পাশে: খাবারের প্রতীক্ষায় কলেজ স্ট্রিট সংলগ্ন ফুটপাতের বাসিন্দারা। লকডাউনের প্রায় শুরু থেকেই এর আয়োজন করছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
জনঘনত্বে আকাশ-পাতাল তফাত। তবুও নিউজ়িল্যান্ডের থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে কলকাতার। এমনটাই মনে করছেন গবেষক-বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ। কোভিড নিয়ন্ত্রণে একাধিক বার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা অর্জন করা নিউজ়িল্যান্ড শুরু থেকেই সংক্রমণকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। পাশাপাশি লকডাউনে সংক্রমণের সঙ্গে লড়ার জন্য পরিকল্পনাও তৈরি হয়েছে। হু হু করে সংক্রমণ ছড়ানো কলকাতার জন্য তা যথেষ্ট শিক্ষণীয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
নিউজ়িল্যান্ড ও কলকাতার জনসংখ্যা প্রায় এক হলেও জনঘনত্বের তফাত বিস্তর। যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে নিউজ়িল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ১৮, সেখানে কলকাতার প্রায় ২৪ হাজার! বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই বিপুল জনসংখ্যার কারণেই আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল রাজ্য সরকারের। কম জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। কিন্তু জনঘনত্ব বেশির পাশাপাশি যদি ঢিলেঢালা মনোভাব থাকে, তা হলে তা পরিস্থিতি ঘোরালো করে তোলে। যেমনটা হয়েছে কলকাতার ক্ষেত্রে। ফলে এই প্রশ্নটাই আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, এত কম জনঘনত্ব নিয়ে নিয়ম পালনে যেখানে নিউজ়িল্যান্ড ফাঁক রাখেনি, সেখানে বিশ্বের অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ শহর হয়েও কলকাতা কী ভাবে এত হাল্কা ভাবে সবটা নিল!
নিউজ়িল্যান্ড কী ভাবে কোভিড নিয়ন্ত্রণ করল?
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের করোনা টিকা অক্টোবরেই? সেই চেষ্টাই চলছে, বলছেন বিজ্ঞানীরা
সেখানকার গবেষক-বিজ্ঞানীদের মতে, প্রথম থেকেই সংক্রমণকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে সুপরিকল্পিত লকডাউন। নিউজ়িল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজ়ি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মাতলুব হোসেন জানাচ্ছেন, সম্পূর্ণ লকডাউন পর্বে সংক্রমণের হার কমানোর পাশাপাশি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এমন কিছু কাজ করা হয়েছে, যার ফলে গত দু’মাসে নিউজ়িল্যান্ডের সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৪৯ জন! ১৫ মে-তে যেখানে দেশে সংক্রমিত রোগী ছিল ১১৪৮ জন, সেখানে ১৫ জুলাই অর্থাৎ বুধবার সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৯৭ জনে।
কী কাজ? মাতলুবের কথায়, ‘‘সম্পূর্ণ লকডাউন পর্বে সংক্রমিত রোগীর কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, পরীক্ষা ও ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামো তৈরি, এই তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যত ক্ষণ না এপিডেমিক রেখচিত্র সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছনোর পরে তা আবার নীচে এসেছে, তত ক্ষণ লকডাউন চলেছে।’’ সেই দেশের অন্য এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘আমাদের দেশে জনসংখ্যা কম হওয়ায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই সহজ। কিন্তু যেটা উল্লেখযোগ্য তা হল, সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছিলেন সরকারি নির্দেশ না মানলে আখেরে সবারই বিপদ। তাই শুধু সরকারই নয়, সাধারণ মানুষও সব নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।’’
আর সেখানেই কলকাতায় গলদ থেকে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। অপরিকল্পিত লকডাউনের সঙ্গে যোগ হয়েছে সাধারণ মানুষের বড় অংশের নিয়ম অগ্রাহ্য করার প্রবণতা। ‘ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি জেনারেল সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ জানাচ্ছেন, এ দেশে লকডাউনের প্রথম পর্বের উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের সঙ্গে মানুষের ‘কন্ট্যাক্ট’ বন্ধ করে গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকানো। তারই সঙ্গে গোষ্ঠী সংক্রমণ হলে হাসপাতালে যে পরিমাণ শয্যা, ভেন্টিলেটর দরকার, সেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা। সেখানে প্রথম ধাপ ঠিকঠাক করা হলেও পরবর্তী ধাপে খামতি থেকে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এখন আর হাতে কিছু নেই তাই লকডাউন করতে হচ্ছে। কিন্তু কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, পরীক্ষা ও চিকিৎসা যদি ঠিক ভাবে না করা যায়, তা হলে বার বার লকডাউন করেও কিছু হবে বলে মনে হয় না।’’
আরও পড়ুন: ‘একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে, আমরা কি চাকর!’, রাজ্যপালকে পাল্টা নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর
‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজ়িন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর এপিডিমিয়োলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান শম্পা মিত্রের কথায়, ‘‘প্রথমত, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোভিড রোগীরা যাতে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন, তাঁদের যাতে উপযুক্ত চিকিৎসা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে শুধু লকডাউন করে কিছুই হবে না।’’ কলকাতার
একটি অন্যতম প্রধান মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘নিউজ়িল্যান্ড ও কলকাতার জনঘনত্বে বিপুল পার্থক্য রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সংক্রমণ রোখার নিয়মগুলো তো এক। শিখুক কলকাতা।’’
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy