নিউ মার্কেট এলাকায় মদের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন।ছবি: সুমন বল্লভ।
বার্তাটি রটে গিয়েছিল দু’তিন দিন আগেই। সোমবার লকডাউনের বিয়াল্লিশতম দিনে রাজ্যের অন্য জায়গার মতো কলকাতা শহরেও খুলতে চলেছে মদের দোকান।
তাই এ দিন সকাল হতে না হতেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় মদের দোকানের সামনে ভিড় জমে যায় ‘তৃষ্ণার্ত’ নাগরিকদের। করোনার ছোঁয়াচের আশঙ্কা ভুলে যাওয়া সেই ভিড়ে বেমালুম হারিয়ে যায় সামাজিক ব্যবধানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বন্ধ মদের দোকানের সামনে জড়ো হওয়া কয়েকশো মানুষের লাইনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে লাঠি উঁচিয়ে ছুটতে হয় পুলিশকে। যে ছবি দেখে করোনা সংক্রমণের প্রমাদ গুনছেন অনেকেই।
প্রশাসন জানাচ্ছে, দুপুরের পরে মদের দোকান খোলার কথা থাকলেও বহু সুরাপ্রেমী ভেবেছিলেন দোকান সকালেই খুলবে। নিউ মার্কেটের মতো হাতে গোনা কয়েকটি এলাকায় সকালে মদের দোকান খুলেও বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য সেই সব জায়গায় দুপুরের পরেই দোকান খোলে। কিন্তু সকালে পুলিশের তাড়া খেয়ে ছড়িয়ে যাওয়া মানুষের ভিড় দুপুরের পরে নতুন করে জমতে বিশেষ সময় নেয়নি। দোকানের কাউন্টারে আগে পৌঁছনো নিয়েও হুড়োহুড়ি হয়েছে কোথাও কোথাও। ওই সব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশকে দেখা যায় ক্রেতাদের কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে। দোকানে দোকানে ঘুরে নজরদারি চালাতে দেখা যায় আবগারি দফতরের আধিকারিকদের। এ দিনই কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা ২৫৮ থেকে বাড়িয়ে ৩১৮ করেছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: প্রয়োজন ছাড়া বাইরে নয়, আর্জি মুসলিম ধর্মগুরুদের
গত ২৩ মার্চ শেষ বার মদের দোকান খুলেছিল। সে দিন মদ কিনতে দোকানগুলিতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। এ দিন ততটা বিশৃঙ্খলা না হলেও দোকানে দোকানে ক্রেতাদের লম্বা লাইন আর গিজগিজ করা ভিড় ছিল সর্বত্রই। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে এক তরুণকে দেখা গেল ভিড় এড়াতে তাঁর বন্ধুকে পরামর্শ দিলেন ওয়াটারলু স্ট্রিটের একটি দোকানে যেতে। জবাবে দ্বিতীয় তরুণ তাঁর বন্ধুকে বললেন, ‘‘ওই গলির দোকানে আমাদের পাড়ার দু’জন বয়স্ক লোক লাইনে দাঁড়িয়ে।’’ তাতে প্রথম তরুণের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মাস্ক পরা রয়েছে। চিনতে পারবে না।’’
আবগারি দফতরের নিয়ম, জনপ্রতি সর্বাধিক দু’টি বোতলই বিক্রি করা যাবে। মদ কিনে দোকান থেকে বেরোনোর সময়ে ক্রেতাদের মুখে দেখা গিয়েছে যুদ্ধজয়ের হাসি। দু’ হাতে দু’টি দামি স্কচের বোতল নিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি মদের দোকান থেকে বেরোচ্ছিলেন এক ব্যক্তি।
তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, লকডাউনের পরিস্থিতিতে কত মানুষের হাতে খাবার কেনার পয়সাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে এত টাকা দিয়ে মদ কেনা কি অতিরিক্ত বিলাসিতা নয়? উত্তর না দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন তিনি। তা দেখে রাস্তার ধারের এক বন্ধ চায়ের দোকানের কর্মীর মন্তব্য, ‘‘উনি কী ভাবছেন জানেন? ভাবছেন, খাবার জুটুক বা না-জুটুক, আগে তো মদ কিনে রাখি!’’
রাজ্য আবগারি দফতর সূত্রের খবর, শহরের সব এলাকায় দোকান খোলা যাবে না। রেড জ়োনে দোকান খোলা গেলেও বাজারের ভিতরে দোকান খোলা যাবে না। শপিং মলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতেও মদ বিক্রি বন্ধ থাকবে। কন্টেনমেন্ট এলাকায় কোথাওই খুলবে না মদের দোকান।
এক পুলিশকর্তা জানান, সকালে কালীঘাট থানায় খবর আসে হাজরা রোডে কালীঘাট দমকল কেন্দ্রের পাশের মদের দোকানের সামনের ফুটপাতে লম্বা লাইন। দ্রুত সেখানে পৌঁছে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে সেই ভিড় হাল্কা করে দেয়। এমন ছবি এ দিন দেখা গিয়েছে শহরের অনেক জায়গাতেই। ভিড় হটাতে চাঁদনি মেট্রো স্টেশনের পাশেই একটি মদের দোকানের সামনে বিকেলে লাঠি চালায় পুলিশ।
আবার দেখা গিয়েছে এমনও ছবি, যেখানে সকালে ত্রাণ নেওয়া মানুষ বিকেলে মদের দোকানের সামনে লাইন দিয়েছেন। মুখচেনা সেই ব্যক্তিকে পুলিশ চেপে ধরলে তাঁর উত্তর, ‘‘দুটো বোতল অন্যের জন্য কিনতে এসেছি। এ জন্য ১০০ টাকা পাব।’’
আরও পড়ুন:করোনা যুদ্ধে ৪০টি ওয়ার্ডে ভলান্টিয়ার
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy