উদ্ধারের সময়ে খাঁচাবন্দি সেই সিংহ শাবক। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
ঘুমপাড়ানি ওষুধ দিয়ে ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাকে। শোরগোলের মধ্যে সে যখন চোখ মেলেছিল, তখন তাকে ঘিরে অনেক মানুষ। কিছুতেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিল না সে। কিছু বোঝার আগেই তার ঠাঁই হয়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানায়। সেখান থেকে চিড়িয়াখানার হাসপাতালে। গত মে মাসে আন্তর্জাতিক পশুপাচার চক্রের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া ওই সিংহ শাবকের আস্তানা তার পর থেকে হাসপাতালই। সেখানে সে এখন অনায়াস, চটপটে, দামাল!
চিড়িয়াখানার কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সিংহ শাবকটির অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার পথটা মসৃণ ছিল না মোটেই। গত ৩১ মে গভীর রাতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাছে একটি গাড়ি থেকে বন দফতরের আধিকারিকেরা তিনটি বিরল প্রজাতির বাঁদর-সহ ওই সিংহ শাবকটিকে উদ্ধার না করলে সে এত দিনে কোথায় থাকত, তার উত্তর জানা নেই কারও। সেই অনিশ্চয়তা, ছোট্ট শরীরে ঘুমপাড়ানি ওষুধের প্রভাব— সব কিছুই গভীর ভাবে ছাপ ফেলেছিল ওই সিংহশাবকের চোখে-মুখে। উদ্ধারের পরে প্রথম সপ্তাহখানেক সে কিছু মুখে তুলতে চায়নি। আড়ষ্ট, জড়োসড়ো হয়ে থাকত শাবকটি।
পশু বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পাচার হওয়া মানবশিশুদের মনে-শরীরে যেমন প্রভাব পড়ে, সিংহশাবকের ক্ষেত্রেও তার বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয়নি। শারীরিক অবস্থার কথা ভেবেই তাকে চিড়িয়াখানার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে শরীরে কোনও অসুখ বাসা বেঁধেছে কি না! আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘ডিহাইড্রেশন হয়ে গিয়েছিল ওর। আসলে পাচারের মতো ঘটনা মানবশিশুর উপরে যে ভাবে প্রভাব ফেলে, ওদের ক্ষেত্রেও তাই। জড়তা কাটাতে অনেক সময় লেগেছে।’’
কী ভাবে কাটল জড়তা?
চিড়িয়াখানার কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রথমে সিংহ শাবকটির গায়ে হাত বোলানো হত দীর্ঘ ক্ষণ ধরে। সেখানে কেউ তার ‘শত্রু’ নয়, সকলে
তাকে ভালবাসে— তেমন একটা আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করা হত। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘ট্রমা কাটাতে গেলে যা যা করা দরকার, আমরা সেটাই করেছিলাম। ওর আস্থা অর্জন করাটা খুব দরকার ছিল।’’
দীর্ঘ চেষ্টার পরে সে আস্থা অর্জনও করা গিয়েছে। তাই আপাতত হাসপাতালে তার জন্য যে বরাদ্দ খাঁচাটি রয়েছে, সেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাস পাঁচেকের
ওই সিংহ শাবক। মন ভাল হয়ে গিয়েছে, তাই খাবারেও তার এখন ভীষণ ঝোঁক। দেড় কিলোগ্রামের মতো মুরগির মাংস সে সাবাড় করে দিচ্ছে চোখের পলকে। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, আর কিছু দিন পরেই তাকে সিংহের খাঁচার ভিতরে একটি ঘরে এনে রাখা হবে। তবে দর্শকদের সামনে আনা হবে না। নতুন করে যাতে কোনও বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, সে কারণেই
এই ব্যবস্থা। এমনিতে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় উদ্ধার হওয়া পশুপাখিদের আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই রাখা হয়। পরবর্তী কালে যদি কোনও মামলা হয়, তখন আদালতের নির্দেশ মতো কাজ করা হয় বলে চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর।
সিংহ শাবকটির কোনও নাম দেওয়া হয়েছে কি?
‘‘নাহ্। নামটা এখনও দেওয়া হয়নি। পরে দেব নিশ্চয়ই।’’—হেসে জানালেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা।
অবশ্য নামে কী-ই বা এসে যায়! এই দুনিয়া তো জানে, সে-ই আসল ‘জুনিয়র লায়ন কিং’! ‘খুদে সিংহ রাজা’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy