Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অরক্ষিত তথ্যের ফাঁকে বাড়ছে সাইবার অপরাধ

হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সদর) অজিত সিংহ যাদব অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই চিকিৎসক চাইলে সাইবার শাখায় আসতেই পারেন। শিবপুর থানার সঙ্গে কথা বলে দেখছি যে, কী সমস্যা হয়েছে!’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৪৫
Share: Save:

‘এসকর্ট সার্ভিস দেওয়া হয়।’ এ কথা জানানোর পাশাপাশি একটি নম্বর উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘এই নম্বরে যোগাযোগ করুন।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন মেসেজ তো কতই আসে! প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি সরকারি হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য। তবে তাঁর ভুল ভাঙে এই দেখে যে, নম্বরটি তাঁর নিজেরই! কয়েক মাস আগেও তিনি ওই নম্বরটিই ব্যবহার করতেন।

সতর্ক করে সোশ্যাল মিডিয়াতেই বিষয়টি নিয়ে তিনি পোস্ট দিতেই বন্ধু স্থানীয় বা পরিচিতদের মেসেজে উপচে পড়তে শুরু করে চিকিৎসকের ফোন। তাঁদের বেশির ভাগই জানান, ওই নম্বর-সহ একই বার্তা তাঁরাও পেয়েছেন। তবে বুঝতে পারেননি যে নম্বরটি জিষ্ণুবাবুর। এর পরেই হাওড়ার বাসিন্দা ওই চিকিৎসক শিবপুর থানায় যান। অভিযোগ, সেখান থেকে পুলিশের সাইবার শাখায় পাঠানোর বদলে একটি জেনারেল ডায়েরি নিয়ে তাঁকে বলা হয়, ‘‘আপনি তো কিছু করেননি! অত পাত্তা দিচ্ছেন কেন? ভুলে যান না!’’

হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সদর) অজিত সিংহ যাদব অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই চিকিৎসক চাইলে সাইবার শাখায় আসতেই পারেন। শিবপুর থানার সঙ্গে কথা বলে দেখছি যে, কী সমস্যা হয়েছে!’’ জিষ্ণুবাবু অবশ্য বললেন, ‘‘বিষয়টি কে বা কারা করেছেন সেটা জানতেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সরকারি চিকিৎসক হিসেবে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন আমায় সিউড়িতে থাকতে হয়। প্রতিদিন কী থানায় ঘোরা সম্ভব?’’

শুধু এই ঘটনাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বড় অংশেরই অভিযোগ, গোপন থাকছে না সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য। সঙ্গে উত্তরোত্তর বাড়ছে কারও ব্যক্তিগত নাম বা মোবাইল নম্বর দিয়ে ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করে সামাজিক পরিচিতি নিয়ে খেলা। কয়েক মাস আগেই এমন ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করার অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ উত্তর কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ। শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগ দায়েরের পরে বিষয়টি যায় লালবাজারের সাইবার শাখায়। তদন্তকারীরা দ্রুত ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে এক যুবককে চিহ্নিত করেন। তার ব্যবহৃত কম্পিউটরের ‘হার্ড-ডিস্ক’ বাজেয়াপ্ত করেন তাঁরা। বিষয়টি আপাতত আদালতে বিচারাধীন।

সাইবার বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, সামাজিক পরিচিতির দিক থেকে সামনের সারির কারও ছবি, নাম বা ঠিকানা ব্যবহার করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো প্রোফাইল তৈরির প্রবণতা এখন সব থেকে বেশি। লালবাজারের সাইবার শাখাও জানাচ্ছে, গত ছ’মাসে তাদের কাছে এই ধরনের যত অভিযোগ জমা পড়েছে, তার বেশির ভাগই কম বয়সি কোনও মহিলার, নয়তো সামাজিক পরিচিতি রয়েছে এমন কারও। কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার এক অফিসার বলেন, ‘‘কেউ হয়তো ভুয়ো প্রোফাইল ব্যবহার করে যৌন ব্যবসা শুরু করছেন, কেউ বা মাদক কারবার। এখনকার অপরাধের অন্যতম ধরন ডিজিটাল মাধ্যমে ভুয়ো প্রোফাইলের ফাঁদ। এমন কিছু বুঝলে দ্রুত অভিযোগ করুন।’’

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘হাওড়ার ঘটনায় কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে সাইবার বিভাগের কাজটা খুব সহজ। সাইবার শাখা অভিযোগ পেয়ে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল সাইটের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁরা পুলিশকে দুষ্কর্মে জড়িতের আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস দিয়ে দেয়। সেই আইপি অ্যাড্রেস নিয়ে টেলিকম সংস্থায় গেলে তারা পুলিশকে ব্যবহারকারীর ঠিকানা বলে দেয়। ব্যস, পুলিশ ধরে নিয়ে আসে।’’ তাঁর মতে, এই ভাবে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime Data Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE