ব্যবহার: ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছের কোন ডাল শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, চলছে তারই পরিদর্শন। বৃহস্পতিবার, জোকায়। নিজস্ব চিত্র
আমপানের তাণ্ডবে বাগানে ভেঙে পড়েছিল একের পর এক গাছ। গত এক মাস ধরে বাগানেই পড়ে রয়েছে আম, শিরীষ, মেহগনি, সেগুন, পাইন— আরও কত কী! কোনওটি ৬০ বছরের পুরনো, আবার কোনও গাছ সেঞ্চুরি পার করেছে। কিন্তু উপড়ে যাওয়া ওই গাছগুলির কাঠ দিয়ে কী করা হবে, তা চিন্তায় রেখেছিল জোকার গুরুসদয় মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে। গ্রামবাংলার যে সব হস্তশিল্পী কাঠ দিয়ে হরেকরকম জিনিস বানান, এ বার তাই তাঁদের বিনামূল্যে ওইসব গাছের ডাল দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষ। সেই পরিকল্পনামতো বাছাই করা গাছের ডাল কাটার কাজও শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার।
ওই সংগ্রহশালার কিউরেটর তথা সেক্রেটারি বিজনকুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁদের বাগানে ভেঙে পড়া গাছগুলি থেকে শিল্পীদের জন্য প্রয়োজনমতো ডাল কেটে নেওয়ার কাজ এ দিন থেকে শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে সংগ্রহশালায় ডেকে শিল্পীদের হাতে ওই কাঠ তুলে দেওয়া হবে। বিজনবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা এই কাঠ দিয়ে পুতুল, নানা রকম ঘর সাজানোর জিনিস বানাবেন। শিল্পীদের থেকে ওই সব সামগ্রী আমরা কিনে এখান থেকেই আবার বিক্রির ব্যবস্থা করব। এ ভাবে যেমন আমরা গ্রামবাংলার শিল্পীদের পাশে দাঁড়াচ্ছি, তেমনই বাংলার হস্তশিল্পকেও বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছি। এ ছাড়া ভেঙে পড়া গাছের পুনর্ব্যবহারও করা হচ্ছে।’’
জোকা এলাকায় কয়েক বিঘা জমি নিয়ে ব্রতচারী গ্রামেই রয়েছে গুরুসদয় সংগ্রহশালা। গ্রামে রয়েছে অজস্র বড় বড় গাছ ও পুকুর। বিজনবাবু জানান, আমপানের দিন ওই গ্রামের বাগানে অন্তত ৪০টি গাছ পড়ে গিয়েছে। তবে এগুলির মধ্যে যে সমস্ত গাছের ডাল দিয়ে শিল্পীরা কাঠের জিনিস তৈরি করেন, শুধুমাত্র সেই সব গাছের ডাল কাটার কাজ শুরু হয়েছে। মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান, মেদিনীপুরের হস্তশিল্পীদেরই এই কাঠ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষ।
কোন গাছের ডাল কতটা কাটা হবে, বৃহস্পতিবার সেই কাজেরই তত্ত্বাবধানে ছিলেন ভাস্কর গৌতম মোদক। তিনি বলেন, ‘‘যে যে গাছ পড়েছে, তার মধ্যে আম ও মেহগনি ওইসব শিল্পীদের কাজে বেশি লাগবে। তাই ওইসব গাছের ডালই মূলত আজ কাটা হচ্ছে।’’ গৌতমবাবু আরও জানান, শিল্পীদের হাতে ওই কাটা ডাল তুলে দেওয়ার আগে সেগুলিকে ভাল করে শুকিয়ে নেওয়া হবে। পুতুলনাচের জন্য উপযোগী পুতুল, ঘর সাজানোর জিনিস কাঠের প্লেট, মোবাইল স্ট্যান্ড, নানারকম কারুকার্যময় কাঠের মুখোশ প্রভৃতি এই কাঠ দিয়ে শিল্পীরা তৈরি করতে পারবেন বলে জানাচ্ছেন গৌতমবাবু।
তবে শুধু গাছের ডাল বিতরণই নয়, সংগ্রহশালার ওই বাগানে একটি ‘ট্রি ব্যাঙ্ক’ও তৈরি করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজনবাবু। আমপানে বাগানে যত গাছ পড়েছে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। শুধু সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষ নন, ওই বাগানে এসে গাছ লাগিয়ে যেতে পারবেন সাধারণ মানুষও। বিজনবাবুর কথায়, ‘‘শহরে অনেকের বাড়ির সামনেই হয়তো গাছ লাগানোর জায়গা নেই। তাঁরা চাইলে গাছের চারা এনে অনায়াসে এই বাগানে লাগাতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy