Advertisement
E-Paper

EM Bypass: ‘পুরনো’ আর ‘নতুন’-এর দ্বন্দ্বেই কি বেআব্রু সিন্ডিকেট-দাপট

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, এর পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেটেরই ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’র দ্বন্দ্ব। তবে কাউন্সিলর তা মানতে চাননি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১৩
Share
Save

রাস্তার ধারে গাছে ঝুলছে পোস্টার। স্থানীয় কাউন্সিলরের ছবি দেওয়া সেই পোস্টারে বড় বড় হরফে লেখা, ‘সরকারি জমি কেনাবেচা নিষিদ্ধ। পুকুর ভরাট করা দণ্ডনীয় অপরাধ’। পোস্টারের শেষ লাইনে রয়েছে, ‘দালালেরা সাবধান’।

ইএম বাইপাসের রুবি মোড় সংলগ্ন ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দপুরে পড়েছে এই পোস্টার। কিন্তু কেন? স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় একটি অসাধু চক্র সক্রিয়। বিভিন্ন সময়ে তারা ওই ওয়ার্ডের একাধিক সরকারি জমি দখল করেছে। দখল করে নেওয়া সেই সরকারি জমিতেই এর পরে ফ্ল্যাট তৈরি করে বিক্রি করা হয়েছে। যা পুরোপুরি বেআইনি এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। তিনি বলেন, ‘‘আমি কাউন্সিলর থাকাকালীন কোনও অনৈতিক কাজ হতে দেব না। সরকারি জমির কেনাবেচা বন্ধ করতেই পোস্টার দিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছি।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, এর পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেটেরই ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’র দ্বন্দ্ব। তবে কাউন্সিলর তা মানতে চাননি।

শুধু আনন্দপুর নয়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় একই ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সিন্ডিকেটের ‘নতুন’ বনাম ‘পুরনো’র দ্বন্দ্ব চলছে প্রায় সর্বত্রই। বেহালার চড়কতলায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবই হোক বা সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা, সব ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সিন্ডিকেট বনাম সিন্ডিকেট দ্বৈরথ। নাগরিকদের অভিযোগ, আসলে পুরভোটের পর থেকে একাধিক ওয়ার্ডের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গিয়েছে। এত দিন যে ‘দাদা’র অনুগামীর হাতে সিন্ডিকেটের ‘দায়িত্ব’ ছিল, ‘দাদা’ বদলে যাওয়ায় তিনি আপাতত ‘ব্যাকফুটে’। ওয়ার্ডের নতুন ‘দাদা’ বা তাঁর অনুগামীরা আবার চাইছেন গোটা সিন্ডিকেটের দখল নিতে। সেই দখলদারি ঘিরেই যখন-তখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে শহর।

শুধু তা-ই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সিন্ডিকেটের পাশাপাশি বহু এলাকায় চলছে তোলাবাজির রমরমাও। শহরের একটি নির্মাণ সংস্থার এক আধিকারিক বললেন, ‘‘আসলে বড় বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনেক সংস্থাই সিন্ডিকেটের সামগ্রী নিতে রাজি হয় না। কারণ, সেগুলির মান ও পরিমাণ, কোনওটাই ঠিক থাকে না। তাই জিনিস কেনার পরিবর্তে অনেক সংস্থাই ‘নজরানা’ দিয়ে বিষয়টা আপসে মিটিয়ে নেয়।’’ আর সেই ‘নজরানা’র ভাগ পেতেই বহু জায়গায় ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’র দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

গত সপ্তাহেই বেহালার চড়কতলায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার এক ‘দাদা’র অনুগামীরাই সিন্ডিকেটের সবটা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি, কাউন্সিলরের মৃত্যুর পরেও সেই নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁদের হাতে। কিন্তু পুরভোটের পর থেকে বদলে যায় ওয়ার্ডের রাজনৈতিক সমীকরণ। এলাকায় আসেন নতুন ‘দাদা’র অনুগামীরা। তাঁরা পুরনোদের সরিয়ে গোটা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে শুরু করেন। কোণঠাসা অবস্থা হয় পুরনোদের। আর তা থেকেই গন্ডগোলের সূত্রপাত।

বেহালার ঘটনার পিছনে বাসিন্দারা ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’র দ্বন্দ্বের কথা বললেও তা মানতে নারাজ ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রূপক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এখানে নতুন বা পুরনো কোনও বিষয় নয়। একটা লটারির টিকিটকে কেন্দ্র করে দু’টি ছেলের মধ্যে গন্ডগোল। প্রাথমিক ভাবে তা মিটিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটাই মারাত্মক আকার নেয়।’’ সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি কাউন্সিলর হওয়ার পরে আমার ওয়ার্ডে সিন্ডিকেট নিয়ে কোনও ঝামেলা হয়নি।’’

৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের লেক গার্ডেন্সে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের পাড়ায় একটি বাড়ি ভাঙাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাতেও সামনে এসেছে এই ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’র দ্বন্দ্ব। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর মৌসুমী দাস বলেন, ‘‘নতুন বা পুরনো কোনও বিষয় নয়। একটি বাড়ি ভাঙা হচ্ছিল। একই পাড়ার দু’টি ছেলে ভাঙছিল। তাদের মধ্যে বচসা, মারামারি হয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও বিষয় নেই।’’ ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর রতন দে-র আবার দাবি, ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’র বিষয়ে তাঁর নাকি কিছু জানাই নেই। সিন্ডিকেট নিয়ে প্রশ্ন করতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

পাড়ায় পাড়ায় এই সমস্ত গন্ডগোল এবং ‘নতুন’ ও ‘পুরনো’র দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে শহরের এক কাউন্সিলর আবার বললেন, ‘‘এ তো হিমশৈলের চূড়া। এর পরে দেখুন না, কী হয়!’’

Syndicate Raj EM Bypass

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।