থরে থরে: জল নেমে যাওয়ার পরে ফুটপাতেই চলছে বই শুকোনো। শুক্রবার, কলেজ স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র
নতুন শিক্ষাবর্ষের আগে ছাপানো হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যপুস্তক। করোনা সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন চালু হওয়ার জেরে সেই বই আর হাতে পায়নি পড়ুয়ারা। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় বহু দোকানে, প্রেসে এবং গুদামে অন্য বইয়ের সঙ্গে মজুত করা ছিল পাঠ্যপুস্তকও। আমপানের তাণ্ডবে নষ্ট হয়ে গেল এমন অংসখ্য বই। কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে বইপাড়া।
কলেজ স্ট্রিটের বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশকেরা জানাচ্ছেন, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তাঁরা আগে দেখেননি। সব মিলিয়ে যত টাকার বই নষ্ট হয়েছে তার পুরো আন্দাজ এখনও পাওয়া যায়নি। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে বৃষ্টির তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে দোকানগুলির শাটারের ভিতর দিয়ে, দরজার ভিতর দিয়ে, জানলার ফাঁক দিয়ে জল ঢুকে যায়।’’ ত্রিদিববাবু জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছিলই। আমপান সেই ক্ষতি বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বহু বই ব্যবসায়ী হয়তো আর ঘুরে দাঁড়াতেই পারবেন না। তাই কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার ব্যবসায়ীরা আর্থিক সাহায্য চেয়ে শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চিঠি লিখেছেন। ত্রিদিববাবু জানিয়েছেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় পৃথিবীর বহু দেশ অংশগ্রহণ করে। সে সব দেশের মানুষ, প্রকাশকদের এবং বিশিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বইপাড়ার তরফ থেকে তাঁরা সাহায্যের আবেদন করবেন। আমপানের কথা জানতে পেরে ইতিমধ্যেই কয়েক জন বিদেশ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান ত্রিদিববাবু।
লকডাউনের জন্য এখন বইপাড়া বন্ধ থাকায় আমপানে ক্ষতি আরও বেশি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন কয়েক জন প্রকাশক। বুলবুল ইসলাম নামে এক প্রকাশক জানান, যাঁদের দূরে বাড়ি, তাঁরা অনেকেই
লকডাউনের জন্য বাড়ি চলে গিয়েছেন। তাই ঝড়ের পরে কলেজ স্ট্রিট আসতেও পারেননি তাঁরা। দেরি হওয়ার কারণে ভেজা বই উদ্ধার করার যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, সেটুকুও নষ্ট হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের পরে যাঁরা দোকানে পৌঁছতে পেরেছেন, তাঁরা বই শুকোনোর চেষ্টা করছেন। এক বই ব্যবসায়ী জানান, ভেজা বই শুকোলেও বিক্রি হবে না। তবু তাঁরা শুকোচ্ছেন এই আশায় যে
ক্ষতিগ্রস্ত বই অন্তত কেজি দরে বিক্রি করা যাবে।
পাঠ্যবইয়ের এক প্রকাশক দোলগোবিন্দ পাত্র জানান, লকডাউনের জন্য এত দিন তাঁরা কলেজ স্ট্রিটে আসতে পারেননি। ঘূর্ণিঝড়ের পরে বইপাড়ায় এসে দোকানের অবস্থা দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ভেজা বই দোকানের শাটারের সঙ্গে লেগে এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে অনেকে শাটারও খুলতে পারেননি। শাটার ভাঙতে হচ্ছে। দোলগোবিন্দবাবু বলেন, ‘‘কত পড়ার বই যে নষ্ট হয়ে গেল! এমনিতেই এই বছর পড়ুয়াদের হাতে বই নেই। আমপানের পরে ওদের কাছে বই পৌঁছনো আরও কঠিন হয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy