Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪
Durga Puja 2024

‘লড়াইয়ের এই উৎসব জারি থাকবে’, ভিড়েও স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবের মেজাজে খামতি! শেষ লগ্নে রয়ে গেল বিষাদ

শনিবার সকাল থেকেই শহরের পথেঘাটে, মণ্ডপে মানুষের যাতায়াত শুরু হয়েছিল। বেলা যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে ভিড়ের দাপট। রাতে অনেক মণ্ডপেই বাঁধভাঙা স্রোতের মতো আছড়ে পড়েছে জনতার ঢল।

শনিবার রাতে মা দুর্গার আরাধনা এক মণ্ডপে।

শনিবার রাতে মা দুর্গার আরাধনা এক মণ্ডপে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৫৬
Share: Save:

উৎসব এবং প্রতিবাদের সহাবস্থান আগেও দেখেছিল মহানগরী। শনিবার দুর্গাপুজোর শেষ লগ্নে এসেও তা বজায় রাখলেন নাগরিকেরা। এ দিন মণ্ডপে-মণ্ডপে ভিড় যেমন ছিল, তেমনই প্রচুর মানুষ হাজির হয়েছিলেন ধর্মতলার অনশন মঞ্চে। তিথি মেনে এ দিনই বহু পারিবারিক পুজোর বিসর্জন হয়েছে। গঙ্গায় বিসর্জন সেরে অনেকেই অনশনস্থল ঘুরে গিয়েছেন। এক আন্দোলনকারী মাইক ধরে এ দিন বললেন, ‘‘অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে এই পুজো কী শক্তি জুগিয়ে গিয়েছিল, বহু বছর মনে থাকবে। আমাদের দেবীর বিসর্জন আগেই হয়ে গিয়েছে, লড়াইয়ের এই উৎসব জারি থাকবে।’’

শনিবার সকাল থেকেই শহরের পথেঘাটে, মণ্ডপে মানুষের যাতায়াত শুরু হয়েছিল। বেলা যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে ভিড়ের দাপট। রাতে অনেক মণ্ডপেই বাঁধভাঙা স্রোতের মতো আছড়ে পড়েছে জনতার ঢল। দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ কালচারালের পুজো উদ্যোক্তা অঞ্জন উকিল বলেন, ‘‘দুপুরের দিকে মূলত বয়স্ক এবং মাঝবয়সি দর্শনার্থীদের ভিড় হয়েছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত বাড়তেই তরুণ প্রজন্ম মণ্ডপের দখল নিয়েছে।’’ তবে এ বার ভিড়েও স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবের মেজাজে খামতি খুঁজে পেয়েছেন কয়েক জন পুজো কর্তা। উত্তর কলকাতার বাগবাজারের পুজো কর্তা গৌতম নিয়োগীর মন্তব্য, ‘‘আর জি কর থেকে আমাদের মণ্ডপ খুব কাছে। পুজো হল, ভিড়ও হল, কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন কিছু একটা খামতি ছিল এ বছর।’’

শিলিগুড়ির রাস্তাঘাট ছিল দর্শনার্থীদের দখলে। সর্বজনীন পুজোর বিসর্জন হয়নি বললেই চলে। হাতেগোনা কয়েকটি বিসর্জন হয়েছে। কোচবিহারের মণ্ডপগুলিতেও ভিড় উপচে পড়ে রাতে। একই ছবি মালদহেও। মুর্শিদাবাদে কিছু বাড়ির পুজোর বিসর্জন হয়েছে। এ দিকে, নদিয়ার কল্যাণী, রানাঘাট, ফুলিয়া ও কালীনারায়ণপুরে রাত যত গড়িয়েছে, উপচে পড়েছে মানুষের ঢল। পার্শ্ববর্তী পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকেও বহু দর্শনার্থীদের নদিয়ামুখী হতে দেখা গিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় দিনভর ভিড় কম হলেও রাতে ভিড় বেড়েছে। দক্ষিণে ডায়মন্ড হারবারে সন্ধ্যা থেকেই শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা দেখার ভিড় শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় নবমী-দশমীর ভিড় কেন্দ্রীভূত থাকল পুরস্কারপ্রাপ্ত পুজোগুলিতেই। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক সচল রাখতে হিমশিম খেয়েছেন পুলিশ-কর্মীরা। পূর্ব মেদিনীপুরেও তমলুক, মেচেদা, নন্দকুমার, হলদিয়া, কাঁথির বিভিন্ন মণ্ডপে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মণ্ডপে ভিড় উপচে পড়েছে ঝাড়গ্রাম শহরেও। বীরভূমের রামপুরহাট, সিউড়ি, বোলপুর মহকুমার বারোয়ারি পুজোগুলিতে এ দিনও মানুষের ঢল নেমেছে।

বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোলের নানা মণ্ডপে ভিড় হয়েছিল। মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য সামাল দিতে কড়া নজরদারি দেখা গিয়েছে পুলিশের। পুরুলিয়া, নিতুরিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর প্রভৃতি জায়গার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে এ দিনও ছিল তুমুল ভিড়।

কলকাতা এবং জেলার বহু পুজোতেই সকাল থেকে চোখে পড়েছে দেবীবরণ, মিষ্টিমুখ, সিঁদুর খেলা, দোলা বিসর্জনের মতো উপাচার। পুরুলিয়ার পঞ্চকোট রাজবাড়ির পুজোয় প্রতিমা নিরঞ্জনে দেখা যায় বিপুল ভিড়। সঙ্গে ছিল শোভাযাত্রাও। কিছু পারিবারিক পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে মহানন্দা, ফুলহার, টাঙন নদীতে।

পুলিশ এবং প্রশাসন সূত্রের খবর, বালুরঘাটে আত্রেয়ী, গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবা এবং বুনিয়াদপুরে টাঙ্গন মিলিয়ে এ দিন জেলার মোট ৩৮টি প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে। এ দিন দুই বর্ধমান জেলাতেই বিভিন্ন বাড়ির পুজোর ঘট বিসর্জন হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর,
সোমবার পুজো কার্নিভাল থাকার কারণে বড় পুজোর বির্সজন তার আগে হবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE