দাউদাউঃ মোবিলের গুদামের আগুন নেভানোর চেষ্টায় দমকলকর্মীরা। মঙ্গলবার, ধাপার মাঠপুকুরের কাছে। ছবিঃ সুদীপ্ত ভৌমিক।
তখন সাড়ে দশটা বাজে। সবে রান্না বসিয়েছি। হঠাৎ শুনি, বাইরে ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, চার দিক কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কোনও মতে গ্যাস বন্ধ করে ঘর থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র বার করার মরিয়া চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কটু গন্ধে দম আটকে আসছিল। বাধ্য হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। তবে, ঘরে তখনও ছিলেন আমার স্বামী। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই বাচ্চাদের বার্থ সার্টিফিকেট, টাকাপয়সা-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী বার করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ধোঁয়ায় অসুস্থ বোধ করায় তিনিও কিছু না নিয়েই বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন।
দুই ছেলে, স্বামী, শাশুড়িকে নিয়ে সংসার আমার। আগুন সব কেড়ে নিল। স্বামীর রোজগারে অনেক কষ্টে ঘরটা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু আগুনের তাপে বাড়ির পাঁচিল ফেটে গিয়েছে। ভাগ্যিস, সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসেছিলাম! আমাদের বাড়ির পাঁচিল ঘেঁষে মোবিলের গুদাম। প্রায়ই ভয় হত, ড্রামের পর ড্রাম মোবিল যেখানে থাকে, সেখান থেকে কোনও দিন না বড় বিপদ হয়। সেই আশঙ্কাই আজ সত্যি হল।
ঘরের পাশে এমন গুদাম চাই না। ধাপায় বসতি এলাকায় এমন অজস্র গুদাম, কারখানা রয়েছে। আগুন লাগলে সেখানকার লোকজনের তো সর্বস্ব শেষ হয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছে আবেদন, এই ধরনের অবৈধ কারখানা, গুদামের বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা যেন নেয়।
সাড়ে দশটায় আগুন লাগার পরে দু’ঘণ্টা ঠায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে। ঘরের মধ্যে জিনিসপত্র কী অবস্থায় আছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। বাড়ির কাছে গেলে পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছে। কখন বাড়িতে ঢুকতে পারব, জানি না। এরই মধ্যে প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পাড়ার এক জনের ঘরে কিছু ক্ষণ থাকি। কিন্তু, কিছুই ভাল লাগছে না। খুব কাছ থেকে আগুনের ভয়াল গ্রাস দেখলাম। এমন অবস্থা যেন অন্য কারও না হয়। আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের যেন সাহায্য করা হয়, প্রশাসনকে শুধু সেটুকুই বলব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy