নড়বড়ে: প্রবল দুর্যোগের মুখেও এই বিপজ্জনক বাড়ি (ইনসেটে পুরসভার বোর্ড) থেকে সরতে রাজি হননি বাসিন্দারা। মহাত্মা গাঁধী রোডে। নিজস্ব চিত্র
বিপজ্জনক বাড়িটি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে পুর কোঅর্ডিনেটর গেলেও কাজ হয়নি। পরে যায় পুলিশও। কিন্তু বাড়ির লোকজনের সাফ কথা, “ঝড়ে কিছুই হবে না। করোনার মধ্যে বাড়ি ছাড়ব না। যেখানে রাখবেন বলছেন, সেখানে যে করোনা নেই তা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন?” দূরত্ব-বিধি মেনেই যে পরিবারগুলিকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা বারবার জানানোর পরেও বাড়ি ছাড়তে নারাজ ওই বাসিন্দারা।
শোভাবাজারে কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এই ঘটনা অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। ফণী, বুলবুলের পরে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমপানের মুখোমুখি হয়েও বু্ধবার নিজেদের বিপজ্জনক বাড়িকে ছাড়তে চাইলেন না অনেকেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডের পুর কোঅর্ডিনেটরদের দাবি, “এখন করোনা অজুহাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে করোনার ভয় যখন ছিল না, তখনও এই সব বাড়ি ফাঁকা হয়নি। পুরসভার ৪১২(এ) ধারা পাশ করেও লাভ হয়নি।”
২০১৬ সালে একটি বিপজ্জনক বাড়ির বেহাল দশার কথা জানাতে স্থানীয় পুর প্রতিনিধির দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাসিন্দারা। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িটির একাংশ ভেঙে মৃত্যু হয় দু’জনের। এর পরেই পাশ হয় পুর আইন ৪১২(এ)। এতে বিপজ্জনক বাড়ি ঘোষণা করে পাঠানো নোটিসকে ‘কনডেমড’ নোটিস বলে ধরা হয়। ওই পুর আইনে বলা হয়, বিপজ্জনক বাড়িটির মালিককে বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে। সে জন্য ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’ বা এফএআরের ক্ষেত্রে ছাড়ও দেওয়া হবে। এ-ও বলা হয়, বাড়ির মালিক ওই কাজ না করতে পারলে ভাড়াটেরা, এবং তাঁরাও না পারলে সংস্থা লাগিয়ে সেই কাজ করে দেবে পুরসভাই। কিন্তু এর পরেও শহরের একাধিক বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে পুরসভার চিন্তা কাটেনি। আমপানের মুখে শহরের এমনই ১০০টি বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে এখন ঘুম ছুটেছে পুর কর্তৃপক্ষের। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “বিপজ্জনক বাড়ি অনেক রয়েছে। তার মধ্যে ১০০টি বাড়ির অবস্থা চিন্তায় ফেলেছে। সেগুলির অনেকেই বাড়ি ছেড়ে বেরোতে চাইছেন না।”
২০১৭ সালের জুলাইয়ে তালতলার ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে এক কিশোরী-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়। পাশের একটি পাঁচতলা বাড়ি হেলে পড়ে পাশের বাড়ির গায়ে। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, হেলে পড়া সেই বিপজ্জনক বাড়িতে এখনও ১২টি পরিবারের বাস। গত তিন বছরেও ওই বাড়ি ফাঁকা করিয়ে সংস্কারের কাজ করানো যায়নি। বাড়িটির এক বাসিন্দা বিকি সোনকার বললেন, “কত ঝড়ই তো দেখলাম! কিছু হওয়ার হলে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতাম না। চিন্তা করবেন না, বরং করোনা নিয়ে ভাবুন।” গত বছর এপ্রিলে আমহার্স্ট স্ট্রিটের কাছে বিপ্লবী পুলিন দাস স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। এখনও সেখানেই থাকে আটটি ভাড়াটে পরিবার। ভেঙে পড়া অংশেই দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ি তৈরি হয়েছে, কিন্তু বাড়ির সংস্কার হয়নি। যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ডের কাছের একটি পুরনো বাড়ির মালিকের আবার দাবি, “এখনই বেরোচ্ছি না। তবে মাস্ক, পোশাক, জরুরি কাগজপত্র গুছিয়ে রেখেছি। দরকার হলেই বেরিয়ে যাব।”
মহাত্মা গাঁধী রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ মোড় থেকে হাওড়ার দিকে যাওয়ার রাস্তার পাশে একটি চারতলা বিপজ্জনক বাড়ির এমনই অবস্থা যে, দেওয়াল ফেটে নেমেছে গাছের ঝুরি। ভেঙে পড়া সিঁড়ি পেরোতে হয় লাফিয়ে। বিপজ্জনক বোর্ড ঝোলানো বাড়ির ভিতরেই। সেখানেও প্রতি তলে তিন-চারটি করে পরিবার থাকে। সেখানকার এক বাসিন্দা বললেন, “এক বার উঠে গেলে আর জায়গা পাওয়া যাবে না।”
২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুর কোঅর্ডিনেটর ইলোরা সাহাকে একই ভয়ের কথা বলেছেন ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের সেই বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দারাও। শেষে কোনও মতে বাড়ি ছাড়তে রাজি হওয়া এক বাসিন্দা দীপক সাইনি বললেন, “ঝড় কমুক বা না-কমুক, কাল ফিরবই। বাইরে থাকলে ভাড়ার ঘর হাতছাড়া হয়ে যাবে।” কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অতীন ঘোষ যদিও বলছেন, “বাস্তুহারা হওয়ার ভয় নেই, পুরনো জায়গাতেই ফেরানো হবে সকলকে। আপাতত বিপদটা বুঝুন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy