Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

কাপুচিনোয় চুমুক দিয়ে বলতে পারি, ‘ক্ষমা করো’

যতীন বাগচী রোডের উপরে  ইউরোপীয় শৈলীর এক কফির দোকানের সামনে এখন সারিবদ্ধ অ্যাম্বুল্যান্স। ভ্রম হয়, এই জায়গাটা কি তবে এখন কোয়রান্টিন সেন্টার?

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (বাচিক শিল্পী)
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৬
Share: Save:

‘‘ক্যান আই হ্যাভ আ ফার্স্ট ফ্লাশ অ্যান্ড ওয়ান ওটমিল রেইসিন প্লিজ়?’’

এই কথাগুলো দিয়েই আমার দিন শুরু হত, আমার পাড়ায়। আসলে সাদার্ন অ্যাভিনিউ বা পূর্ণ দাস রোডে যাঁরা থাকেন বা মোটামুটি দক্ষিণ কলকাতায় যাঁরা বিচরণ করেন, তাঁরা জানেন যে, এই চত্বরের কাফেগুলো এখানকার প্রাণ। আমি আমার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, এমনকি ডেট করার জন্যও অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেই পারিনি এত দিন। এ ছাড়া, অনেকেই হাতে বই বা কানে হেডফোন নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান এই সব জায়গায়। আমার মতো আড্ডাবাজ হলে তো এই সব জায়গায় ছোট সভা-সমিতিও গড়ে ওঠে। যেমন, আমার অনুজপ্রতিম অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তো প্রায় আধা মালিকানা নিয়ে বসে আছে এমন একটি কাফের (রসিকতা করলাম)!

আমি নিয়মিত যাই একটি কাফেতে, এবং সেখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সকলেই আমাদের একটি বড় পরিবারের সদস্যপদ দিয়েছেন। ভালবাসার দায়ে। ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক সেখানে দায়সারা। রাকেশ, ঋতম, কারস্টি, কেলি— এরা সবাই কেমন আছে, জানতে ইচ্ছে করে। এদের মূল জীবিকাই তো হাসিমুখে ইচ্ছেপূরণ করা। এদের জন্য ভাবছেন তো মালিকেরা? আমরা যারা দিনের পর দিন বাইরে বসার চেয়ারটা নিয়ে এদের মধ্যে টিম তৈরি করি, তারা কি ভাবছি এদের কথা?

যতীন বাগচী রোডের উপরে ইউরোপীয় শৈলীর এক কফির দোকানের সামনে এখন সারিবদ্ধ অ্যাম্বুল্যান্স। ভ্রম হয়, এই জায়গাটা কি তবে এখন কোয়রান্টিন সেন্টার? পূর্ণ দাস রোডের কাফের সামনে এখন জমাট বাঁধা অন্ধকার। সামান্য মনোমালিন্যের জন্য অনেক দিন যাওয়া হয়নি। আচ্ছা হৃদয়, মামু সবাই সুস্থ আছে তো? এদের দিন চলছে কী ভাবে? আবার জমজমাট আড্ডা বসবে তো এই কাফের বাহিরমহলে? পূর্ণ দাস রোডের অনতিদূরেই অভিজাত পাড়া হিন্দুস্থান পার্ক। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, ‘ভালোবাসা’ বাড়িটি এখানেই। আর এই পাড়াতেই তো অজস্র দোকান। নানা ধরনের বুটিক। এখানকার কর্মীদের কী হবে? হয়নি পয়লা বৈশাখের বিকিকিনি। হয়নি ‘ডিসকাউন্ট’ নিয়ে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল খেলা। হয়নি আলোর রোশনাই আর মিষ্টিমুখ।

আমি আজকাল যখন নেহাতই প্রয়োজনে এই সব পাড়া অতিক্রম করে এগিয়ে যাই, তখন মনে হয় যেন হলিউডি সিনেমার কোনও যুদ্ধত্রস্ত গ্ৰামে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিশ্বাস করুন, নৈঃশব্দ্য ভাল লাগে, মনের আরামের জন্য। কিন্তু এই রোগ যে স্তব্ধতা এনেছে, তা শেক্সপিয়রের নাটকের কালপেঁচকের মতো যেন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে। তবে কি আমাদের মধ্যেই ছিল ‘ইডিপাস’ নাটকের সেই দৈবজ্ঞ, যার সাবধানবাণী শোনার আগেই আমরা বধির ও অন্ধ হয়েছিলাম? এই বিগতযৌবনা পৃথিবী যে দিন ভেন্টিলেটর থেকে মুক্তি পাবে, সে দিন সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ওই কাফেতে নিরাপদ দূরত্বে কাপুচিনোয় চুমুক দিয়ে বলতে পারি, ‘ক্ষমা করো’। এই হোক ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’।

আরও পড়ুন: ‘দূরে বাড়ি হলে এখানেই থাকুন’, আর্জি আইডি-র

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy