গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে যাওয়ার পরের পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।
পাঁচটি বাড়ি এমন রয়েছে, যেগুলি ভেঙে ফেলতে হবে এখনই। এ ছাড়া, গোটা বরো এলাকায় দ্রুত ভেঙে ফেলা প্রয়োজন, এমন ৪০টি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছে। গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে সপ্তাহখানেক না পেরোতেই সামনে এসেছে এমন সব তথ্য। শুধু তা-ই নয়, জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় কোনও নিয়ম না মেনে নির্মিত বহুতলের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি। যা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, পুরসভার তদন্তকারী দল এবং কলকাতা পুলিশ এখন তদন্তে নামার পরে কেন এই তথ্য সামনে আসছে? আগেই কেন এ সব চোখে পড়েনি প্রশাসনের? এ-ও প্রশ্ন উঠছে, এমন নির্মাণ দিনের পর দিন চললেও কেউই কি কিছু জানতেন না?
এলাকাটি পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর অন্তর্গত। বুধবার বরো চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভায় একটি কাজে ব্যস্ত রয়েছি। পরে উত্তর দেব।’’ যদিও পরে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেয়র ফিরহাদ হাকিম যদিও বললেন, ‘‘কার গাফিলতিতে এমনটা হয়েছে, তা খুঁজতেই তো পুরসভা তদন্তকারী দল গঠন করেছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-নগরপাল (অপরাধ) ওয়াসিম রাজার মন্তব্য, ‘‘থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। পুরসভা চাইলেই তারা ভাঙার কাজ শুরু করতে পারে।’’
গত ১৭ মার্চ গার্ডেনরিচের ফতেপুরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল। প্রায় চার দিন ধরে ওই বহুতলের নীচে আটকে ছিলেন লোকজন। শেষ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর সামনে আসে। এই ঘটনায় পুর প্রশাসনের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়। পরিস্থিতি বুঝে এর পরে পুরসভার যুগ্ম মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরসভা। তাতে ডিজি (সিভিল), সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের চিফ ইঞ্জিনিয়ার, চিফ ইঞ্জিনিয়ার (রাস্তা), এক জন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, এক জন জিয়োটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং স্থপতিকে রাখা হয়। ওই কমিটিরই রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা পুরসভায়।
জানা গিয়েছে, ফতেপুরে যেখানে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে গিয়েছিল পুরসভার এই তদন্ত কমিটি। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা। ওই কমিটিরই এক সদস্যের কথায়, ‘‘কোনও রকম নিয়ম না মেনেই ওই এলাকায় একের পর এক বহুতল তৈরি হয়েছে। নির্মাণের আগে জমি প্রস্তুত করে নেওয়ার মতো দায়িত্ববোধও দেখা যায়নি কাজের ক্ষেত্রে। যে ভাবে একটি বহুতলের কার্যত ঘাড়ের উপরে আর একটি বহুতল উঠেছে, তাতে বেশি দিন কোনওটিরই টেকার সম্ভাবনা নেই।’’ তবে কি ফের কোনও বহুতলের ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? তদন্ত কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘পাঁচটি বহুতল ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে, কালবিলম্ব না করে সেগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবার থেকে। এমন ৪০টি বহুতল এখনই চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলি কয়েক দিনের মধ্যেই ভেঙে ফেলা প্রয়োজন।’’ পুরসভায় এই রিপোর্টই জমা পড়তে চলেছে।
ওই এলাকা সূত্রের খবর, যে বহুতলটি ভেঙে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার ঠিক পাশের বহুতলটিই গত তিন দিনে সম্পূর্ণ ভাবে খালি করা হয়েছে। সেটিই ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। বহুতল বিপর্যয়ের ঘটনায় মৃত আবদুল রউফ নিজামি ওরফে শেরুর ভাই মহম্মদ ফারুক নিজামি বললেন, ‘‘ওই বহুতলের বাসিন্দাদের পুরপ্রতিনিধির তরফে স্কুলে, কমিউনিটি হলে নিয়ে গিয়ে ভাগ ভাগ করে রাখা হয়েছে। কবে ওঁরা মাথার ছাদ ফিরে পাবেন, কেউ জানেন না। তবে, এই ভাবে বাড়ি ফাঁকা করিয়ে আরও আগে বেআইনি কাজ বন্ধ করা হলে অনেকের মৃত্যু আটকানো যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy