নবসাজ: ইদের পোশাক নিয়ে আলাপচারিতা। নিজস্ব চিত্র
দিল্লি বা অন্যত্র কালো মানুষকে হেনস্থার কিছু খবর কখনও তাঁদের কানে এসেছে। কলকাতার রাস্তাঘাটে ততটা খারাপ অভিজ্ঞতা অবশ্য হয়নি। তবু উৎসবের দিন দেশ থেকে বহু দূরের এই শহর জেলখানাই মনে হচ্ছে আবদুল্লাদের।
এই দিনগুলোয় যে ভাবে হোক দেশে ফিরতে ভিতর থেকে ছটফট করে। কিন্তু কলকাতা থেকে তাঁদের দেশে ফেরাও অন্তত তিন-তিনটি বিমানযাত্রার ঝক্কি।
আজ, শনিবার যাদবপুর নর্থ রোডের তেতলার ছাদটাতেই তাই মুক্তি খুঁজবেন নাইজিরিয়ার বাবা আবদুল্লা জাহুন বা সোমালিয়ার আব্দুওয়েলি। আবদুল্লা যাদবপুরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এমএ-র ফল জানবেন আর কয়েক দিনেই। নাইজিরিয়ার জিগাওয়া শহরে সরকারি কর্মীর ছেলে। সোমালিয়ার শক্তি এবং জলসম্পদ মন্ত্রীর বড় ছেলে আব্দুওয়েলি রাজধানী মোগাদিশুর বাসিন্দা। যাদবপুরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তৃতীয় বর্ষ। গড়িয়াহাট থেকে ইদের ধবধবে কেতাদুরস্ত পাজামা-পাঞ্জাবি কিনেছেন সোমালিয়ার তরুণ। শুক্রবার বিকেলে তাঁর দেশীয় পোশাক লুঙ্গির মতো মাউয়িস পরে খাটে বসে নতুন পোশাকের ভাঁজ খুলে দেখাচ্ছিলেন তিনি। ইদে একটু সাজতে হবে!
তবে গেল রমজানের ইদের মতো এ বারও হস্টেলের কয়েক জন বাংলাদেশি সতীর্থের সঙ্গে ছাদেই নমাজে শামিল হবেন আফ্রিকান ছাত্রেরা। যাদবপুরে সাংবাদিকতায় এমএ-র চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র ঢাকার ইমতিয়াজ সেলিম বলছিলেন, “আবদুল্লা, আব্দুওয়েলিরা আমাদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে হাউসা, সোমালি ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছিল। লকডাউনের বন্দিদশায় বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়েছে।” দিন দশেক আগে হস্টেলে
বিদায়ী ছাত্রদের চাঁদা তুলে পোলাও, চিকেন রোস্ট, মাটন কষা খাইয়েছেন অন্য পড়ুয়ারা।
আবদুল্লার যাদবপুরের মেয়াদ শেষের মুখে। মিতভাষী যুবক হাসেন, “কলকাতায় খারাপ লেগেছে বলব না! বন্ধুরা ভাল মানুষ। বাংলায় দু-একটি গালাগালিও শিখে নিয়েছি। তবে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে আমাদের গায়ের রং নিয়ে হাসাহাসি টের পেলে সামান্য মনখারাপ হয়।” ফার্মাসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া জাম্বিয়ার এলিয়ট বা ভূগোলের ছাত্র লেসোথোর মাসিথাও এখন হস্টেলে থাকেন। আবদুল্লা বলেন, “হাওড়া, বারুইপুরের দিকে কয়েক জন স্থানীয় বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছি। আগের ইদে বাংলাদেশি বন্ধুরা দারুণ সিমুই খাওয়াল। তবু নিজের দেশ আর আমার ছ’ভাইবোনকে খুব মনে পড়ে। কলকাতা ছেড়ে তখন পালাতে ইচ্ছে করে।”
কলকাতায় অতিমারি বা আমপান দুটোই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা শহরের আফ্রিকান ছাত্রদের কাছেও। ঝড়ের পরে ক্যাম্পাসে ছিন্নভিন্ন গাছের ছবি চোখে লেগে। চার নম্বর গেটের কাছে চায়ের দোকানের নেপালদাকে সাহায্যের জন্য ওঁরাও এগিয়ে আসেন। বাংলাদেশি ইমতিয়াজের কথায়, “যাদবপুরের কমিউনিটি কিচেনেও বিদেশি ছাত্রদের হস্টেল থেকে সাধ্যমতো চালডাল দেওয়া হয়েছে। সকলেই সাহায্যের নানা চেষ্টায় এগিয়ে এসেছেন।”
আফ্রিকায় ইদ পড়েছে এ দেশের এক দিন আগে। তাই শুক্রবার সকালে রুমমেট আব্দুওয়েলিকে নিয়ে সল্টলেকে নাইজিরিয়ার এক তুতো বোনের বাড়ি গিয়েছিলেন আবদুল্লা। দেশের কায়দায় কম মশলার চিকেন স্টু-ভাত গপগপিয়ে খেয়েছেন।
হস্টেলের আবাসিক রাঙামাটির এডিথ দেওয়ান, নোয়াখালির অন্তনু পাল, সিলেটের সৈকত সিংহ, ময়মনসিংহের ফজলে হাসান শিশিরদের কাছে ধর্ম নির্বিশেষে প্রিয় মিলন উৎসবের নামও ইদ।ইমতিয়াজের সঙ্গে সক্কলে মিলে ছাদে গানবাজনাও হবে! যাদবপুরের মেন হস্টেল বন্ধ থাকায় গোরক্ষপুরের অভিজিৎ কুমারের মতো কেউ কেউ এখন বিদেশি ছাত্রদের হস্টেলে। ইদের ভালমন্দ রান্নার বাটির ভাগ তিনিও পাবেন।
ছাদে ইমতিয়াজদের সঙ্গে গান-আড্ডার দিকে তাকিয়ে আবদুল্লারাও। আব্দুওয়েলি আবার বলিউডের পোকা! অরিজিৎ সিংহ, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ভক্ত।
উৎসবের দিনে প্রিয় জনকে ছেড়ে থাকার যন্ত্রণা ভুলতে খড়কুটো সেই সুরের মলম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy