Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Buddhadeb Bhattacharjee Death

বুদ্ধের মৃত্যুসংবাদ জানেনই না বন্ধু স্বদেশ

স্বদেশের পরিবারের তরফে তাঁর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয় একটি শর্তেই যে, বুদ্ধের প্রয়াণ-সংবাদ তাঁকে দেওয়া যাবে না।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে স্বদেশ চক্রবর্তী।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে স্বদেশ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫১
Share: Save:

দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন আগেই। মাস ছয়েক আগে পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শয্যাশায়ী। বেশি ক্ষণ সোজা হয়ে বসতে পারেন না। কথা বলতেও কষ্ট হয়। তবু ৬০ বছরের পুরনো বন্ধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম শুনেই উঠে বসার চেষ্টা করলেন। প্রথমে কিছু ক্ষণ স্মৃতি হাতড়ালেন হাওড়ার ন’বছরের মেয়র, ১০ বছরের সাংসদ ও সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য, বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা স্বদেশ চক্রবর্তী। অস্ফুটে বললেন, ‘‘ছাত্র জীবন থেকেই বুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্ক। পড়াশোনা একসঙ্গে। এর পরে রাজনীতি থেকে প্রশাসনিক কাজ— হাতে হাত ধরে করেছি। সাংসদ ও মেয়র থাকার সময়ে আমাকে হাওড়ার উন্নয়নেও সাহায্য করেছে।’’

হাওড়ার প্রবীণ বামপন্থী নেতা স্বদেশ ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, দু’জনেরই বয়স ৮০। হাওড়ার সালকিয়ার শম্ভু হালদার লেনের বাড়িতে বসে যখন এ কথা বলছেন স্বদেশ, তখনও জানেন না, তাঁদের অটুট বন্ধনে ছেদ পড়েছে চিরতরে। জানেন না, সালকিয়ার বাড়িতে মুড়ি-বাদাম সহযোগে আসর বসানো বুদ্ধ, বিমান বসু ও তাঁর মধ্যে এক জন অতীত হয়ে গিয়েছেন।

স্বদেশের পরিবারের তরফে তাঁর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয় একটি শর্তেই যে, বুদ্ধের প্রয়াণ-সংবাদ তাঁকে দেওয়া যাবে না। কারণ, এই ধাক্কা তিনি নিতে পারবেন না। দুই বন্ধুর সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিল যে, যত বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বুদ্ধ, তত বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে স্বদেশকেও। তাঁর স্ত্রী পুষ্প চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আসলে বুদ্ধবাবু, বিমানদা, শ্যামল চক্রবর্তী, এঁরা এক সময়ে এই বাড়িতে ঘন ঘন এসেছেন। কয়েক দিন আগেও ওঁকে দেখতে এসে বিমানদা সে কথাই বলছিলেন। কিন্তু বুদ্ধদা চলে যাবেন, এটা ভাবিনি।’’

দুরারোগ্য ব্যাধিতে ছ’মাস শয্যাশায়ী স্বদেশও। সেই অবস্থাতেই বিছানায় বসে শিরদাঁড়া সোজা করার চেষ্টা করেন। পারকিনসন’স ক্ষমা করছে না তাঁর কম্পমান হাত দু’টিকে। তবু বললেন, ‘‘বুদ্ধকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। অনেক চেষ্টা করেছি এক বার ওকে দেখতে যেতে। পারিনি। হাসপাতালে যখন ভর্তি হল, তখনও না। জানি না, আর দেখা হবে কিনা।’’

ফের বিছানায় শুয়ে পড়ার আগে হাওড়া শরৎ সদন, নবান্ন বা শৈলেন মান্না স্টেডিয়ামের রূপকার স্বদেশ জানলেন না, তাঁর আশঙ্কাই ঠিক। প্রিয় বন্ধু চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE