Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19 protocols

জমজমাট বৈশাখী বাজারে ব্রাত্য সেই মাস্ক

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, বুধবার গোটা রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫,৮৯২ জন। কলকাতায় সেই সংখ্যাটা ১,৬০১।

হাতেনাতে: মাস্ক না পরা লোকজনকে গাড়িতে তুলছে পুলিশ। বুধবার, নিউ মার্কেট এলাকায়। ছবি: স্বাতী

হাতেনাতে: মাস্ক না পরা লোকজনকে গাড়িতে তুলছে পুলিশ। বুধবার, নিউ মার্কেট এলাকায়। ছবি: স্বাতী

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২২
Share: Save:

হাতে মাস্ক নিয়ে ভিড় ঠেলে এক মহিলা শাড়ির দোকানে ঢুকে দোকানদারকে কার্যত ধমকের সুরে বললেন, ‘‘কখন থেকে বাইরে টাঙানো শাড়িটার দাম জিজ্ঞাসা করছি, আর আপনি অন্যকে এটা-ওটা দেখিয়ে যাচ্ছেন। আমায় এ বার দেখান।’’ সঙ্গে থাকা আর এক মহিলা চেয়ারে বসে দোকানের এক কর্মীকে বললেন— ‘‘আমাকেও নাতনির জন্য ভাল জামা দেখাবেন। গত বছর লকডাউনের চক্করে ছোট্ট নাতনিটাকে কিচ্ছু কিনে দিতে পারিনি!’ দু’জনের কারও মুখেই তখন মাস্কের বালাই নেই।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, বুধবার গোটা রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫,৮৯২ জন। কলকাতায় সেই সংখ্যাটা ১,৬০১। যদিও চৈত্রের শেষ দিনে গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, নিউ মার্কেট চত্বরে বৈশাখী কেনাকাটার ‘ধুম’ দেখলে তা বোঝার উপায় নেই। প্রতিটি বাজারেই দেদার রয়েছেন অসচেতন ক্রেতা-বিক্রেতা। সব দেখে গড়িয়াহাট মোড়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘মানুষের যা কেনাকাটার হুজুগ! জামাকাপড় কিনতে এসে শেষে হাতে করোনা না নিয়ে গেলেই ভাল!’’

বুধবার সকাল থেকেই গড়িয়াহাট ও নিউ মার্কেটে দাঁড়িয়ে মাস্কহীন পথচারীদের সতর্ক করতে দেখা গেল পুলিশকে। মাস্ক না-পরা জনতাকে ধমকে মাস্ক পরানোর ছবিও দেখা গেল। কিন্তু গড়িয়াহাট বাজারেই দেদার দেখা মিলল মাস্কহীন জনতার। মাস্ক ছাড়া বান্ধবীর সঙ্গে রাস্তা পার হচ্ছিলেন অনুশ্রী ভট্টাচার্য। মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইতেই উত্তর দিলেন, ‘‘লস্যি খেতে গিয়েছিলাম, তাই মাস্ক খুলেছি। মাস্ক পরে কি লস্যি খাওয়া যায় বলুন!’’—বলেই ব্যাগের ভিতর থেকে মাস্ক বার করলেন। মেয়ের হাত ধরে ছোটদের জামা কিনছিলেন পূর্ণিমা দাস। এত ভিড়েও বাজারে কেন? পূর্ণিমা বললেন, ‘‘চৈত্রের সেল কী করে ছাড়ি বলুন! তাই মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার নিয়েই বেরিয়েছি।’’ স্থানীয় বাজারের এক বিক্রেতা অলোক সাহা আবার বলছেন, ‘‘আমরা সকলকে মাস্ক পরতে বলছি! পুলিশও এসে মাস্ক পরার কথা বলেছে।’’ তা হলে মাস্কে নিজের মুখ ঢাকেননি কেন? প্রশ্ন শুনে অলোকের সাফাই— ‘‘আপনি তো পরে রয়েছেন, তাই আমার এখন না পরলেও হবে!’’

একই ছবি নিউ মার্কেটেও। বান্ধবীর সঙ্গে সেখানে ঘুরে বেড়ানো শুভ্রজ্যোতি ভট্টাচার্যকে করোনার কথা বলতেই সটান জবাব, ‘‘করোনার জন্য কি জামাকাপড় কিনব না! কী সেল দিচ্ছে বলুন তো? মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার নিয়েই বেরিয়েছি।’’ উত্তর কলকাতার হাতিবাগান বাজারের অবস্থাও তথৈবচ। এক বিক্রেতা সঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, ‘‘এখন অল্প ভিড়। সন্ধ্যার সময়ে তো এখানে ভিড়ে দাঁড়াতেই পারবেন না।’’ দোকানে স্যানিটাইজ়ার রাখা হয় কি না, সে কথা জানতে চাইতে তাঁর উত্তর, ‘‘ক্রেতারা নিজেরাই স্যানিটাইজার নিয়ে আসেন! প্রথম প্রথম দোকানে রেখেছিলাম, কিন্তু কেউ ব্যবহার করে না। তাই এখন রাখি না।’’ হাতিবাগান বাজারে মাস্ক ছাড়া বাজার করা এক মহিলার আবার সাফ কথা, ‘‘গরম লাগছে, মাস্ক ব্যাগেই আছে!’’

শহরের এমন পরিস্থিতি দেখে সচেতন শহরবাসীর একাংশের মতে, সচেতন না হলে এই ছবি বদলানোর আশা কম।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy