অতিথি: ইডেনে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট হাতে বাংলাদেশি সমর্থকদের নিজস্বী। সোমবার, মির্জা গালিব স্ট্রিটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কারও পরনে জাতীয় দলের জার্সি। কারও মাথায় জাতীয় দলের পতাকা স্কার্ফের মতো করে জড়ানো। কেউ আঙুলে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে জয়ের ইঙ্গিত করছেন। কারও মোবাইলে রিংটোন বাজছে, ‘আমার সোনার বাংলা।’ আজ, মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলা। তার আগে সোমবার সন্ধ্যায় মির্জা গালিব স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট-সহ আশপাশের এলাকা যেন ছোটখাটো ঢাকা।
বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে আজকের খেলা আরশিনগরে বসে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাপ নেওয়ার মতো। সাত বছর আগে টি ২০-এর পরে আবার পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্মুখ সমরে নামতে চলেছে। তার আগে সোমবার বিকেলে সদর স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিটের রাস্তায়, হোটেলে, দোকানে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমায়েত দেখা গেল। কলকাতা শহর সেই মুক্তিযুদ্ধের উত্তাপের আঁচ কতটা নিতে চাইছে, তা অবশ্য মঙ্গলবার দুপুরের আগে বোঝা কঠিন। কিন্তু এ দিন শহরে জড়ো হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের বক্তব্য, ‘‘শুধু একটা কাঁটাতারের তো তফাত। তার বাইরে সবটাই তো বাংলা। ভারত-পাকিস্তানের খেলায় আমরা ভারতের হয়ে গলা ফাটাই। তাই মঙ্গলবার কলকাতাও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের মর্যাদা রক্ষার জন্য দোয়া করবে।’’
কলকাতা তো পাশে থাকবেই। মুক্তিযুক্ত, শেখ মুজিব, ময়মনসিংহ গীতিকা, ভাষা আন্দোলন— কলকাতা কবে নিজেকে এ সব থেকে আলাদা করতে পেরেছে? প্রশ্ন মির্জা গালিব স্ট্রিটের একটি হোটেলের মালিক বীরেশ্বর মিত্রের। তাঁর কথায়, ‘‘সারা বছরই ঢাকা, খুলনা থেকে মানুষ আসেন। এখানে আসার পরে কেউ চিকিৎসা করতে ভেলোর যাচ্ছেন, কেউ পুণ্যের আশায় আজমের শরিফ। ভেটকি, বোয়ালের ঝাল খাচ্ছেন। ওঁরা আর বিদেশি কোথায়? সবাই বাঙালি। তাই কাল কলকাতাবাসীও বাংলাদেশের জয় চাইবেন।’’
গত শনিবার নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু আজকের খেলার তাৎপর্য অন্য রকম আপামর বাংলাদেশবাসীর কাছে। বুকের ভিতরে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আবেগ। গ্যালারিতে বসে ৫২ বছর আগের সেই স্মৃতি দলের খেলোয়াড়দের উদ্দেশে চিৎকার করে মনে করিয়ে দিতে চান, জানালেন ঢাকার তিতুমীর কলেজের ছাত্র খালেদ হোসেন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাস বাংলাদেশবাসীর মরমে গাঁথা। আর যার কাছে হোক, পাকিস্তানের কাছে হারা চলবে না। আশা করি খেলোয়াড়েরাও সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই নামবেন। কলকাতা তো আমাদের দ্বিতীয় ঘর।’’
খালেদের কলকাতায় যাতায়াত থাকলেও তাঁর সঙ্গে আসা খুলনার মহম্মদ দোলায়েন হোসেন, ময়মনসিংহের নুর মহম্মদেরা প্রথম কলকাতায় এলেন। নুরের কথায়, ‘‘বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলা তো মুক্তিযুদ্ধের লড়াই। গোটা দেশের আবেগ জড়িয়ে। দেশ থেকে বহু মানুষ এসেছেন খেলা দেখতে।’’ হাতে খেলার টিকিট ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁদের নিজস্বী তুলতেও দেখা গেল।
মির্জা গালিব স্ট্রিটের একটি হোটেলে বাংলাদেশের জার্সি পরে ঘুরছিলেন ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ রিপন হোসেন বুলু। পেশায় পোশাক ব্যবসায়ী রিপন মাঝেমধ্যেই চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসেন। এ বারও এসেছিলেন। যে ক’দিন থাকবেন, তার মধ্যে দেশের দু’টি খেলা দেখার পরিকল্পনা ছিল। নেদারল্যান্ডসের কাছে হার দেখার পরে বিমর্ষ রিপনের কথায়, ‘‘শনিবারের খেলা দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। তবে পাকিস্তানকে ছাড়া নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy