প্রতীকী ছবি।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর করোনা পরীক্ষা করাতেই রিপোর্ট পজ়িটিভ এল। তৎক্ষণাৎ তাঁকে স্থানান্তরিত করা হল কোভিড ওয়ার্ডে। হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরে রুটিন পরীক্ষায় পজ়িটিভ ধরা পড়তেই এক প্রৌঢ়কে পাঠানো হল কোভিড হাসপাতালে। দু’টি ক্ষেত্রেই বেশ কিছুটা থমকে রইল তাঁদের পোড়ার বা হৃদ্যন্ত্রের চিকিৎসা।
প্রশ্ন হল, কোমর্বিডিটিতে ভোগা রোগী, দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম কিংবা অস্থি, কিডনি, স্নায়ু-সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের নির্দিষ্ট চিকিৎসা সাধারণ কোভিড ওয়ার্ডে কতটা সম্ভব? সরকারি থেকে বেসরকারি, সব স্তরের চিকিৎসকদের অধিকাংশেরই মত, কোভিড আবহে চিকিৎসার এই ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসা জরুরি। তাঁদের ব্যাখ্যা, অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ে দেখা যাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের অধিকাংশেরই পুরনো ব্যাধি ছিল। সেই রোগের বাড়াবাড়ি হয়ে সঙ্কটজনক অবস্থা তৈরি হলে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। তাই কোমর্বিডিটি আছে, এমন রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া জরুরি।
চিকিৎসকদের অধিকাংশেরই দাবি, বড় হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে একটি অংশ থাকুক কোভিড আইসোলেশনের জন্য। যাতে ভর্তির পরে রোগীর করোনা ধরা পড়লেও তাঁকে অন্যত্র না পাঠিয়ে ওই বিভাগের আইসোলেশনে রেখেই পরিষেবা দেওয়া যায়। সম্প্রতি গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ডের বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছিল। কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক গোপালকৃষ্ণ ঢালি বলেন, “খেয়াল রাখতে হবে, রোগীর পুরনো রোগের চিকিৎসা যেন অবহেলিত না হয়। করোনার কারণে কারও ফুসফুসে সংক্রমণ হলে সেটির চিকিৎসা দিতে হবে ঠিকই, কিন্তু পুরনো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশি জরুরি। সে জন্য প্রতিটি বিভাগে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত চালু হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নিজের ওয়ার্ডেই পরিষেবা দিতে পারবেন।”
কয়েক দিন আগেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং টি এল
জায়সওয়াল হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির সদস্যদের পর্যবেক্ষণ, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশেরই অন্য চিকিৎসা করাতে এসে কোভিড ধরা পড়েছে। যেটিকে বলা হচ্ছে, ‘ইনসিডেন্টাল ফাইন্ডিং’। অন্যান্য হাসপাতালেও তেমনই তথ্য পাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কোনও হাসপাতালে এমন রোগীর হার ৯০ শতাংশেরও বেশি। রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানাচ্ছেন, হাসপাতালে এখন অন্য রোগ নিয়ে আসা রোগীদের প্রতি তিন জনের এক জন কিংবা তারও বেশি করোনা পজ়িটিভ। এই পর্যায়ের সংক্রমণ আটকানো প্রায় হাতের বাইরে। সংক্রমণকে প্রতিহত করতে মাস্ক ছাড়া যেমন গতি নেই, তেমনই করোনায় মৃত্যু কমাতে মূল রোগের চিকিৎসা করাও জরুরি।
অভিজিৎবাবুর কথায়, “সংক্রমণ যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে সব হাসপাতালেই করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই কোভিড-বিধি মেনে সব ওয়ার্ডে বা বড় হাসপাতালের একটি অংশে আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাতে অন্য রোগের চিকিৎসায় এসে করোনা ধরা পড়লেও মূল রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।” রাজ্যের
কোভিড প্রোটোকল মনিটরিং কমিটির সদস্য-চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, সব ওয়ার্ডে আলাদা আইসোলেশন পরিকাঠামো গড়তে পারলে ভাল। তবে বহু ক্ষেত্রেই তা সম্ভব নয়। তিনি বলছেন, “করোনা আক্রান্ত মানেই তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে বা আলাদা হাসপাতালে ঠেলে দেওয়া নয়। তাতে পুরনো রোগ অবহেলিত হতে পারে। তাই সাধারণ নিয়ম মতো তাঁর রোগের চিকিৎসা করতে হবে।”
এই মতামত যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করছেন বেসরকারি হাসপাতালের কার্ডিয়োভাস্কুলার শল্য চিকিৎসক কুণাল সরকারও। তাঁর কথায়, “সময়োপযোগী চিন্তাভাবনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য রোগের
চিকিৎসা করাতে এসে কোভিড ধরা পড়ছে। সংক্রমণের চিকিৎসা করতে গিয়ে অন্য রোগের চিকিৎসা হল না, সেটা খুবই দুঃখকজনক।” সব বিভাগে না হলেও প্রতিটি বড় হাসপাতালে একটি নির্দিষ্ট কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করে সেখানে সংশ্লিষ্ট রোগের পরিষেবা দেওয়ার কথাও জানাচ্ছেন কুণালবাবু।
তেমন পরিকল্পনা এখনই না হলেও মেডিক্যাল কলেজ এবং বড় হাসপাতাল, যেখানে করোনার চিকিৎসা হচ্ছে, সেখানে কোভিড ওয়ার্ডে অন্য রোগের চিকিৎসকেরা পরিষেবা দিতে পারেন বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞ পরিষেবা সব স্তরের হাসপাতালে থাকে না। তেমন কোনও হাসপাতালে ভর্তি করোনা আক্রান্তের নির্দিষ্ট চিকিৎসা দরকার পড়লে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ বা বড় পরিকাঠামোয় স্থানান্তরিত করা যেতে পারে।” তিনি জানান, আপাতত দু’-একটি বড় হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীকে তাঁর পুরনো রোগের চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা নিয়মিত পরিষেবা দিতে শুরু করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy