রাস্তার ধারে আবর্জনা —নিজস্ব চিত্র।
পথে নেমে কোন দিকে তাকিয়ে থাকেন বিধাননগরের পুরপ্রতিনিধি বা পুর নেতৃত্ব? দু’বেলা যে রাস্তা দিয়ে তাঁরা গাড়িতে যাতায়াত করেন, বিমানবন্দরের পিছনে প্রায় এক কিলোমিটারব্যাপী সেই রাস্তার দু’ধারে জঙ্গল ও আবর্জনার স্তূপে কার্যত নরকে পরিণত হয়েছে। ভাঙা কমোড থেকে প্লাস্টিক, থার্মোকলের পাত্র— কী নেই সেখানে! যে দিকে বাসিন্দাদের নজর পড়লেও পুর কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ। ইতিমধ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বিধাননগর পুর এলাকায়।
সেখানকার চার নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রাণী অঞ্চলের শরৎপল্লির বাসিন্দা শিবানী দাস নামে এক বৃদ্ধা শনিবার মারা যান। তিনি অন্যান্য অসুস্থতায় ভুগলেও পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর আগে তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ দিন সকালে তাঁর বাড়ির আশপাশে গিয়ে ওষুধ ও ব্লিচিং ছড়িয়ে এসেছেন পুরকর্মীরা।
শরৎ কলোনিতে যেতে হলে বিমানবন্দরের পিছনের ওই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। আর তার পাশেই রয়েছে ঘন জনবসতি। অথচ সেখানেই রাস্তার দু’ধারে পড়ে রয়েছে ভাঙা কমোড, প্লাস্টিক ও থার্মোকলের পরিত্যক্ত পাত্র। অর্থাৎ ডেঙ্গির মশার প্রজননের আদর্শ পরিবেশ রয়েছে সেখানে। জঙ্গলে ভরে গিয়েছে আশপাশের এলাকা, রয়েছে পরিত্যক্ত কুয়োও। এমনকি, রাস্তার ওই সব জায়গায় গাড়ি দাঁড়ালেও হাওয়ায় ভেসে আসে দুর্গন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তাটির এ হেন দুরবস্থা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই বিধাননগর পুরসভার। দীর্ঘদিন ধরে এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার এমনই দশা হয়ে রয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই জায়গার অদূরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও রয়েছে।
বছর দুয়েক আগে ডেঙ্গিতে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বিধাননগর পুর এলাকায়। এ বার এখনও পর্যন্ত এই একটিই ডেঙ্গি-মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। চলতি বছরে নারায়ণপুর অঞ্চলে এক ব্যক্তির এবং গত সপ্তাহে আটঘরা অঞ্চলে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। এলাকা সূত্রের খবর, দু’টি ঘটনাতেই মৃতেরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বিধাননগর পুরসভার কাছে সেই তথ্য পৌঁছয়নি বলেই স্থানীয়দের দাবি।
পূর্ব কলকাতার মোল্লার ভেড়িতে বিধাননগর পুরসভা আগে আবর্জনা ফেলত। বর্তমানে কলকাতা পুরসভার ধাপায় বিধাননগরের আবর্জনা পড়ে। সেখানে সময় এবং পুরসভার আবর্জনা ফেলার গাড়ির সমস্যাগত কারণে জঞ্জাল ফেলা নিয়ে সমস্যার কথা বিভিন্ন সময়ে বলেন পুরকর্তারা। তবু এক বছর ধরে বিমানবন্দরের পিছনেই মাত্র এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার বেহাল দশা দূর করা কেন যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠছে। শুধুই ওই রাস্তাই নয়, রাজারহাট-নারায়ণপুরের বসতি এলাকার অনেক জায়গাতেই নিয়মিত জঙ্গল সাফাই, নর্দমা সাফাই না হওয়ায় মশার উপদ্রব বেড়েছে বলেই অভিযোগ করছেন স্থানীয়েরা।
ওই রাস্তার পাশেই রয়েছে বিধাননগর পুরসভায় ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ড। ৫ নম্বরের ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সম্রাট বড়ুয়ার দাবি, রাতের অন্ধকারে ফাঁকা জায়গা পেয়ে আবর্জনা ফেলে দিয়ে যান স্থানীয়েরাই। পুরসভা নির্ধারিত সময় অন্তর সাফাই করলেও নজরদারির ব্যবস্থা তেমন ভাবে না থাকায় এই সমস্যার সমাধানও করা যাচ্ছে না। তবে পুরসভার মেয়র পারিষদ (আবর্জনা সাফাই) দেবরাজ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy