n অসতর্ক: ডিউটিতে যাওয়ার আগে অপেক্ষারত পুলিশকর্মীরা। মাস্ক নেই প্রায় কারও মুখেই। শুক্রবার, বিধাননগর কলেজের মাঠে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
সাইরেনের শব্দ ধীরে ধীরে বাড়ছিল। শয্যা না পেয়ে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ঘুরছিল এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়াও ছিল যুদ্ধ জয়ের মতোই। বেসরকারি হাসপাতালের খরচে সর্বস্বান্ত পরিবারের আকুতি আজও শোনা যায়। বাবা-মা-সন্তান-স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় পিছনে রেখে প্লাস্টিকে মোড়ানো একাকী দেহগুলোর গন্তব্য ছিল তখন ধাপার মাঠ। প্রিয় জনের মৃত্যু কবে হল বা তিনি কেমন আছেন, সেই খবরটুকু পাওয়া ছিল অনেক সংগ্রামের ফল। ঠিক এক বছর আগের সেই দিনগুলোই কি আবার ফিরিয়ে আনতে চলেছে আমাদের অসচেতনতা? বর্তমান পরিসংখ্যান অন্তত সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা মিলিয়ে ৫৫টি বেসরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ শয্যাই এই মুহূর্তে ভর্তি। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ওই ৫৫টি হাসপাতাল মিলিয়ে ২৭০৩টি শয্যার মধ্যে ১৩ এপ্রিল ২০১৩টি ভর্তি ছিল। ১৪ এপ্রিল ভর্তি শয্যা ছিল ২১৬০। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে করোনা শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। যার ফলে ১৫ এপ্রিল একটি অতিরিক্ত বেসরকারি হাসপাতাল যোগ হয়ে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় এখন সংখ্যাটা ৫৬। সব মিলিয়ে কোভিড শয্যা হয়েছে ২৭৮৪টি। যার মধ্যে ভর্তি ২৩৩৫টি।
সরকারি হাসপাতালেও কমছে ফাঁকা শয্যার সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রোগী ভর্তির হার সব থেকে বেশি এম আর বাঙুর, বেলেঘাটা আই ডি এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
চিকিৎসক এবং সংক্রমণ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, রোগী বাড়তে থাকলে শয্যা কমবেই। আবার শুধু করোনার চিকিৎসার জন্য গোটা হাসপাতাল রাখা যাবে না। তা হলে অন্য রোগের চিকিৎসা মিলবে না। সুতরাং প্রতিটি হাসপাতালেই করোনা চিকিৎসার শয্যা নির্দিষ্ট থাকছে। কর্তৃপক্ষ সেই সংখ্যা কিছু বাড়াতে পারেন মাত্র।
এ দিকে কোভিড শয্যা বাড়ালে অন্য পরিকাঠামোর দিকে নজর দিতে হয়, জানাচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যেমন, আইএলএস হাসপাতাল গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধর বলছেন, “যে সব হাসপাতালে করোনার পাশাপাশি অন্য রোগেরও চিকিৎসা হচ্ছে, সেখানে একই ফ্লোরে দু’টির চিকিৎসা একসঙ্গে করা যায় না। কোভিডের আলাদা ফ্লোরের প্রয়োজন। সুতরাং কোভিডের শয্যা বাড়ালে আলাদা ফ্লোর নিতে হবে। সাধারণ শয্যা বাড়লেই আইসিইউ বাড়াতে হয়। সঙ্গে ওষুধের মজুত বাড়াতে হয়। নার্স, জুনিয়র মেডিক্যাল অফিসারের সংখ্যাও বাড়াতে হয়।” পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “হু হু করে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। কী ভাবে পরিস্থিতি সামলানো হবে সেটাই চিন্তার। এ ভাবে বাড়তে থাকলে দিশাহারা অবস্থা হবে।”
“বন্যার জল যখন অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে, তখনও আল ধরে হাঁটা যায়। কিন্তু গলা অবধি জল উঠে গেলে, নৌকা চালিয়েও লাভ হয় না।” করোনা রোগী ভর্তির হার বাড়ার প্রসঙ্গে বলছিলেন এম আর বাঙুর হাসপাতালের সুপার শিশির নস্কর। তাঁর কথায়, “মানুষ যদি ঢিলেঢালা আচরণ না বদলান, করোনা-বিধি না মানেন, তা হলে অনেক বড় বিপদ ঘটতে চলেছে।”
এ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। সূত্রের খবর, বেশি রোগীকে পরিষেবা দিতে অনেক হাসপাতালই রোগীকে বাড়িতে থাকার উপযুক্ত করে ছুটি দিয়ে দিচ্ছে। মূলত রোগীর যখন অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে না, তখন থেকে কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করে কোভিড প্রোটোকল মেনে তাঁকে ছাড়া হচ্ছে। তাতে অক্সিজেন ও শয্যা দুই-ই ফাঁকা হচ্ছে। তবে ওই রোগীর যদি বাড়িতে থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁকে সেফ হোমে পাঠানো হচ্ছে।
বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর বিষয়ে ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কলকাতা পুরসভায় বৈঠকও করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি রূপক বড়ুয়া রাজ্য সরকারকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy