আটকে: উলুবেড়িয়ার ভাড়াবাড়িতে কাশ্মীরি শাল বিক্রেতারা। নিজস্ব চিত্র
ইদের আগে রমজান মাসে এ বার বাড়ি ফেরা হচ্ছে না উলুবেড়িয়ায় আটকে পড়া কাশ্মীরি শালওয়ালাদের।
প্রতি বছর কলকাতার মতো হাওড়ার বিভিন্ন প্রান্তেও শীতবস্ত্র, কম্বল, কার্পেট বিক্রি করতে আসেন কাশ্মীরিরা। প্রতি বারই নভেম্বর মাসে আসেন ওঁরা। আবার এপ্রিলের শুরুতে কাশ্মীরে ফিরে যান। মাঝের সময়টা থাকেন উলুবেড়িয়ার বাজারপাড়ায়, ভাড়ায় নেওয়া বিভিন্ন বাড়িতে। কিন্তু লকডাউনের জেরে প্রায় ৩০ জন কাশ্মীরি এখন উলুবেড়িয়ার ভাড়াবাড়িতে বন্দি। হাতে টাকাপয়সা বিশেষ না থাকায় খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন ওঁরা।
সাধারণত, নভেম্বর থেকে বিভিন্ন বড় দোকানে কাশ্মীরিরা যে সমস্ত জিনিস বিক্রি করেন, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে তার বকেয়া টাকা আদায় করতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউনে দোকানপাট সব বন্ধ থাকায় টাকা আদায় হয়নি। আবার যে সব বাড়িতে কাশ্মীরিরা ভাড়া আছেন, সেখানেও গত তিন মাস ধরে ভাড়া মেটাতে পারেননি তাঁরা। এখন বাড়িওয়ালা ও আশপাশের গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা উদ্যোগী হয়ে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিচ্ছেন ওঁদের হাতে। যেমন, রাজখোলা গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম যুবকেরা একজোট হয়ে চাঁদা তুলে অনাহারে থাকা কাশ্মীরিদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।
আরও পড়ুন: পাইকারি বাজারে দোকান বন্ধ, ওষুধ সরবরাহে বিঘ্ন
শ্রীনগরের হজরতবাল এলাকার বাসিন্দা মুজফ্ফর আহমেদ শাহ গত ৪০ বছর ধরে এ রাজ্যে শীতবস্ত্র বিক্রি করতে আসছেন। ক্রেতাদের থেকে তাঁর পাওনা প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। লকডাউনের জেরে ওই টাকা না পাওয়ায় কাশ্মীরে থাকা স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের টাকা পাঠাতে পারছেন না তিনি। মুজফ্ফরের কথায়, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এখন ওরা ধারকর্জ করেই সংসার চালাচ্ছে। কিন্তু কত দিন আর ধার নেওয়া যাবে?’’ মোবাইলে কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল প্রৌঢ়ের। কিছু ক্ষণ থেমে বললেন, ‘‘হাতে টাকাপয়সা না থাকলেও শুভঙ্কর, তন্ময়, শামসুদ্দিন ভাইরা আমাদের পাশে সব সময়ে আছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ওঁদের আতিথেয়তা ভোলার নয়।’’
আটকে পড়া আর এক কাশ্মীরি রিয়াজ আহমেদ বাট বলছিলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে কাশ্মীরের পরিবেশ ক্রমেই অশান্ত হয়েছে। খুব কাছ থেকে সেই তাণ্ডবের ছবি দেখেছি। লকডাউনের জন্য আমরা প্রায় নিঃস্ব। এই অবস্থার মধ্যেও উলুবেড়িয়া ও আশপাশের গ্রামের মানুষেরা যে ভাবে আমাদের আপন করে নিয়েছেন, তা ভাবা যায় না! এটাই কিন্তু আমাদের আসল ভারতবর্ষ।’’
যে সমস্ত বাড়িতে ওঁরা ভাড়া থাকেন, তারই একটির মালিক হাসেম আলি বললেন, ‘‘ওঁরা চার পুরুষ ধরে আমার এখানে আসছেন। ছ’মাস থাকেন। তার পরে চলে যান। এই দুঃসময়ে তো ওঁদের বার করে দিতে পারি না।’’ পাশের রাজখোলা গ্রামের বাসিন্দা শুভঙ্কর চৌধুরী, তন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘প্রতি বছরই চাচারা কয়েক মাসের জন্য আমাদের এখানে অতিথি হয়ে আসেন। ওঁদের থেকে ফি-বছর সস্তায় শীতের জামাকাপড় কিনি। এই দুঃসময়ে তো চাচাদের পাশে থাকাটাই কর্তব্য।’’
রমজান মাসের প্রায় পুরোটা এখানে কেটে গেলেও ইদটা কাশ্মীরেই কাটাতে চান শাল বিক্রেতারা। ওঁদের আটকে পড়ার কথা শুনে উলুবেড়িয়ার সাংসদ সাজদা আহমেদ বলেন, ‘‘উলুবেড়িয়ায় আটকে পড়া কাশ্মীরিদের পাশে অবশ্যই থাকব। কী ভাবে সাহায্য করা যায়, দেখছি।’’
আরও পড়ুন: পজ়িটিভ রিপোর্ট আসার আগেই পরিবারকে দেহ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy