Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Death

বারান্দায় মিলল প্রৌঢ়ের দেহ, মৃত্যু ঘিরে রহস্য

ট্যাংরা থানার পুলিশকে ধন্দে ফেলেছে বেশ কয়েকটি বিষয়। খুন করে থাকলে পালিয়ে না গিয়ে রাজা ঘরে ঘুমিয়ে থাকবেন কেন?

নিথর: বাড়ির বারান্দায় পড়ে বাবু দাসের দেহ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিথর: বাড়ির বারান্দায় পড়ে বাবু দাসের দেহ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩৪
Share: Save:

ছ’ফুট বাই আট ফুট ঘরের সামনে একচিলতে বারান্দায় পড়ে এক প্রৌঢ়ের মৃতদেহ। ঘরের ভিতরে চৌকিতে শুয়ে ঘুমোচ্ছেন তাঁর ছেলে। সোমবার সকালে ট্যাংরার ডি সি দে রোডের একটি বাড়ি থেকে এই অবস্থায় এক জনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে মৃতের ছেলের বিরুদ্ধেই বাবাকে খুনের অভিযোগ করলেন তাঁর মা! যদিও পরে আবার পুলিশকে চিঠি দিয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই বলে জানান তিনি। পুলিশ অবশ্য রাত পর্যন্ত কাউেকে গ্রেফতার করেনি। ওই ছেলে এবং তাঁর মাকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা। পুলিশের বক্তব্য, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই পরিষ্কার হবে, এটি খুন কি না! তবে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, মৃতের পাঁজরের দু’টি হাড় ভাঙা ছিল। তবে কী ভাবে তা ভাঙল, তা জানা জায়নি।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে ট্যাংরা থানায় একটি ফোন আসে। জানানো হয়, ডি সি দে রোডের একটি বাড়িতে খুন হয়ে গিয়েছে। কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, যে বাড়ির কথা ফোনে জানানো হয়েছে, সেখানে বেশ কয়েক ঘর ভাড়াটে থাকেন। এমনই একটি ঘরের বারান্দায় পড়ে রয়েছে বাবু দাস নামে বছর ষাটেকের এক প্রৌঢ়ের দেহ। বারান্দার পাশেই ঘরে ঘুমোচ্ছেন তাঁর ছেলে, বছর তিরিশের রাজা দাস। দেহটি দ্রুত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। এর পরে মৃতের স্ত্রী শোভা দাস পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলে রাজাই বাবাকে খুন করেছেন। পুলিশ রাজাকে থানায় নিয়ে যায়। ডেকে পাঠানো হয় শোভাকেও।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি কলেজ থেকে বাণিজ্য নিয়ে পাশ করেছেন রাজা। তবে কোনও চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাঁর বাবা বাবু আগে লেদার কমপ্লেক্সে কাজ করতেন। কিন্তু চাকরি ছাড়ার পরে গত কয়েক দিন ধরে বাড়িতে বসেই প্রেশার কুকার সারাইয়ের কাজ করছিলেন। রাজার চাকরি না পাওয়া নিয়ে প্রায়ই বাড়িতে অশান্তি হত। লকডাউনের পরে তা আরও বেড়ে যায়। অবস্থা এমনই হয় যে, নিজের ডায়াবিটিস বা অন্য ওষুধপত্রও কিনে খাওয়ার টাকা ছিল না বাবুর।

পুলিশের কাছে শোভার দাবি, রোজ রাতে মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরেন রাজা। রবিবার রাতেও সে ভাবেই ফিরেছিলেন। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে খুব তর্কাতর্কি হয়। তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে রাজা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন বলেও শোভার দাবি। এ জন্যই ভয়ে রবিবার রাতে তিনি পাশের বাড়ির একটি ঘরে গিয়ে শুয়েছিলেন বলে শোভা জানিয়েছেন।

তবে দিনভর এত কিছু বললেও কারও বিরুদ্ধেই কোনও অভিযোগ নেই জানিয়ে শোভা একটি চিঠি থানায় জমা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের পরেও সে ভাবে কোনও তথ্যপ্রমাণ না মেলায় রাজাকে তাঁর পরিবারের সঙ্গেই বাবার মৃতদেহ দাহ করতে যেতে দেওয়া হয়েছে।

রাজার অবশ্য দাবি, বাবার মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, ঝামেলা হত ঠিকই। কিন্তু কাউকেই তিনি খুন করেননি। পুলিশ গিয়ে ডেকে তোলার পরে এ দিন ঘুম ভাঙে তাঁর।

ট্যাংরা থানার পুলিশকে ধন্দে ফেলেছে বেশ কয়েকটি বিষয়। খুন করে থাকলে পালিয়ে না গিয়ে রাজা ঘরে ঘুমিয়ে থাকবেন কেন? তবে কি রাজা এতটাই বেপরোয়া? খুনের আগের রাতেই শোভা অন্যত্র ঘুমোতে গেলেন কেন? যেখানে তিনি ঘুমোতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করছেন, সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। সেই সঙ্গে পুলিশের ধোঁয়াশা আরও বাড়িয়েছে মৃতের শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন না থাকা। শুধু মৃতের নাকের কাছে কিছুটা রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। তাঁকে যদি শ্বাসরোধ করেও খুন করা হয়ে থাকে, তা হলে ঘিঞ্জি বস্তিবাড়িতে আশপাশের লোকজন কিছুই শুনতে পেলেন না?

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে এক প্রতিবেশীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ওই পরিবারের অনেক গল্প রয়েছে। পুলিশ সবটা খুঁজে বার করুক। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” পরিবারের কী গল্প? রাত পর্যন্ত অবশ্য এই প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Tangra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy