প্রতীকী ছবি।
হায়দরাবাদের কাছে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েই নিহত তরুণীর পরিবারকে পুলিশের দোরে দোরে ঘুরতে হয়েছে বলে অভিযোগ। মেলেনি যে কোনও ঘটনায় যে কোনও থানায় ‘জ়িরো এফআইআর’ দায়ের করার সুবিধাও। সেই ঘটনার সূত্রেই এ বার প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা পুলিশই বা এ ব্যাপারে কতটা সক্রিয়? জরুরি সময়ে ‘জ়িরো এফআইআর’-এর সুবিধা এ শহরে পাওয়া যায় তো? যদিও কাগজে-কলমে ছ’বছর আগেই কলকাতা পুলিশ ‘জ়িরো এফআইআর’ ব্যবস্থা চালু করেছিল।কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা মঙ্গলবারও বলেছেন, ‘‘যে কোনও অভিযোগে স্থান-কাল বিচার না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া আছে। বিশেষ করে, মহিলাদের তরফে কোনও অভিযোগ এলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা নিতে বলা আছে ওসি-দের!’’ কিন্তু সত্যিই কি তা হয়?
গত জুনেই প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া তথা অভিনেত্রী ঊষসী সেনগুপ্তকে রাতের শহরে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ বাড়ি যাওয়ার জন্য যে অ্যাপ-ক্যাবে তিনি উঠেছিলেন, সেটিকে ঘিরে ধরে জনা পনেরো যুবক তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। অভিনেত্রীর দাবি, তিনি সাহায্য চাইতে কাছেই ময়দান থানায় গেলে সেখানকার এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা ভবানীপুর থানার অন্তর্গত। সেখানে যান।’’ ঊষসী এ দিন বলেন, ‘‘জ়িরো এফআইআরের সুবিধা তো দূর, ওই
পুলিশ অফিসারের কাছে হাতজোড় করে সাহায্য চাইলেও তিনি কিছু করেননি। সেখান থেকে কোনও মতে বেরিয়ে আমার সঙ্গী ও সহকর্মীকে নামাতে লেক গার্ডেন্সে গেলে সেখানেও পিছু নেয় ওই বাইকবাহিনী। তখন কাছেই চারু মার্কেট থানায় গেলে বলা হয়, প্রথমে যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা ভবানীপুর থানার মধ্যে পড়ে। সেখানেই যেতে হবে।’’ কিন্তু ২০১২ সালে দিল্লির গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিটি ‘জ়িরো এফআইআর’ প্রক্রিয়া চালুর প্রস্তাব দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর পরেই প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিবদের বাধ্যতামূলক ভাবে ‘জ়িরো এফআইআর’ নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দেয়। ডিআইজি পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে এফআইআরের কাগজের উপরে ‘জ়িরো এফআইআর’ কথাটি লিখে দিতে হয়। ওই এফআইআরের ভিত্তিতে পুলিশ কাউকে গ্রেফতারও করতে পারে। কোথায় অভিযোগ হবে, তা অভিযোগকারীর ভাবারই কথা নয়।’’
অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্রেরও অভিজ্ঞতা বলছে, কলকাতায় ‘জ়িরো এফআইআর’ দায়ের করা এক ঝক্কির ব্যাপার। তাঁর দাবি, বছর দুয়েক আগে বেহালার সিরিটি শ্মশানের কাছে তাঁকে এবং তাঁর গাড়িচালককে ধরে কয়েক জন মত্ত যুবক হেনস্থা করছে দেখেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। ওই এলাকায় সেই রাতে রাউন্ডে ছিলেন তারাতলা থানার তৎকালীন ওসি। তিনিই এর পরে কাঞ্চনাকে সাহায্য করেন। তবে ওই ওসি-র সামনেও অত রাতে কোন থানায় অভিযোগ দায়ের হবে, তা নিয়ে পুলিশের মধ্যে তর্ক চলতে দেখেছেন বলে কাঞ্চনার দাবি। ঊষসী বলেন, ‘‘হায়দরাবাদের ঘটনাটি শুনে বিচ্ছিন্ন কোনও ব্যাপার বলে মনে হয়নি। কলকাতাতেও একই অবস্থা হয়।’’
লালবাজারের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘কিছু অফিসার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন বলেই পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর না নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কোনও কোনও থানার ওসি অনেক সময়ে অধস্তন কোনও অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করানো হচ্ছে বলে দাবি করে এফআইআর নিতে চান না।
তবে এ ব্যাপারটাকে আদালতও ভাল ভাবে নেয় না।’’ ওই কর্তা জানান, তপসিয়া এবং কড়েয়া থানায় ঘুরে ঘুরে শেষে কড়েয়া থানায় দাঁড়িয়ে মধ্যরাতে তাঁকে ফোন করেছিলেন এক মহিলা। ঘটনাস্থল ছিল তপসিয়া থানার অন্তর্গত। তবে অভিযোগকারিণীকে আর তপসিয়ায় ফেরত না পাঠিয়ে কড়েয়াতেই ‘জ়িরো এফআইআর’ দায়ের করতে বলেন তিনি।
কিন্তু যাঁদের হাত পুলিশের বড় কর্তাকে ধরার মতো লম্বা নয়, তাঁরা কী করবেন? স্পষ্ট উত্তর নেই কোনও মহলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy