দাওয়াই: বিনা কারণে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় বেরোনোয় ট্যাংরার বৈশালী এলাকায় পুলিশ ওঠবোস করাচ্ছে এক ব্যক্তিকে। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
লোহার গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড করে বন্ধ করা হয়েছে গলির মুখ। সেই ব্যারিকেডের ফাঁক গলেই মূল রাস্তায় যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন কয়েক জন যুবক। সামনে থাকা পুলিশকর্মীরা ধাওয়া করতেই এন্টালির লিন্টন স্ট্রিটের গলির মধ্যে ঢুকে গেলেন ওই যুবকেরা।
রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুলিশ। তার মধ্যেই স্কুটারে চেপে দুই যুবক এ জে সি বসু রোড পার করে রিপন স্ট্রিটে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু গার্ডরেল এবং পুলিশকে দেখে ফের অন্য দিকে চলে গেলেন তাঁরা।
শনিবার দুপুরে উপরের দু’টি চিত্র শহরের দুই এলাকার। এ দিন থেকে প্রশাসন একটু কড়া হতেই ভিড় হাল্কা হতে শুরু করেছে শহরের বিভিন্ন ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায়।
করোনাভাইরাস-সংক্রমণ ঠেকাতে শুক্রবারই কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ঢোকা ও বেরোনোয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে কলকাতা পুলিশ। ৫০টিরও বেশি ওয়ার্ডের ওই সব এলাকায় যান চলাচলের পাশাপাশি বাসিন্দাদের বাইরে বেরোনোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর তাতেই ওই সমস্ত এলাকায় লকডাউন অমান্য করার প্রবণতা কিছুটা কমেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। একই সঙ্গে বাজারের ভিড়ও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এ দিনও পার্ক সার্কাস, চিৎপুর, তপসিয়া ও ট্যাংরার বৈশালী মোড়ের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন কিছু মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কড়া হতেই সেই সব এলাকা ফাঁকা হতে থাকে। বেলগাছিয়া বস্তির ছবিতে অবশ্য কোনও হেরফের দেখা যায়নি এ দিনও। শনিবারও দেখা যায়, লকডাউন অমান্য করেই বেলগাছিয়ার অলিগলিতে ভিড় জমিয়েছেন বাসিন্দারা। আবার পুলিশের নজর এড়িয়ে ব্যারিকেড টপকে বড় রাস্তাতেও চলে আসতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। এ দিন একই চিত্র দেখা গিয়েছে বৌবাজারে। সেখানেও বাসিন্দারা ব্যারিকেড টপকে বড় রাস্তায় চলে এসেছেন।
এ দিন বেনিয়াপুকুর আনাজ বাজারের অধিকাংশটাই পুলিশ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোর পাশের বিজলি গলিতে। বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশের নজরদারিতে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছে বাজার। তার মধ্যেই দেখা গেল, ‘নো মাস্ক, নো সেল’ লেখা পোস্টার নিয়ে বসে আছেন মহম্মদ আসলাম নামে এক তরমুজ বিক্রেতা। তিনি জানান, মাস্ক ছাড়া কেউ এলে তাঁকে তরমুজ বিক্রি করছেন না।
এ দিন ভবানীপুরের একটি গলিতে এক বাসিন্দার করোনা-সংক্রমণের খবর পৌঁছনোর পরেই সেখানকার বাসিন্দারা রাস্তা বন্ধ করে নিজেদের পৃথক করে দেন। পরে পুলিশ গিয়ে সেখানে ব্যারিকেড তৈরি করে।
আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধে পাঁচটি টাস্ক ফোর্স গড়ল পুরসভা
রাজাবাজারে গিয়ে এ দিন দুপুরে দেখা যায়, নারকেলডাঙা মেন রোড ফাঁকা। ব্যারিকেডের ওপারে ইতস্তত ভাবে ঘোরাঘুরি করছেন বাসিন্দারা। তবে বড় রাস্তায় আসছেন না কেউ। একই ছবি দেখা গিয়েছে তিলজলা, এন্টালি, টালিগঞ্জ, ভবানীপুর, বেনিয়াপুকুর, কলুটোলা, রবীন্দ্র সরণি, জোড়াসাঁকোর বিভিন্ন এলাকায়। বন্দর এলাকার খিদিরপুর ও গার্ডেনরিচেও অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে খবর।
পুলিশের একটি অংশও জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকা ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ঢোকা এবং বেরোনোয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করাতেই এ দিন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কলুটোলার বাসিন্দা মহম্মদ ইমরান জানান, ডোমজান লেন, শ্রীনাথবাবু লেন, ব্ল্যাকবার্ন লেনের মতো জনবহুল এলাকা পুলিশি নজরদারির জেরে এ দিন সকাল থেকেই ফাঁকা। বাড়ির বাইরে বেরোলেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ দিন ‘স্পর্শকাতর’ এলাকা-সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় লকডাউন কঠোর ভাবে কার্যকর করতে একশোটিরও বেশি পুলিশ-পিকেট বসানো হয়েছে।
মুচিপাড়া, কালীঘাট এবং ভবানীপুরের পাঁচটি বাজারের ভিড় সরাতে এ দিন ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ফাঁকা জায়গায় আনাজ বাজার সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গার্ডরেল দিয়ে বাজারে ঢোকার রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। একসঙ্গে পাঁচ জনের বেশি ক্রেতাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বাজারে। আবার যদুবাবুর বাজারে বিক্রেতাদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের এক দিন অন্তর বসতে বলেছে পুলিশ।
লালবাজার জানিয়েছে, শহরের ৫৬টি বাজারের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে এক জন এসি-র নেতৃত্বে ১৮টি নজরদারি দল তৈরি করা হয়েছে। যারা সকাল থেকে বিভিন্ন বাজারে নজরদারি চালিয়েছে। এ দিন লালবাজারের কর্তারাও রাস্তায় বেরিয়ে পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন।
আরও পড়ুন: অনুমতি মেলেনি রাজ্যে ঢোকার, আটকে দম্পতি
শনিবার রাতে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সব থানার অফিসারদের বেশ কিছু নির্দেশ পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, শহর জুড়ে লকডাউন আরও কড়া করতে হবে। বিশেষ করে সরু গলিগুলিতে পুলিশি টহলদারি বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। বাজারে ভিড় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার উপরে নজর দিতে বলেছেন পুলিশ কমিশনার। শহরবাসীরা যাতে জমায়েত না-করেন বা বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে না-বেরোন, তা-ও কড়া নজরে রাখার নির্দেশ গিয়েছে সব থানার অফিসারদের কাছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy