মর্মান্তিক: এই জায়গায় মেলে শান্তিরঞ্জন পোদ্দারের (ইনসেটে) দেহ। সোমবার, পর্ণশ্রীতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
রাত ১টা নাগাদ স্ত্রীকে ফোন করে বৃদ্ধ মানুষটি বলেছিলেন, ‘‘এ বার রাসবিহারী থেকে ট্যাক্সিতে উঠছি, ৩০ মিনিটের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাব।’’ কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেও বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তা শুরু হয় স্ত্রীর। শেষে সোমবার ভোরে, বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে উদ্ধার হল ৬৬ বছরের ওই বৃদ্ধের দেহ। পর্ণশ্রী থানার বনমালী নস্কর রোডের এই রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃতের নাম শান্তিরঞ্জন পোদ্দার (৬৬)। পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বনমালী নস্কর রোডের বাড়িতে থাকতেন নিঃসন্তান দম্পতি শান্তিরঞ্জনবাবু ও তাঁর স্ত্রী অন্নপূর্ণাদেবী। শান্তিরঞ্জনবাবু হোসিয়ারির ব্যবসা করতেন। তাঁর স্ত্রী-ও ছোটখাটো ব্যবসা করেন। রবিবার বিকেলে মূত্র সংক্রান্ত সমস্যার জন্য বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন শান্তিরঞ্জনবাবু। সেখান থেকে তাঁকে সে দিনই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলা হয়। এর পরে সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফিরে আরও কিছু টাকা নিয়ে রাত ১০টা নাগাদ ওই হাসপাতালের উদ্দেশে একাই রওনা দেন বৃদ্ধ।
অন্নপূর্ণাদেবীর দাবি, রাত ১২টা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে তাঁর স্বামী জানান, চিকিৎসা হয়ে গিয়েছে। সে সময়ে তিনি আরও জানিয়েছিলেন, অটোয় চড়ে তিনি রাসবিহারীর দিকে যাচ্ছেন। এর পরে সেখান থেকে ট্যাক্সিতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দেন ওই বৃদ্ধ এবং স্ত্রীকে ফোন করে সেই খবরও দেন। কিন্তু এর এক ঘণ্টা পরেও বাড়ি না ফেরায়, রাত ২টো নাগাদ স্বামীকে বার বার ফোন করতে থাকেন অন্নপূর্ণাদেবী। যোগাযোগ করতে না পারায় শেষে প্রতিবেশী সুভাষ দত্তকে বিষয়টি জানান বৃদ্ধা। তাঁর দাবি, রাত ৩টে নাগাদ ১০০ ডায়ালে ফোন করে ঘটনার কথা জানালে পর্ণশ্রী থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয় তাঁকে।
এর পরে মঙ্গলবার ভোর ৪টে নাগাদ এলাকার লোকেরা খোঁজাখুজি শুরু করলে এক প্রতিবেশীর থেকে জানা যায়, তিনি রাতের দিকে শান্তিরঞ্জনবাবুকে বাড়ির সামনে ট্যাক্সি থেকে নামতে দেখেছিলেন। এর পরেই আশপাশের এলাকায় খোঁজ শুরু হয় বৃদ্ধের। তখনই বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে রাস্তার উপরে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ এবং দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পাঠায়।
বৃদ্ধের পকেট থেকে তাঁর মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। যেখানে তিনি পড়ে ছিলেন, তার থেকে কিছুটা দূরে পাওয়া গিয়েছে তাঁর মানিব্যাগও। তবে মানিব্যাগে টাকা ছিল না বলেই পরিবারের দাবি। শান্তিরঞ্জনবাবুকে খুন করা হয়েছে বলেই অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। মৃতের এক আত্মীয় অদিতি ঘোষ বলেন, ‘‘জামাইবাবুর একটি পা ভাঙা ছিল। দেখে মনে হচ্ছে, পায়ের উপর দিয়ে কিছু চলে যাওয়ার ফলেই ভেঙে গিয়েছে। মানিব্যাগেও টাকা ছিল না। খুব সম্ভবত ভাড়া দিয়ে বচসার জেরেই গন্ডগোলের সূত্রপাত। তার ফলেই গাড়ি ধাক্কার দেওয়ায় মারা গিয়েছেন উনি।’’
পরিবারের তরফে পর্ণশ্রী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy