কালীঘাট মন্দিরের পাঁচ নম্বর গেটের সামনে রাখা ভাঙা জীবাণুনাশক টানেল। নিজস্ব চিত্র
প্রবেশপথের একটি গেটে জীবাণুনাশক টানেল কিছু দিন হল অকেজো। আর একটি গেটের জীবাণুনাশক টানেলটি আবার ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়েছে। আপাতত গেটের একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে সেটি। ফলে কালীঘাট মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের শুধু দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। গত ১২ জানুয়ারি থেকে গঙ্গাসাগর মেলার পুণ্যার্থীদের চাপে কালীঘাট মন্দিরে করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা এ ভাবেই শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ।
লকডাউনের কড়াকড়ি শিথিল হওয়ার পরে গত ১ জুলাই থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বিচারকের নির্দেশে কোভিড-বিধি মেনে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল কালীঘাট মন্দিরের দরজা। স্থির হয়েছিল, দু’নম্বর গেটে জীবাণুনাশক টানেল বসিয়ে সেখান দিয়ে দর্শনার্থীদের মূল মন্দিরে প্রবেশ করানো হবে। বিগ্রহ দর্শনের পরে চার নম্বর গেট দিয়ে তাঁরা বেরিয়ে যাবেন। সম্প্রতি বিধিনিষেধের কড়াকড়ি শিথিল করে দর্শনার্থীদের গর্ভগৃহ পর্যন্ত পৌঁছনোর অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল।
কালীঘাট মন্দির সূত্রের খবর, গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে পুণ্যার্থীদের ভিড় সামলাতে পাঁচ নম্বর গেট দিয়েও দর্শনার্থীদের ভিতরে ঢোকানো হয়েছে। ওই গেট দিয়ে সরাসরি মূল মন্দিরে পৌঁছনো যায়। সে ক্ষেত্রে ওই গেট দিয়ে দর্শনার্থীদের ঢুকিয়ে চার নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু মন্দির কমিটি সূত্রের খবর, গত ১২ জানুয়ারি ভিড়ের চাপে পাঁচ নম্বর গেটের জীবাণুনাশক টানেলটি ভেঙে পড়ে। সেটির জীবাণুনাশক ট্যাঙ্কটিও এখন মাটিতে নেমে এসেছে। এ ছাড়া দু’নম্বর গেটের জীবাণুনাশক টানেলটি আগেই অকেজো হয়ে আছে। ফলে কয়েক দিন ধরে কোভিড-বিধি না মেনেই মন্দিরে ঢুকছেন দর্শনার্থীরা।
আরও খবর: টিকা নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৪৪৭ জনের, গুরুতর নয়, বলল কেন্দ্র
আরও খবর: জোট হলে কংগ্রেসের জেতা আসনে প্রার্থী দেবেন না আব্বাস, দাবি সোমেন পুত্রের
অভিযোগ, মন্দির কমিটি সব জেনেও চুপ। তবে ওই ঘটনায় সেবায়েত কাউন্সিলের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘মন্দির কমিটির পাশাপাশি থানাও নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ দায়েরের পরে কয়েক দিন কেটে গেলেও টানেল চালু করতে উদ্যোগী হয়নি পুলিশ।’’
সেবায়েত কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মন্দিরে থাকেন সেবায়েতরা। মন্দির কমিটির কোনও সদস্য থাকেন না। কোভিড-বিধি না মেনে অবাধে দর্শনার্থী প্রবেশের ফলে সেবায়েতদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে ভিন্ রাজ্যের পুণ্যার্থীরা শহরে এসে মন্দির দর্শন করেছেন। সে ক্ষেত্রে প্রবেশপথে জীবাণুনাশের প্রয়োজন থাকলেও তা করা যায়নি।
বর্তমানে অবস্থা এমনই যে, পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। সেখানেই গেটের একপাশে রাখা জীবাণুনাশক টানেলটি। আর দর্শনার্থীদের মধ্যে দূরত্ব-বিধি মানার বালাই নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড়ে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁরা। অথচ কোনও পুলিশকর্মীর দেখা নেই। মন্দির কমিটির তরফে কোনও স্বেচ্ছাসেবকও নেই। স্থানীয় কয়েক জন যুবক দর্শনার্থীদের ওই লাইনের দেখাশোনা করছেন। এক সেবায়েতের কথায়, ‘‘হাঁড়িকাঠের খুব কাছেই পাঁচ নম্বর গেট। বলির পাঁঠা ওই গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা। তাই মন্দির কমিটির সদস্যদের একাংশের চাপেই পাঁচ নম্বর গেট খোলা হয়েছে।’’
এ ভাবে মন্দিরে কোভিড প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় হতাশ মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার। তিনি বলছেন, ‘‘ভিড় ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিষেধক আসার পরে দর্শনার্থীরাও কিছুটা বেপরোয়া হয়ে গিয়েছেন। নেতা-মন্ত্রীদের মিটিং-মিছিলে বিধিনিষেধ নেই, শুধু মন্দিরেই যত বিধি-নিষেধ— এমনও শুনতে হচ্ছে।’’ তবে এর দায় পুলিশের উপরে চাপাচ্ছেন কল্যাণবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সেবায়েত কাউন্সিলের তরফে কালীঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আশা করি পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’ ডিসি (সাউথ) সুধীর নীলকান্ত বলছেন, ‘‘ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’’ তবে সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্করবাবু বলছেন, ‘‘দক্ষিণেশ্বর-সহ বহু মন্দিরে এখনও কোভিড বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে। সেখানে ভিড় থাকলেও সমস্ত নিয়ম কঠোর ভাবেই পালন করা হচ্ছে। কিন্তু কালীঘাট মন্দির জেলা বিচারকের অধীনে থাকা সত্ত্বেও মন্দির কমিটির গা-ছাড়া মনোভাব রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy