Advertisement
E-Paper

সময় পিছিয়েও রক্ষা নেই, গরমে ছায়ার খোঁজ কর্মী-সমর্থকদের

মধ্য এপ্রিলে বামেদের এ বারের ব্রিগেডের সভা শুরুর সময় অন্য বারের থেকে কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

ছায়ায় বসে কর্মী এবং সমর্থকেরা।

ছায়ায় বসে কর্মী এবং সমর্থকেরা। —ফাইল চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৪
Share
Save

ঘড়ির কাঁটা তখন সবে ৩টে পেরিয়েছে। ব্রিগেডের মঞ্চে শুরু হয়েছে বামেদের সভার কাজ। রোদ উপেক্ষা করে মঞ্চের সামনের বড় অংশ কর্মী-সমর্থকেরা দখল নিলেও কিছুটা দূরে তখনও ময়দানের সবুজ ঘাস উঁকি দিচ্ছে। যদিও ময়দানের চার দিকে গাছের তলায় পা ফেলার জায়গা নেই! সভায় বক্তব্য শুরুর তোড়জোড়ের আগেই মঞ্চ থেকে এক জনকে মাইকে বলতে শোনা গেল, ‘‘রোদকে জয় করে মাঠ ভরানোয় দায় মেহনতি মানুষের। গাছের ছায়ায়, মঞ্চের পিছনে, এ দিক-ও দিকে ছায়ায় যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা সামনে এগিয়ে আসুন। ব্রিগেড উপচে দিন।’’ যদিও সেই ঘোষণার পরেও ময়দানের ছবির বিশেষ বদল হতে দেখা গেল না।

মধ্য এপ্রিলে বামেদের এ বারের ব্রিগেডের সভা শুরুর সময় অন্য বারের থেকে কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তীব্র গরম আর তাপপ্রবাহের কথা ভেবেই মূলত দুপুরের পরিবর্তে বিকেল ৩টে থেকে সভা শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন নেতারা। গরম থেকে কর্মী-সমর্থকদের কিছুটা রেহাই মিলবে, এ কথা ভাবা হলেও বাস্তবে দহনের ভোগান্তি এড়ানো গেল না। বরং, সভায় এসে তীব্র গরমে ঘেমে-নেয়ে একসা হলেন কর্মীদের একাংশ। ফলে নেতাদের বক্তব্য শুনতে ব্রিগেডের সবুজ ঘাসের পরিবর্তে কেউ দু’পাশের গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলেন, কেউ আবার মাথা গুঁজলেন ময়দানে রাখা গাড়ির ছায়ায়। অনেককে আবার ছাতা মাথায় দিয়ে মঞ্চের সামনের দিকে কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনতে দেখা গেলেও তাঁরা বেশি ক্ষণ থাকতে পারেননি। অনেকেই ফের গাছের ছায়ায় চলে এসেছেন। গাছের ছায়ায় বসে বক্তব্য শুনতে শুনতেই অনেককে বলতে শোনা গেল, ‘‘এই গরমে কেন ব্রিগেড করল কে জানে? বাড়িতেই তিষ্ঠানো যাচ্ছে না, সেখানে এই ফাঁকা মাঠে কী করে বসবে লোকজন? আশপাশে গাছগুলো ছিল বলে তা-ও কিছুটা বাঁচোয়া।’’

রবিবার সকাল থেকে রোদ-মেঘের লুকোচুরি চললেও বৈশাখের দহন থেকে খুব বেশি রেহাই মেলেনি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সূত্র বলছে, এ দিন দুপুরের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের আশেপাশে। তবে মোবাইল চোখ রাখলে দেখা গিয়েছে, তাপমাত্রার ‘রিয়েল ফিল’ ৪২ ডিগ্রি। যদিও এই তীব্র গরম মাথায় করেও দুপুর থেকেই ব্রিগেডমুখী হয়েছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা।

সকালের দিকে আর পাঁচটা রবিবারের মতো শহরের রাস্তাঘাটের কোনও বদল চোখে পড়েনি। তবে বেলা গড়িয়ে দুপুর ছুঁতেই দ্রুত বদলে যায় চিত্র। ছোট-বড় মিছিলের সঙ্গে ব্রিগেডমুখী গাড়ি ঢুকতে দেখা গিয়েছে ধর্মতলা চত্বর দিয়ে। কেউ ছোট মালবাহী গাড়ি লাল পতাকায় সাজিয়ে এনেছেন। কেউ আবার বাসকে মুড়েছেন লাল পতাকায়। অনেকে আবার বাইকেই লাল পতাকা লাগিয়ে ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা দেন। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে একটি মিছিল যাচ্ছিল ধর্মতলার উপর দিয়ে। মিছিল থেকে চাকরি বাতিল নিয়ে একের পর এক স্লোগান দিচ্ছিলেন কমবয়সিরা। মিছিলে হাঁটা বয়স্ক এক মহিলা বললেন, ‘‘দিন দিন রাজ্যটা বৃদ্ধাশ্রম হয়ে গেল। আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েগুলো আর কত দিন একটা চাকরির অপেক্ষা করতে করতে বুড়ো হবে!’’ শিয়ালদহ থেকে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে একাধিক ছোট-বড় মিছিল এসেছে এ দিন। মিছিল থেকে উঠেছে স্লোগান। মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ নিয়ে সরকারের দিকে আঙুল তুলতেও দেখা গিয়েছে। এমনই একটি মিছিলে হাঁটছিলেন মধ্যবয়সি অশোক বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘‘কাজ, শিক্ষার পরিবর্তে এখন রাজ্যে ধর্মের খেলা চলছে। মানুষের মধ্যে বিদ্বেষের বীজ বোনা হচ্ছে। এই জিনিস বাম শাসনের সময়ে ছিল না।’’ ব্রিগেড সংলগ্ন রেড রোড, হসপিটাল রোডের পাশাপাশি স্ট্র্যান্ড রোড ধরেও বামেদের মিছিলের গাড়ি যাতায়াত করেছে।

পুলিশ জানাচ্ছে, শহরের রাস্তাঘাটে এ দিন যান চলাচল মোটের উপরে স্বাভাবিক ছিল। এমনকি, সভা চলাকালীনও রেড রোড-সহ ব্রিগেড সংলগ্ন অন্য রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিকই ছিল বলে পুলিশের দাবি। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘রাস্তা যাতে কোনও ভাবে না আটকায়, সেই মতো বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। অতিরিক্ত পুলিশকর্মীরাও ছিলেন। মোটের উপরে যানজট সে ভাবে হয়নি।’’

পুলিশ সব সামলানোর কথা বললেও সভা শেষে ফেরার গাড়ির চাপে কিছুটা হলেও যানজট হয় শহরের রাস্তায়। এমনকি, ভিড় ছিল পাতালপথেও। সভা শেষে ময়দান থেকে কয়েকটি পতাকা হাতে নিয়ে ফিরছিলেন বেহালার বাসিন্দা তীর্থঙ্কর মিত্র। অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে বাসে ওঠার আগে বললেন, ‘‘যা ভিড় হয়েছে, তা-ই অনেক। ব্রিগেড উপচে আরও কিছুটা ভিড় দেখানো যেত সরকারকে। কিন্তু গরম একটু বাদ সাধল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Brigade Rally

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}