Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Corornavirus

গান-পানের আসর বন্ধে চরম দুর্দশায় শিল্পীরা

কয়েকটি কাফে পারস্পরিক দূরত্ব রেখে লাইভ মিউজ়িক শুরু করলেও বাদ সেধেছে পুলিশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৩:২৮
Share: Save:

অফিসপাড়ার গলির আলো-আঁধারিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটে দ্রুত বার কয়েক টান দিয়েই পাশের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন চড়া মেক-আপ করা এক মহিলা। কয়েকটি করে গানের ফাঁকে সংক্ষিপ্ত ‘ব্রেক’।

ভিতর থেকে সুরের মূর্ছনা ভেসে আসছে। ঘড়ির কাঁটা ইশারা করছে মধ্যরাতের দিকে। রেস্তরাঁর শেষ বেলার অতিথি কিংবা গানের ব্যান্ডের সদস্যদের নিয়ে যেতে বাইরে অপেক্ষায় কয়েকটি ট্যাক্সি। অফিসপাড়ায় সপ্তাহান্তে গান আর পানের নামী-অনামী বিভিন্ন ঠেকের বাইরে এটাই ছিল সারা বছরের চেনা দৃশ্য। অন্তত তিন মাস আগে পর্যন্ত। এখন যা গত জন্মের স্মৃতি বলে মনে হতে পারে। লকডাউনের গিঁট আলগা হয়ে আস্তে আস্তে রেস্তরাঁ খুললেও সুরা পরিবেশনের অনুমতি এখনও মেলেনি। তাই ফি-সন্ধ্যা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন পানশালা বা লাউঞ্জ বার মাতিয়ে রাখা শহরের ‘আশা-আরতি-কিশোর-রফি’রাও এখন ব্রাত্য। করোনা অতিমারির জেরে কাজ হারিয়ে অভাবনীয় দুর্গতিতে দিন কাটছে এই মানুষগুলোর।

কয়েকটি কাফে পারস্পরিক দূরত্ব রেখে লাইভ মিউজ়িক শুরু করলেও বাদ সেধেছে পুলিশ। পানশালার শিল্পীরা জীবনযুদ্ধে লড়ছেন পুরনো সঞ্চয় হাতড়ে। কারও ভরসা স্ত্রী বা স্বামীর চাকরি। পার্ক স্ট্রিটের সাবেক পানশালায় ২২ বছর ধরে সদলবল গানবাজনা করছেন রাজা ঘোষাল। তিনি বলছেন, “আমাদের আট জনের দলে চার জন গাইতাম, চার জন বাজাতাম। প্রতিদিন এক-এক জনের এক-দেড় হাজার টাকা রোজগার হত। উপরি ছিল বখশিস। সেই জীবনটা কয়েক দিনের মধ্যেই তছনছ হয়ে গেল।”

পানশালার বাইরে কোনও শোয়ের সম্ভাবনাও শূন্য। বিক্ষিপ্ত উদ্যোগে নামী শিল্পীরা কেউ কেউ অখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদে ডিজিটাল মঞ্চে কিছু কাজ করছেন। তাতে পানশালার গানের দলগুলির কথাও ভাবা হয়েছে। কিন্তু তা স্থায়ী সমাধান বলে কেউই ভাবতে পারছেন না।

একটি ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী কৌস্তুভ বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ বছর ধরে গান গাইছেন। তাঁর প্রশ্ন, “সব কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে, শুটিংও শুরু হয়ে গেল। কিন্তু আমাদের মতো শিল্পীরা কবে কাজের সুযোগ পাবেন?”

তুলনায় খানিকটা স্বস্তিতে কোনও কোনও ব্যান্ডের তরুণ শিল্পীরা। তাঁরা কেউ হয়তো কলেজপড়ুয়া বা অন্য কোনও পেশায় রয়েছেন। ফলে, একেবারে অন্ধকারে ডুবে নয় তাঁদের ভবিষ্যৎ। ‘‘সান্ধ্য পানশালাগুলি চেনা ছন্দে ফিরুক, আমরাও মরিয়া অপেক্ষায়,’’ বললেন এমনই একটি দলের কোঅর্ডিনেটর কৌশেয় রায়।

সব থেকে বেশি সমস্যায় ভিন্ রাজ্য থেকে কলকাতায় এসে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকা অনামী গায়ক-গায়িকারা। নিউ মার্কেটের একটি পানশালার প্রাণ হয়ে উঠেছিলেন পঞ্জাবের মেয়ে সুমন। সেখানে পাঁচ জনের পরিবার, মেধাবী ছাত্রী বোনের পড়াশোনার খরচ— কাঁধে নানা দায়িত্ব। এখানে গোটা লকডাউন বসে বসে ফ্ল্যাটের ভাড়া গুনে শেষে পঞ্জাবে ফিরে গিয়েছেন সুমন।

ফোনে বললেন, “কোথাও শান্তি পাচ্ছি না। আবার কবে কাজ শুরু হবে, বলতে পারেন?”

শুরু হয়তো হবে, আরও কয়েক মাসে। কিন্তু সব কিছু আগের মতো হবে কি? কখনও? প্রশ্নগুলো গজগজ করলেও উত্তর ধোঁয়াশায় ঢাকা।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Coronavirus Lockdown Bar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy