Advertisement
E-Paper

Data Security: অনলাইনে তথ্য বিক্রিই চিন্তায় রাখল তথ্য সুরক্ষা দিবসেও

তদন্তে দেখা যায়, প্রায় ছ’মাস আগেই ‘ক্লোনিং অ্যাপের’ মাধ্যমে ফোনের সমস্ত তথ্য চলে গিয়েছিল হ্যাকারদের হাতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৪
Share
Save

কলকাতার এক অধ্যাপিকার মোবাইল ফোনে যে কী সমস্যা হয়েছিল, বুঝে ওঠা যাচ্ছিল না। যখন তখন আলো জ্বলে উঠত স্ক্রিনে। আচমকা বেজেও উঠত ফোন। বাড়ির সকলে ভেবেছিলেন, ফোন বিগড়েছে। সম্প্রতি ওই ফোনেই ফোন করে কথাবার্তার ফাঁকে অধ্যাপিকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় এক লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

তদন্তে দেখা যায়, প্রায় ছ’মাস আগেই ‘ক্লোনিং অ্যাপের’ মাধ্যমে ফোনের সমস্ত তথ্য চলে গিয়েছিল হ্যাকারদের হাতে। ফোনের অদ্ভুত আচরণ ছিল সে কারণেই! কিন্তু ফোনের দখল পেয়ে গেলেও এত দিন পরে কেন টাকা লোপাট হল? কারণ, মাস ছয়েক আগে এই ফোনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটিতে বেশি টাকা ছিল না। যখনই টাকা ঢুকেছে, তখনই ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে প্রতারক। এমনটাই জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে তথ্য জেনে এমন প্রতারণার অভিযোগ উঠছে হামেশাই। গত কয়েক মাসে রোজ যত সংখ্যক এমন অভিযোগ পাচ্ছে পুলিশ, তাতে চিন্তার ভাঁজ তদন্তকারীদের কপালে। ধরপাকড়ের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই শুক্রবার ‘তথ্য সুরক্ষা দিবসে’ এ নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করছেন তাঁরা। সাইবার বিশেষজ্ঞ থেকে পুলিশের বড় কর্তারা বলছেন, ‘‘কোনও একটি দিন নয়। প্রতি মুহূর্তে, প্রতিদিন এ নিয়ে সতর্ক থাকতে পারলেই প্রতারকদের আটকানো সম্ভব।’’

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, পুরনো কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন বিক্রি করার আগে তাতে থাকা সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত, পথেঘাটে বিভিন্ন সংস্থা পথচারীদের দিয়ে ফর্ম পূরণ করায়। অনেক সময়েই সেখানে নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর লিখতে হয়। সেই তথ্য নিয়ে কী হয়, নাগরিকেরা বেশির ভাগই ভাবেন না। সেখানে সচেতনতা দরকার। তৃতীয়ত, ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য ডিজিটাল বাজারে বিক্রি হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই সংক্রান্ত তথ্য কোথাও সেভ করে রাখা যাবে না। কয়েক দিন অন্তর বদলাতেই হবে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত আইডি এবং পাসওয়ার্ড।

সতর্ক করতে সাইবার বিশেষজ্ঞ ঋত্বিক লাল বললেন, ‘‘অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করার ওয়েবসাইটে নিজের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড যুক্ত করে রাখি। এক বার যুক্ত হয়ে গেলে পরের বার থেকে শুধু সিভিভি নম্বর বা ওটিপি বসালেই হয়ে যায়। কিছু ওয়েবসাইটে আবার আঙুল ছোঁয়ালেই পেমেন্ট হয়ে যায়। কিন্তু ওই সব ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হলে ক্রেতার কার্ডের তথ্য কি গোপন থাকবে?’’ ঋত্বিক আরও জানান, অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট পণ্য দেখে আসার পরে কেউ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের দেওয়াল জুড়ে সেই পণ্যেরই একাধিক বিজ্ঞাপন পান। ওই সাইবার বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, অনলাইন কেনাকাটার সাইটগুলি বহুল ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের পিক্সল কোড বা ট্র্যাকিং কোড দিয়ে রাখে নিজের ওয়েবসাইটের সঙ্গে। ফলে যে কোনও ব্যবহারকারীর তথ্য পায়
ওই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলি। পরে ওই ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকলে তাঁকে ওই সংক্রান্ত পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে থাকাকালীন বার বার ওই পণ্যের ছবি দেখে কেউ হয়তো দ্রুত কিনেও ফেলতে পারেন। সেটাই থাকে সংস্থার লক্ষ্য। এর মধ্যে দু’ধরনের ওয়েবসাইটেরই ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত। ঋত্বিকের কথায়, ‘‘আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়ে সব সুরক্ষিত দেখানো হলেও এমন ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার হয়ে যাওয়াই প্রশ্ন তোলে, গোপন তথ্য আদৌ কতটা সুরক্ষিত?’’

তা হলে উপায়? সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে যেখানে ব্যবসা হয়, সেখানে তথ্যের সুরক্ষা কখনওই থাকতে পারে না। ব্যক্তিগত তথ্যই ভোট বাজারেও বিক্রি হতে দেখা যায়। এই পরিস্থিতি বদলাতে দ্রুত ‘ডেটা প্রোটেকশন বিল’ এ দেশে পাস হওয়া দরকার। আর যত দিন তা না হচ্ছে, নিজেদের সতর্ক থাকা ছাড়া উপায় নেই।’’

Data Security Cyber Crime

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}