কাদাপাড়া মোড়ে নিয়ম না মেনে রাস্তা পেরোনোর ছবি। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য ও বিশ্বনাথ বণিক
বেলা সাড়ে ১২টা, উল্টোডাঙা হাডকো মোড়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মাঝবয়সি এক ব্যক্তি। সিগন্যাল লাল হতে তাঁরা হেঁটেই রাস্তা পার হলেন। কিন্তু ব্যবহার করলেন না একটু দূরে থাকা ফুট ওভারব্রিজ।
দুপুর দেড়টা। ই এম বাইপাস পার হয়ে হেঁটেই বেলেঘাটার দিক থেকে সল্টলেকের দিকে চলে গেলেন মধ্যবয়স্ক এক জন। অথচ ওই জায়গাতেই রয়েছে আন্ডারপাস। যেখানে এসক্যালেটরও রয়েছে।
দুপুর আড়াইটে, রাসবিহারী মোড়ে সিগন্যাল সবুজ থাকা সত্ত্বেও বিপদের তোয়াক্কা না করেই রাস্তা পার হয়ে গেলেন এক মধ্যবয়স্ক পথচারী।
সোমবার দিনের বিভিন্ন সময়ে বিপজ্জনক রাস্তা পারাপারের এমনই টুকরো টুকরো ছবি ধরা পড়ল শহরের নানা প্রান্তে। উল্টোডাঙা, রুবি মোড়, সায়েন্স সিটি, কালীঘাট, রাসবিহারী, শিয়ালদহ-সহ শহরের উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়েছে পথ নিরাপত্তার ঢিলেঢালা ছবিই। কোথাও দেখা গেল ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ থাকাকালীন রাস্তা পারাপার, কোথাও ধরা পড়ল আন্ডারপাস থাকা সত্ত্বেও পায়ে হেঁটেই রাস্তা পারাপারের ছবি।
রাস্তায় পথচারীদের পারাপার নিয়ন্ত্রণ করতে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ চালু করেছে ‘বুম ব্যারিয়ার’। কিন্তু এ দিন বাইপাসের
চিংড়িঘাটা মোড়ে দেখা গেল সেই যন্ত্র ভেঙে পড়ে রয়েছে। গার্ডরেল দিয়ে পথচারীদের আটকানোর চেষ্টা চলছে। তিন বছর আগে ওই জায়গাতেই সিগন্যাল খেয়াল না করে রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই পড়ুয়ার। তার পরে ওই অঞ্চলে রাস্তা পারাপার নিয়ে নানাবিধ কড়াকড়ি করেছিল পুলিশ।
ট্র্যাফিক আইন বলছে, ফুট ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহার না করার ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। উল্টোডাঙায় এ দিন নিয়মভাঙা পথচারীকে জরিমানা করতেও দেখা গেল ট্র্যাফিক পুলিশকে। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, এমনটা সব সময়ে হয় না। যার জেরে সর্বত্রই চলছে ট্র্যাফিক আইন ভাঙা। অবশ্য পথচারীদের দাবি, এর জন্য সচেতনতা এবং প্রচার আরও জোরালো হওয়া প্রয়োজন। তবে পথচারীদের অনেকেরই যুক্তি পায়ে ব্যথা কিংবা অন্য শারীরিক সমস্যার কারণে উঁচু ফুট ওভারব্রিজে উঠতে সমস্যা হয়।
হাডকো মোড়ে মেয়েকে নিয়ে দাঁড়ানো সেই ব্যক্তির কাছে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে তাঁর উত্তর ‘‘মেয়েকে নিয়ে একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে গেলে একটু ঘুরতে হয়। দেরি হয়ে যাবে।’’
জরিমানা করতে করতেই উল্টোডাঙা মোড়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘‘ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করলে জরিমানা করা হয় প্রায়ই। তা সত্ত্বেও মানুষ সচেতন নন।’’ বাইপাসের বিল্ডিং মোড়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের আবার দাবি, ‘‘আন্ডারপাস ব্যবহার না করার জন্য জরিমানা করতে গেলেই আমাদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন পথচারীরা।’’
রুবি মোড়ে গিয়ে দেখা গেল ‘বুম ব্যারিয়ার’ উঁচু করেই রাখা। কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্টের কথায়, ‘‘সব সময়ে বুম বেরিয়ারের কাছে পুলিশকর্মী থাকেন না। সকালে অফিস টাইমে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে বুম ব্যারিয়ারের সাহায্যে পথচারীদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।’’
শিয়ালদহে দেখা গেল পুলিশকর্মীরা গাড়ি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকার সুযোগে ইচ্ছেমতো রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা।
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘ট্র্যাফিক আইন না মেনে রাস্তা পেরোনো অপরাধ। সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি আইনকে সম্মান না করার প্রবণতাও এর জন্য দায়ী।’’ এই বিষয়ে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ডিসি অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে এর আগে এই বিষয়ে প্রচার চালানো হয়েছে। আগামী দিনেও এই কর্মসূচি চলবে। এমনকি জরিমানাও করা হয়।’’ তবে ফুট ওভারব্রিজের পরিকাঠামো আরও উন্নত করার কথা পুলিশ ভাবছে বলে তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy