প্রতীকী ছবি।
এক জনের বয়স ৮০, অন্য জনের ৭২। সুকিয়া স্ট্রিটের বাসিন্দা ওই প্রবীণ দম্পতির ছেলে থাকেন আমেরিকায়, মেয়ে স্পেনে। নিরাপত্তার কথা ভেবেই বাবা-মায়ের নাম তাঁরা লিখিয়েছিলেন বয়স্কদের জন্য তৈরি কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পে। কিন্তু সাইবার-প্রতারণার শিকার হয়ে সুরাহার আশায় তাঁদেরই ছুটে বেড়াতে হচ্ছে থানা থেকে থানায়। কারণ, একটি ই-কমার্স সংস্থা থেকে কেনা ব্যাগ ছেঁড়া বেরোনোয় তা বদলাতে গিয়েই তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই প্রবীণ দম্পতির দাবি, ‘‘প্রণামের সদস্য হয়েও সাহায্য মিলছে না। এই বয়সে কি থানায় থানায় ছুটে বেড়ানো সম্ভব?’’
ঘটনার সূত্রপাত গত ৯ এপ্রিল। একটি ই-কমার্স সংস্থার ওয়েবসাইটে ১০০ টাকা দামের একটি ব্যাগের বরাত দিয়েছিলেন বছর বাহাত্তরের রীনা সান্যাল। ওই দিনই ব্যাগটি হাতে পান তিনি। কিন্তু দেখা যায়, সেটি ছেঁড়া। তাই ব্যাগটি বদলে দিতে ওই ই-কমার্স সাইটেই গত ১২ এপ্রিল আবেদন জানান রীনাদেবী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই ই-কমার্স সংস্থার হেল্প ডেস্ক থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে দাবি করে ফোন আসে তাঁর কাছে। অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি মহিলাকে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে। তিনি নিজে সড়গড় না হওয়ায় স্বামীকে ফোনটি ধরিয়ে দেন রীনাদেবী।
৮০ বছরের প্রণবকুমার সান্যাল অ্যাপটি ডাউনলোড করেন। এর পরে তাঁকে বলা হয়, যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেটির অ্যাপ খুলতে। এর পরে আইডি, পাসওয়ার্ড বসিয়ে প্রথমেই পে অপশনে গিয়ে ২০ হাজার সংখ্যায় লিখতে বলা হয় তাঁকে। একাধিক সংখ্যা লিখিয়ে অ্যাপের মাধ্যমেই হাতিয়ে নেওয়া হয় ৪৪ হাজার টাকা। পরে ওই বৃদ্ধের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁর আর কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে কি না। এই পদ্ধতিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি, মোবাইলে আসা টাকা তোলার মেসেজগুলিও বৃদ্ধকে দিয়ে ডিলিট করানো হয়। বলা হয়, ওই মেসেজ থাকলে ১০০ টাকা ফেরত যাওয়ার মেসেজটাই ফোনে ঢুকবে না।
দেরিতে হলেও জালিয়াতির বিষয়টি বোঝার পরেই দ্রুত ব্যাঙ্কে যান বৃদ্ধ। সেখানে টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনার কথা জানান তিনি। পরে যান নারকেলডাঙা থানায়। অভিযোগ জানানোয় এফআইআর দায়ের করা হলেও বৃদ্ধকে ডিসি অফিসে গিয়ে সাইবার শাখায় অভিযোগ জানাতে বলা হয়। গত ১৩ এপ্রিল অভিযোগ জানানোর পরে ১৭ দিন কেটে গেলেও এখনও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ। প্রণববাবু বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়ে এখানে নেই। আমরা বুড়োবুড়ি কোথায় ছুটব? আমরা প্রণাম প্রকল্পের সদস্য। সেই সূত্রে ভেবেছিলাম, হয়তো কম ছোটাছুটি করতে হবে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মতো বয়স্কদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু কোথায় কী? কত একা বয়স্ক মানুষ এমন প্রতারকদের খপ্পরে পড়ছে। পুলিশ তাঁদের নিয়ে আলাদা করে কী ভাবছে?’’ লালবাজারে ‘প্রণাম’ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘ওঁদের ছোটাছুটির দরকার নেই। বিষয়টি দ্রুত দেখতে বলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy