ঘুষ-কাণ্ডের পরে জন্মের শংসাপত্র রহস্য। আবারও নাম জড়াল সাবেক বালি পুরসভার। ঘুষ-কাণ্ডের তদন্তে জানা গিয়েছিল, ওই চক্রে জড়িয়ে রয়েছেন পুরসভার বড় কর্তারা। এ বারও ‘জাল’ শংসাপত্র-কাণ্ডের তদন্তে নেমে হাওড়া পুরসভার কর্তারা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। তাঁদের আরও বক্তব্য, কে বা কারা পুরসভার ভিতরেই এ ধরনের বেআইনি কাজের চক্রের সঙ্গে জড়িত, তা বিস্তারিত ভাবে জানা জরুরি। তাই সাবেক বালি পুরসভার দেওয়া জন্মের শংসাপত্র সংক্রান্ত গরমিলের বিষয়ে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার কাছে অভিযোগ দায়ের করছে হাওড়া পুরসভা।
গত ৩১ মার্চ বেলুড়ের বাসিন্দা গুড্ডিদেবী দাবি করেছিলেন, তিন ছেলে-মেয়ের বিভিন্ন শংসাপত্র জেরক্স করাতে গিয়ে তিনি হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটগুলি হারিয়ে ফেলেছেন। ওই দিনই বেলুড় থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে গুড্ডিদেবী হাওড়া পুরসভার বালি শাখা অফিসে সার্টিফিকেটগুলির প্রতিলিপি পাওয়ার আবেদন করেন। তখনই বালি পুরসভা পরিচালিত কেদারনাথ আরোগ্যভবন হাসপাতালের নথি পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ওই তিনটি বাচ্চার জন্মের কোনও তথ্যই নথিভুক্ত নেই। তা সত্ত্বেও কী ভাবে গুড্ডিদেবী পুরসভার তরফে ওই হাসপাতালের নাম লেখা জন্মের শংসাপত্র পেলেন, তা নিয়েই সংশয় দেখা দেয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর নির্দেশে একটি তদন্ত-কমিটি গঠন করেন পুর কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। সেই কমিটিতে ছিলেন পুরসভার ডেপুটি কমিশনার, চিফ অডিটর ও এক জন চিকিৎসক।
পুরসভা সূত্রের খবর, তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি বুধবার একটি রিপোর্ট দিয়েছেন পুর কমিশনারের কাছে। তদন্তকারীরা পুরসভার জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত বিভাগের কর্মী এবং হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রাথমিক তদন্তে কমিটির সদস্যেরা নিশ্চিত, পুরসভার কোনও কর্মী বা তাঁদের একটি দল এই ‘জাল’ শংসাপত্র চক্রে জড়িত। এবং ওই মহিলার শংসাপত্রগুলিও প্রাথমিক ভাবে জাল বলেই মনে করছেন পুর-কর্তারা। তদন্ত কমিটির সদস্যদের থেকে এই বিষয়টি জানার পরেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘বাম পরিচালিত সাবেক বালি পুরসভায় আর কী কী দুর্নীতি হয়েছে কে জানে? মনে হচ্ছে কান টানলে অনেক বড় মাথা বেরোতে পারে। তাই বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখায় অভিযোগ করছি।’’
বছরখানেক আগেই সাবেক বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২১ কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল দুর্নীতি দমন শাখা। ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্ত ওই ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। প্রণবকে জেরা করে দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা জানতে পেরেছিলেন, টাকার বিনিময়ে জমি, বাড়ি, আবাসনের নকশা অনুমোদন সহ অন্যান্য কাজে পুরসভার বড় কর্তারাও জড়িয়ে রয়েছেন। সেই সময়ে তদন্তে সাবেক বালি পুরসভার চেয়ারম্যান, সিপিএমের অরুণাভ লাহিড়ীর নামও জড়িয়ে যায়। তাঁকেও বেশ কয়েক বার জেরা করেছিলেন দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা। পরে তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু অরুণাভবাবুও পরে আদালত থেকে জামিন পান।
সাবেক বালি পুরসভার ওই ঘুষ-কাণ্ডের পরে জন্মের শংসাপত্র রহস্য ভেদ করতে আবারও রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখারই দ্বারস্থ হতে চলেছে হাওড়া পুরসভা। পুর কমিশনার নীলাঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘এমন দুর্নীতি কখনও বরদাস্ত করা হবে না। বোঝাই যাচ্ছে বড় চক্র কাজ করেছে। তাই প্রকৃত সত্য জানতে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার ডিআইজি-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করছি।’’ তবে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘এখনও কোনও অভিযোগ হাতে পাইনি। পেলে নিশ্চয় তদন্ত করা হবে।’’
Birth certificate Municipality
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy