Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

দ্রুত কাবু নানা অঙ্গ, চিন্তায় চিকিৎসকেরা

এত দ্রুত রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে কেন? চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত রাজ্যে হেমারেজিক ফিভারই বেশি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৮
Share: Save:

ছ’বছরের শিশু তিন দিনের জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ভর্তির পরপরই মস্তিষ্কে আঘাত করে সংক্রমণ।

১০ বছরের বালিকার জ্বরের পাঁচ দিনের মাথায় পেটে, বুকে জল জমে একাকার।

এক দিনের জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরেই খিঁচুনি শুরু হয়েছিল ২৯ বছরের যুবকের।

শিশু, বালিকা, যুবক— ডেঙ্গি সংক্রমণে আক্রান্ত তিন জনের কাউকেই বাঁচানো যায়নি। সকলের ক্ষেত্রেই সংক্রমণ দ্রুত দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ঘায়েল করে ফেলে। ডাক্তারি পরিভাষায় যা ‘এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গি সিন্ড্রোম’ হিসেবে পরিচিত। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘ডেঙ্গি হেমারেজিক শকের বাইরে এই সিন্ড্রোম কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। যেখানে দ্রুত বিভিন্ন অঙ্গ যেমন যকৃৎ, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু, চোখকে কাবু করছে সংক্রমণ।’’ এই সিন্ড্রোমই এখন চিকিৎসকদের মাথাব্যথার কারণ।

গত ১৬ অক্টোবর থেকে জ্বরে ভুগছিল রিজেন্ট পার্কের ধানিক দেশাই। দু’দিন পরে জ্বর, বমি, পেটে ব্যথা নিয়ে তাকে ভর্তি করা হয় একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ভর্তির পরপরই ধানিকের পাতলা পায়খানা হতে থাকে। জ্বরের মধ্যে দ্রুত মস্তিষ্কে আঘাত করে সংক্রমণ। ফলে পরিচিতদের চিনতে অসুবিধা হচ্ছিল শিশুটির। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম ‘কনফিউশন স্টেজ’। দ্রুত সেই সংক্রমণ হৃৎপিণ্ডকে কাবু করে ফেলে। ২১ অক্টোবর রাতে মারা যায় ধানিক।

হাওড়ার পি কে চৌধুরী লেনের বাসিন্দা অক্ষিতা দাসের ২৬ অক্টোবর থেকে জ্বর ছিল। ২৮ তারিখ রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ততক্ষণে অক্ষিতার বমি শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই দিনই আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করেন মা-বাবা। ৩০ তারিখ পেটে ব্যথা, পরে রক্তচাপ কমতে শুরু করলে অক্ষিতাকে আইসিইউয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। ধীরে ধীরে পেট, যকৃতে জল জমতে শুরু করে। ৩১ অক্টোবর দুপুরে বুকে জল জমে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এর পরে সংক্রমণের হাতে মস্তিষ্কের কাবু হতে সময় লাগেনি। আরও এক দিন লড়াই চালিয়ে ২ নভেম্বর হার মানে অক্ষিতা।

জ্বর হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় অশোকনগরের বাসিন্দা জয়ন্ত পালকে (২৯) যখন কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। দ্রুত ভেন্টিলেশনে চলে যান তিনি।

এত দ্রুত রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে কেন? চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত রাজ্যে হেমারেজিক ফিভারই বেশি। কিন্তু অন্য দিক ধরে এডিস ইজিপ্টাই মানুষকে ঠকাতে শুরু করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, ‘‘এর পিছনে অনেকগুলি সম্ভাবনা থাকতে পারে। প্রথমত, দ্বিতীয় বারের ডেঙ্গি সব সময়ে খারাপ। কারণ পুরনো অ্যান্টিবডি নতুন অ্যান্টিবডিকে আটকায় বলে সংক্রমণ মারাত্মক আকার নেয়। ফলে কেউ দ্বিতীয় বার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে সমস্যা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, উপসর্গ চেপে রেখে রোগী বিপদ ডেকে আনছেন কি না, তা-ও দেখতে হবে। এ বছরে ডেঙ্গি ভাইরাস চরিত্রের বদলও ঘটে থাকতে পারে।’’

সেই সম্ভাবনা অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন নাইসেডের ডিরেক্টর শান্তা দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘সেরোটাইপে কিছু পরিবর্তন পাওয়া যায়নি। ‘প্রোটোকল ম্যানেজমেন্ট’ যেখানে ঠিক মতো হয়নি, সেখানেই সমস্যা হয়েছে।’’

কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা করেও অক্ষিতাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান বিভূতি সাহার মতে, “ডেঙ্গির সাধারণ উপসর্গগুলির বাইরে অন্য কোনও অঙ্গ আক্রান্ত হচ্ছে কি না, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চিকিৎসা করা দরকার। কোন রোগী পরে সঙ্কটাপন্ন হবেন, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তা চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা করা প্রয়োজন। তা হলে সেই রোগীকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা যাবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Dengue effect in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy