গড়িয়াহাট মোড়ে দাবা খেলতে বসেও বয়স্কদের মাস্ক নেমেছে থুতনিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ওমিক্রনের সংক্রমণে ঝুঁকি বেশি বয়স্ক এবং অন্যান্য রোগে ভোগা মানুষজনের। এ রাজ্যে গত কয়েক দিনে মৃতের সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করে এমনটাই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা থেকে চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ওমিক্রনের প্রভাব মৃদু হলেও তা উদ্বেগ তৈরি করছে কোমর্বিডিটি থাকা রোগী এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তাই তাঁদের উপরে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন।’’
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, শেষ সাত দিন, অর্থাৎ ৯ জানুয়ারি (১০ জানুয়ারি প্রকাশিত), রবিবার থেকে ১৫ জানুয়ারি (১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত), শনিবার পর্যন্ত পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাচ্ছে, মৃত্যুর লেখচিত্র কতটা ঊর্ধ্বমুখী। ৯ জানুয়ারি মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের। ১৫ জানুয়ারি মারা গিয়েছেন ৩৬ জন। তৃতীয় ঢেউয়ে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে ১৪ জানুয়ারি, শুক্রবার, ৩৯ জনের। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের মৃত্যুর থেকে এ বারের ঘটনা একটু অন্য রকম। স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টেও একই কথা বলা হচ্ছে। মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণেও উঠে এসেছে সেই তথ্য।
অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ছিল ৫১ শতাংশ। এ বার সেটি পৌঁছেছে ৭৮ শতাংশে। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী
বললেন, “একটি বিষয় স্পষ্ট যে, তৃতীয় ঢেউয়ে কমবয়সিদের চেয়ে বয়স্ক ও কোমর্বিডিটিতে ভোগা রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। তাই এমন লোকজনের উপরে বিশেষ নজরে রাখার ব্যাপারে বাংলাতেও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।’’
আরও জানা যাচ্ছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৩১-৪৫ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ১০.৭ শতাংশ থাকলেও এ বার তা নেমে এসেছে পাঁচ
শতাংশে।
আবার ৪৬ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত বয়সিদের মৃত্যুর হার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ছিল ২৮ শতাংশ। সেটিও এ বার কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে। বরং, তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে। দেখা যাচ্ছে, ৬০ থেকে ৭৫ বছর বয়সিদের মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ এবং ৭৫-এর বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৭ শতাংশ হয়েছে।
রাজ্যে মোট সংক্রমিতের ৭০-৮০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। কিছু রয়েছে ডেল্টা এবং অন্য প্রজাতি। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের বক্ষরোগ চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে ডেল্টা সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করছিল। ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা আচমকা নেমে যাচ্ছিল। এতে দ্রুত অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে মৃত্যু ঘটছিল। কিন্তু ওমিক্রনে ফুসফুসে সংক্রমণের হার খুবই কম। বরং, সেটি আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাকে আক্রমণ করছে। আর শরীরে থাকা পুরনো রোগ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে রোগী সঙ্কটজনক হচ্ছেন। হার্টের ক্ষেত্রে কার্ডিয়োভাস্কুলার সমস্যা, স্টেন্ট বসানো, বাইপাস হয়েছে এবং পাম্পিং ক্ষমতা কম, ফুসফুসের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন সিওপিডি এবং হাঁপানি রয়েছে, কিডনির অসুখের মধ্যে ক্রিয়েটিনিন বেশি, প্রস্রাবের পরিমাণ কম— এমন রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে দ্রুত সঙ্কটজনক হচ্ছেন বলেই পর্যবেক্ষণ চিকিৎসকদের। এ ছাড়াও
অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, সুগার এবং স্থূলতা বিপদ ডেকে আনছে ওমিক্রন আক্রান্তদের।
জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, “যাঁরা কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত, করোনাতেও তাঁদের অবস্থা গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু অনেকাংশেই সেটা আটকানো সম্ভব। বাড়িতে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে, যথাযথ ভাবে কোভিড-বিধি মানতেই হবে। পাশাপাশি, বয়স্ক মানুষটি যে রোগে আক্রান্ত, সেটি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনায় খামতি রাখা যাবে না।’’ তিনি এ-ও জানাচ্ছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে এমন রোগীকে দূরে ঠেলে দিলে হবে না। বরং তাঁর অন্য রোগের চিকিৎসায় যাতে গাফিলতি না হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডার কথায়, “হার্টের পুরনো অসুখ আছে, এমন বহু রোগী কোভিডের সঙ্গে হার্ট ফেলিয়োর নিয়ে আসছেন। যে কারণে ফুসফুসের আস্তরণের উপরে জল জমে যাচ্ছে। ওমিক্রন যতই মৃদু হোক, সংক্রমণের পরে সেটা যে ধাক্কা দিচ্ছে, পুরনো রোগ এবং বয়সের কারণে শরীর সেই ধাক্কা নিতে পারছে না।’’
সৌতিকবাবু জানাচ্ছেন, বয়স্ক ও কোমর্বিডিটিতে আক্রান্তদের বুস্টার ডোজ় নিতে গড়িমসি চলবে না। তিনি ও অন্যান্য চিকিৎসকদের কথায়, “সংক্রমিত হবেন না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কিন্তু প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে সঙ্কটজনক হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy