Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

আয়ের পথ বন্ধ, অর্থসঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে হাওড়া পুরসভা

২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিনই পুরসভা পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় প্রশাসকের হাতে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে হাওড়া পুরসভার আয় প্রায় শূন্য।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে হাওড়া পুরসভার আয় প্রায় শূন্য।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৩:২০
Share: Save:

শেষ দু’বছরে রাজস্ব আদায় তলানিতে পৌঁছেছিল। রাজ্য সরকারের থেকে প্রাপ্য টাকার কানাকড়িও মেলেনি বলে অভিযোগ। এর উপরে গত তিন মাস ধরে কোভিড-ঝড়ে আয়ের পথ কার্যত তছনছ হয়ে যাওয়ায় সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাওড়া পুরসভায়। অভিযোগ, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কয়েক হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মীর বেতন দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। এমনকি সরকারি নির্দেশ আসার পরেও প্রাক্তন কর্মীদের পেনশন পর্যন্ত দেওয়া যাচ্ছে না।

২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিনই পুরসভা পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় প্রশাসকের হাতে। তার পর থেকে প্রায় দু’বছর হতে চলল, হাওড়া পুরসভায় নেই নির্বাচিত পরিচালন বোর্ড। পুর কমিশনারের হাতে প্রশাসকের দায়িত্ব তুলে দিয়ে চালানো হচ্ছে ৬৬টি ওয়ার্ডের এই পুরসভা।

পুরকর্মীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, নির্বাচিত পরিচালন বোর্ড না-থাকায় বিভিন্ন দফতরের আয় তলানিতে পৌঁছেছে। অথচ ব্যয় বিপুল। যার ফলে ন্যূনতম পরিষেবা যেমন রাস্তাঘাট সংস্কার, পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি কোনও কাজই হয়নি। আরও অভিযোগ, রাজস্ব আদায়ে পুরসভার কিছু দফতরের কয়েক জন পদস্থ কর্তার অনীহার কারণে এই অর্থসঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে।

পুরসভার অর্থ বিভাগের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘প্রতি বছর গড়ে যেখানে খরচ হত প্রায় ২০০ কোটি টাকা, সেখানে আয় হত মেরেকেটে ১৭০ কোটি। এমনিতেই প্রতি বছর কোষাগারে ঘাটতি ছিল প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এর উপরে কোভিডের জন্য গত তিন মাস কোনও আয় না-হওয়ায় ঘাটতির অঙ্ক ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের খরচের তালিকার সামনের সারিতে রয়েছে স্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন, ১০০ দিনের কাজের মজুরির টাকা, দৈনিক অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বজায় রাখার খরচ ইত্যাদি। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, ২৪০০ চুক্তিভিক্তিক কর্মী-সহ নিকাশি দফতরের এক হাজার কর্মী এবং দৈনিক মজুরির আরও এক হাজার কর্মী (সম্প্রতি নিয়োগ হওয়া ৪১৯ জন অস্থায়ী কর্মীও দৈনিক মজুরির তালিকায় রয়েছেন) মিলিয়ে মোট প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মীর বেতন দিতে বছরে খরচ হয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মাসে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।

পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু বেতন বাবদ এত টাকা দিতেই পুর কোষাগার প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় বন্ধ রাখতে হয়েছে বর্ষার আগে রাস্তা মেরামতি বা নিকাশির সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গত মাসে রাজ্য সরকার আট কোটি টাকা দেওয়ায় বেতন হয়েছে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের। পাশাপাশি, পরিবর্তিত মূল্যে প্রাক্তন পুরকর্মীদের পেনশন দিতে গত ১৩ মার্চ নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। কিন্তু তিন মাস পরেও টাকা না-আসায় ওই কাজ হয়নি। এমনকি যে ৪১৯ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মীর বেতনের দায়িত্ব রাজ্য অর্থ দফতর এবং পুর দফতর নিয়েছিল, সেটাও আপাতত মেটাতে হচ্ছে পুর ভাঁড়ার থেকেই। সব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে পুরসভা।

পুরসভার চরম অর্থসঙ্কটের কথা মেনে নিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিকই, পুরসভার ভাঁড়ারে টান পড়েছে। যে দফতরগুলি থেকে আয় হত, সঙ্কট মেটাতে সেগুলিকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে। চলতি মাসে কিছুটা হলেও আয় বেড়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy