প্রতীকী ছবি।
ঘটনা-১: শনিবার সকালে পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে শহরের একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন এক যুবক। সেই দিনই ওয়ার্ড থেকে তাঁর রক্তের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হল। কিন্তু রাত কেটে গেলেও রিপোর্ট এসে পৌঁছল না। জানা গেল, রিপোর্ট যখন তৈরি হয়েছে, তত ক্ষণেওয়ার্ডের কর্মী কাজ সেরে চলে গিয়েছেন। পরদিন রবিবার হওয়ায় সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি। অগত্যা রিপোর্ট এল সোমবার। অর্থাৎ, ভর্তি হওয়ার পরে নির্দিষ্ট রোগ চিহ্নিত করতেই দু’দিন কেটে গেল!
ঘটনা-২: সকালে ওয়ার্ডে রাউন্ডে এসেছিলেন চিকিৎসক। এ দিকে টানা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট তখনও আসেনি। অগত্যা রিপোর্ট না দেখেই চলে যেতে হল ওই চিকিৎসককে। সেই রিপোর্ট শেষমেশ এল ঠিকই, তবে ওই দিন বিকেলে। চিকিৎসক রিপোর্ট দেখতে পেলেন পরের দিন সকালে। এ ক্ষেত্রেও সেই দু’দিন কেটে গেল।
রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর রক্ত-সহ অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে এমন দেরির ঘটনা নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই এই সমস্যা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, রোগীর পরিজনেরা কিংবা ওয়ার্ডের কর্মীরা নমুনা পৌঁছে দেন পরীক্ষাগারে। তাঁরাই আবার রিপোর্ট নিয়ে এসে ওয়ার্ডে জমা দেন। কিন্তু এই গোটা প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ। যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, ইতিমধ্যেই সরকারি স্তরে অনলাইন রিপোর্টের ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
পাশাপাশি এটাও তাঁরা মানছেন, সর্বত্র পুরোমাত্রায় ওই সুবিধা চালু হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য দফতরের পোর্টালে গিয়ে ‘ওপিডি টিকিট’ বিভাগে এখন শুধু বহির্বিভাগের অনলাইন রিপোর্ট পাওয়া যায়। কিন্তু সেটাও সব হাসপাতালের সব বিভাগে মেলে না বলে অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। আর অন্তর্বিভাগের অনলাইন রিপোর্ট ব্যবস্থা হাতে গোনা কিছু হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগে চালু হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওয়ার্ডে অনলাইন রিপোর্ট পাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল বছর চারেক আগে। স্থির হয়েছিল, রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হলেই, মোবাইলে বার্তা আসবে। পরীক্ষাগারে সেই নমুনা জমা হওয়ার পরেও বার্তা পাবেন রোগী। রিপোর্ট তৈরি হলে তার মেসেজ আসবে নির্দিষ্ট নম্বরে। রিপোর্ট ওয়ার্ডের কম্পিউটারেই দেখতে পারবেন চিকিৎসকেরা। রাজ্যের সিংহভাগ হাসপাতালে অবশ্য এই পরিষেবা অমিল। কোথাও কোথাও তা চালু হয়ে থাকলেও নামমাত্র।
এসএসকেএমের অ্যানেক্স শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল ও বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে সমস্ত বায়প্সি রিপোর্ট অনলাইনেই পাওয়া যায় বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রেই রিপোর্ট অনলাইনে পাওয়া যায়। সম্প্রতি স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ওই পরিষেবা চালু হয়েছে। সেখানকার রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনলাইনে রিপোর্ট পাওয়ার ব্যবস্থা সরকারের রয়েছে। রোগীর স্বার্থে সেটা কেন ব্যবহার হবে না? কিছু দিন ধরেই দেরিতে রিপোর্টের বিষয়টি নজরে আসছিল। তাই ওয়ার্ডে অনলাইনে রিপোর্ট ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দিয়েছি।” সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানের কথায়, “প্রতিটি ওয়ার্ডে কম্পিউটার বসানো এবং সংযোগ করতে সময় লাগছে। তাই এখনও ওয়ার্ডে অনলাইন রিপোর্ট পরিষেবা চালু হয়নি। তবে পরিকাঠামো অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।”
শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওয়ার্ডের জন্য কম্পিউটার কেনা, তা বসানোর কাজ বহু জায়গায় হয় সম্পূর্ণ, অথবা চলছে। আসল ফাঁক সফটওয়্যারে। সেটিই এখনও আপডেট হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালগুলিকে আলাদা করে কিছু বলেওনি। সমস্যা আছে আরও। এত রিপোর্ট অনলাইনে আপলোড করার পর্যাপ্ত কর্মীও প্রতিটি হাসপাতালে নেই বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই পরিষেবা পুরোমাত্রায় চালু হলে রোগীর দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যাবে। চিকিৎসা যেমন তাড়াতাড়ি শুরু হবে, দ্রুত শয্যাও ফাঁকা হবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলছেন, “আরও উন্নত পরিষেবা দিতেই এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ-সহ জেলা হাসপাতালেও অনলাইন রিপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে সর্বত্র পুরোমাত্রায় এই পরিষেবা চালু হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy