Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ক্লাবের জমি কার, তা নিয়েই চলছে বিরোধ। জমি ছাড়তে নারাজ দু’পক্ষই
Land Dispute

মাথায় পুরপ্রতিনিধি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেও তাই কি ভাঙা যায়নি ক্লাব?

জয়দেবের পাল্টা দাবি, ওই ক্লাবটি সরকারি জমির উপরে গড়ে উঠেছে। সেই সংক্রান্ত কাগজপত্রও তাঁদের রয়েছে। কিন্তু পুরপ্রতিনিধির এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন নয়াপট্টির পূর্বপাড়ার বাসিন্দা বাপ্পা।

An image of Club

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও বহাল তবিয়তে রয়েছে এই ক্লাব। —নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:০৭
Share: Save:

পরিস্থিতি বেগতিক বুঝলেই সরকারি কাজে বাধাদান বহু ক্ষেত্রে এক রকম দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে হাই কোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বেআইনি বলে ঘোষিত হওয়া একটি তেতলা ক্লাব দুই শীর্ষ আদালতই ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিল। সম্প্রতি সেটি ভাঙতে গিয়ে লোকজনের বাধার মুখে পড়ে ফিরে যান বিধাননগর পুরসভার আধিকারিকেরা। ‘আদিত্য স্মৃতি সঙ্ঘ’ নামে ওই ক্লাবটি রয়েছে বিধাননগর পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপট্টির পূর্বপাড়া এলাকায়। অভিযোগ, ওই ক্লাবটির না আছে পুরসভা অনুমোদিত বৈধ নকশা, না আছে অন্য কোনও বৈধ নথি। কিন্তু ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিধাননগরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তথা স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব নস্করের নাম। তিনি ক্লাবের সভাপতি। আর তাই বিধাননগর পুরসভা শীর্ষ আদালতগুলির নির্দেশ হাতে পেয়েও ক্লাবটি ভাঙতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাপ্পা প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, তাঁদের জমির উত্তর সীমানায় জোরজুলুম ও মারধর করে ক্লাবটি তৈরি করেছেন পুরপ্রতিনিধি জয়দেব ও তাঁর লোকজন।

জয়দেবের পাল্টা দাবি, ওই ক্লাবটি সরকারি জমির উপরে গড়ে উঠেছে। সেই সংক্রান্ত কাগজপত্রও তাঁদের রয়েছে। কিন্তু পুরপ্রতিনিধির এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন নয়াপট্টির পূর্বপাড়ার বাসিন্দা বাপ্পা। তাঁর দাবি, ‘‘গত বছর বারাসত আদালত ওই জমিতে আমাদের মালিকানাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি মামলা চলছিল সরকারের সঙ্গে। সেই মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকার সময়েই ক্লাবটি তৈরি করা হয়। যে কারণে কলকাতা হাই কোর্ট ওই নির্মাণকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে বিধাননগর পুরসভাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।’’ বাপ্পার প্রশ্ন, ‘‘তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, এটা সরকারি জমি, তা হলেও প্রশ্ন ওঠে, সেখানে ক্লাব তৈরি করার অধিকার জয়দেবদের কে দিল?’’ যদিও ক্লাবটি যখন তৈরি করা হচ্ছিল, সেই সময় থেকে পুরসভার কাছে বার বার দরবার করা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমনই অভিযোগ বাপ্পা ও তাঁর পরিবারের।

তাঁদের দাবি, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমে পুরসভাও ক্লাবটিকে ২০২২ সালে বেআইনি ঘোষণা করে ওই জায়গা খালি করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নোটিস পুরসভার তরফে জয়দেব ও তাঁর লোকজনকে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত ক্লাবটি বহাল তবিয়তেই রয়েছে। বাপ্পা জানান, ক্লাব বাঁচাতে জয়দেব সুপ্রিম কোর্ট অবধি গিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বত্রই তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। জয়দেব বলেন, ‘‘ওই জমি যে সরকারের, সেই তথ্য জোগাড় করেছি। ওই জায়গায় প্রোমোটিংয়ের চক্রান্ত হচ্ছে।’’

বাপ্পার বাবা অর্জুন প্রামাণিকের অভিযোগ, জমিটি অধিগৃহীত বলে জয়দেবরা সর্বত্র রটিয়ে লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। তিনি বলেন, ‘‘১৯৬৮ সালে ৪/৩৩/১ নম্বরে যে অধিগ্রহণ হয়েছিল, ১৯৬৯ সালে হাই কোর্টের রায়ে তা বাতিল হয়ে জমিটি অধিগ্রহণমুক্ত হয়ে যায়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য তখন কোনও আপিল করেনি। ২০১১ সালে আবার অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে বারাসত দেওয়ানি আদালতে মামলা করি। ২০১৬ সালে আমরা জমির মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও সরকার ফের ২০১৭ সালে আদালতে যায়। ২০২৩ সালে আমরা মামলায় জিতি।’’

তাঁরা জানান, তাঁদের প্রায় ১০২ কাঠা জমির উত্তর সীমানার খানিকটা অংশে ক্লাবটি রয়েছে। ২০১৬ সালে জমিটি দখলের চেষ্টা হতেই বিধাননগর মহকুমার এগ্জ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের দ্বারস্থ হয়ে জমিতে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন জানান তাঁরা। বাপ্পা বলেন, “আদালতের নির্দেশে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা তদন্ত শুরু করে আমাদের ও জয়দেবদের জমির কাগজ নিয়ে ডেকে পাঠায়। আমরা কাগজ নিয়ে থানায় গেলেও জয়দেবরা কিছুই করেননি। থানা আদালতকে জানিয়ে দেয়, ওই জমিতে নির্মাণ না করতে জয়দেবদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদিও ২০২১ সালে আমাদের মারধর করে জমিতে ঢুকে ক্লাব তৈরি করা হয়।’’

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Land Dispute Dispute Land Enchroachment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy