়ায় পাড়ায় চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ। এর উপরে সমাজবন্ধু চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি বিরূপ আচরণের প্রবণতা বাড়লে সাধারণ মানুষেরই চিকিৎসা পেতে অসুবিধা হবে।’’ ওই আবাসনের বাসিন্দা তথা নবান্নের আধিকারিক অশোক দাস বলেন, ‘‘মানুষকে সতর্ক হতে হবে। কিন্তু ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হলে চলবে না।’’
অমিতবাবুর কথায়, ‘‘চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি সমাজের ভ্রান্ত ধারণা, বেদনাদায়ক আচরণের শিকার হন, তা হলে পরিষেবা দেবেন কী করে? সেই নিরিখে আমি কোভিড হাসপাতালে
থাকার সময়ে প্রতিবেশীরা যে ভাবে মানসিক সমর্থন জুগিয়েছেন, তা অভাবনীয়! শারীরিক দূরত্ব যেন মানসিক দূরত্ব তৈরি না করে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy