হয়রানি: প্রধানমন্ত্রীর কনভয় যাওয়ার জন্য আটকে দেওয়া হয়েছে স্ট্র্যান্ড রোড। রাস্তা পেরোনোর অপেক্ষায় পথচারীরা। ফাইল চিত্র
শহরে ভিভিআইপি-দের যাতায়াত হবেই। তা বলে তাঁর নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে শহর অচল হবে কেন? কেনই বা সাধারণ মানুষকে ভিভিআইপি-র নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাস্তায় আটকে দীর্ঘক্ষণ যানজটের শিকার হতে হবে?
শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কলকাতা সফরের দিনেই সেই প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি ওই দিন মিলেনিয়াম পার্কে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে রাস্তা পারাপার করানোর নির্দেশ দেন পুলিশকে। সোমবার থেকেই সমস্যার সুরাহা খুঁজতে শুরু করল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের খবর, এ দিন পুলিশ কমিশনারের মাসিক বৈঠকে ভিভিআইপি-দের সফরের সময়ে জনগণের দুর্ভোগের প্রসঙ্গ উঠেছে। তখন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা নির্দেশ দেন নিরাপত্তা বিধি মেনেও ভিভিআইপি-র যাতায়াতের দিনে কী ভাবে আমজনতার ভোগান্তি কমানো যায়, তার পথ বার করতে হবে পুলিশ আধিকারিকদেরই।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে তাঁর যাতায়াতের পথে দীর্ঘ সময় রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল কলকাতা পুলিশ। তার জেরে নাকাল হয়েছিলেন বহু মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে অফিস পাড়ার বিভিন্ন রাস্তা দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় সাংঘাতিক দুর্ভোগে পড়েন ওই রাস্তায় যাতায়াতকারীরা। এর আগে একাধিক বার শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের যাতায়াতের কারণেও রাস্তা বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সূত্রের খবর, এ দিন লালবাজারের বৈঠকে ‘ভিভিআইপি’-দের যাতায়াতের পথে যে ভাবে ব্যারিকেড তৈরি করা হয় তার পদ্ধতি বদল করতে বলেছেন কমিশনার। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, ব্যারিকেড তৈরির ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিকল্পনা এবং সমন্বয় বাড়াতে হবে। যাতে নিরাপত্তা অটুট থাকে, কিন্তু মানুষও দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার ভোগান্তি থেকে রেহাই পান। লালবাজারের এক কর্তা জানান, যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের জন্য দীর্ঘক্ষণ শহরের মূল কয়েকটি রাস্তা আটকে রাখা হয়েছিল, তাতে পুলিশ কমিশনার যে ক্ষুব্ধ, তা এ দিনের বৈঠক থেকে পরিষ্কার। ভিআইপিদের যাতায়াতের নামে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তিনি যে বরদাস্ত করবেন না বলেও তিনি এ দিন জানিয়ে দেন।
তবে অনেকের মতে, পারাপার বন্ধ না-করলে ভিভিআইপির নিরাপত্তায় সমস্যা হতে পারে। যদিও পুলিশের একাংশ বলছে, কলকাতার মতো জনবহুল শহরে কাজের দিনে দীর্ঘক্ষণ রাস্তা আটকে রাখা উচিত নয়। ফলে নিরাপত্তা ও মানুষের সুবিধা, দুইয়ের ভারসাম্য রেখেই পুলিশের কাজ করা উচিত।
এ দিনের বৈঠকে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টিও উঠেছে। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ দাবি করেছিল, ২০১৯ সালে আগের সব বছরের তুলনায় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমেছে। যদিও পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, বাসের দুর্ঘটনা এবং পথচারীর মৃত্যু বেড়েছে। ২০১৮ সালে মোট বাস দুর্ঘটনা হয়েছিল ৪৭০টি। তার মধ্যে ৮৫টি ঘটনায় মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। ২০১৯ সালে ৪৯৭টি বাস দুর্ঘটনা হয়েছে। তার মধ্যে ৯৭টি ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালে ১৪৬ জন পথচারী পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। ২০১৯ সালে পথচারীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫১। ‘সাফল্যের’ মার্কশিটে এই ‘লাল দাগ’ পুলিশ কমিশনারকে উদ্বিগ্ন করেছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
লালবাজারের খবর, এ দিনের বৈঠকে এই দু’টি বিষয়ের উপরে ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তাদের বিশেষ নজর দিতে বলেছেন কমিশনার। এক পুলিশকর্তা বৈঠকে জানান, সচেতনতা বাড়াতে দেওয়াল লিখন ও পোস্টার বিলি করছেন তাঁরা। যদিও কমিশনার মনে করেন, সচেতনতার পাশাপাশি রাস্তায় নিয়মের কড়াকড়িও প্রয়োজন। কী ভাবে তা করা যায় তা ট্র্যাফিক-কর্তাদের নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে স্থির করতে বলেছেন কমিশনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy