ভোগান্তি: নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। বেহালায় পথে নেমে বিক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র
আমপান যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেই পূর্বাভাস বেশ কয়েক দিন আগেই দিয়ে রেখেছিলেন আবহবিদেরা। তাই প্রস্তুতির সময় পাওয়া যায়নি, এমন অজুহাত দিতে পারবেন না কলকাতা পুরসভার কর্তারা। ঝড় আসার আগে তাঁরা দাবি করেছিলেন, বিপর্যয় মোকাবিলায় পুরসভা প্রস্তুত। কিন্তু ঝড় চলে যাওয়ার পরে শহরবাসী দেখলেন সেই প্রস্তুতির নমুনা! ৪৮ ঘণ্টা পরেও শহরের বহু এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি এখনও। নেই পানীয় জল। ভেঙে পড়া গাছে এখনও আটকে আছে বহু রাস্তা। সমস্যার কথা জানাতে পুরসভার অফিসার বা সিইএসসি-কে ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরছেন না বলে অভিযোগ। এই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, আমপানের পরে প্রশাসন কি ‘অথর্ব’ হয়ে পড়েছে?
বিপর্যয় সামলাতে কলকাতা পুরসভা আদৌ প্রস্তুত ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আমপানের পরে গত ৪৮ ঘণ্টায় পুরসভার ভূমিকা দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন শহরের বহু এলাকার বাসিন্দারা। দুর্ভোগ চলতে থাকায় শুক্রবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন নাগরিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ঘরে বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, গাছ পড়ে আটকে রাস্তা। কাউকে তো ফোনেও পাচ্ছি না। তাই করোনার ভয় উপেক্ষা করেই প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামতে হয়েছে।’’ ওই বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, পুর প্রশাসন কেন পরিস্থিতির মোকাবিলায় এত ধীর গতিতে কাজ করছে?
কেন ৪৮ ঘণ্টা ধরে কলকাতার মতো শহরের বাসিন্দাদের বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটাতে হবে? সব জেনেও কেন প্রস্তুত ছিল না পুরসভা?
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য এবং পার্ক ও উদ্যান দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবাশিস কুমারের সাফাই, ‘‘আমাদের যে পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছ’-সাত হাজার গাছ সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। তার উপরে অনেক গাছ এত বড় যে, বিদ্যুতের তার সরিয়ে কাটতে অনেক সময় লাগছে।’’ তিনি জানান, এই ধরনের কাজের জন্য পুরসভার ২০টির মতো ‘গ্যাং’ আছে। করাত, স্বয়ংক্রিয় করাত, মই, ক্রেন— সবই রয়েছে সেই পরিমাণে। প্রতিটি ‘গ্যাং’ই কাজে নেমেছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে প্রচুর গাছ ভেঙে পড়েছে। তাই গাছ কাটার দলের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে পুরসভাকে।’’ এর জবাবে পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে লোকবল বাড়ানোর ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। এই ধরনের কাজে অভিজ্ঞ লোকজন পাওয়া কঠিন। এঁদের বাইরে থেকে আনা হয়। এখন করোনার সময়ে কেউ আসছেন না।’’
এ দিকে, বিদ্যুৎ না-থাকা নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে পুরসভা ও সিইএসসি-র। দু’পক্ষই একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছে। শুক্রবার কসবা, অজয়নগর, যাদবপুর, ট্যাংরা, বেলগাছিয়া-সহ বহু এলাকায় বিদ্যুৎ ও জল না-পেয়ে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। কসবার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর হাত তুলে দিয়েছেন। বলেছেন, তাঁর কিছু করার নেই।’’ ১২ নম্বর বরো এলাকার এক ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর বললেন, ‘‘অফিসারেরা ফোন ধরছেন না। সিইএসসি-ও ফোন ধরছে না। সব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে আমাদের।’’
সিইএসসি-র এক আধিকারিক জানান, গাছ কাটা না হলে বিদ্যুতের তার লাগানো যাবে না। পুরসভা এবং সিইএসসি-কে নিয়ে এ দিন বৈঠক করেছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। সিইএসসি-র সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎমন্ত্রীও।
বেলগাছিয়ার একটি আবাসনের নীচের কল থেকে পানীয় জল নিতে লাইন বাসিন্দাদের। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পুরসভার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে সাফাই দিতে গিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘এত বড় বিপর্যয়। আমরা তো ম্যাজিক জানি না। সব কিছু স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। ওড়িশায় ফণীর পরে সব স্বাভাবিক হতে দেড় মাস লেগেছিল। আমরা সাত দিন সময় চাইছি। জানি, মানুষের খুব দুর্ভোগ হচ্ছে। পুর প্রশাসন শহরবাসীর পাশেই আছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গাছ কাটার শ্রমিকের অভাব রয়েছে। তাঁরা জেলায় থাকেন। আসছেন না।’’ ফিরহাদ জানান, বড় রাস্তা থেকে গাছ কাটা ও সরানোর কাজ করবে এনডিআরএফ বাহিনী।
মাঝারি ও ছোট রাস্তায় কাজ করবে পুরসভার দল। গাছ কাটার জন্য আরও ১০০টি বৈদ্যুতিক করাত কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুর, বেহালা ও টালিগঞ্জের মতো এলাকায় যেখানে ওভারহেড বিদ্যুতের তার গিয়েছে, সেখানে গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ বিপর্যয় বেশি হয়েছে। আমি সিইএসসি-কে বলেছি, পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক করার ব্যবস্থা করুন। শহরের যেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, সেখানে আজ শুক্রবার এবং কাল শনিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দিতে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy